গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
গ্রামের মধ্যে প্রকাশ্যে মহিলাকে নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ জনকে ধরেছে নানুর থানার পুলিশ। গ্রামেরই যুবককে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে নিগ্রহের শিকার মহিলাকেও। তবে, পিটিয়ে গ্রাম ঘোরানোর ঘটনায় অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে গেলেও নির্যাতিতার জেল হেফাজত হওয়ায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ অবশ্য বলেন, ‘‘উপযুক্ত ধারা দিয়েই মারধরে অভিযুক্তদের আদালতে পেশ করা হয়েছিল। কী ভাবে ওঁরা জামিন পেলেন, তা আদালতের কাগজপত্র না দেখে বলা সম্ভব নয়।’’
বৃহস্পতিবার বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হন নানুরের খুজুটিপাড়া গ্রামের এক যুবক। মৃতের সঙ্গে নির্যাতিতার বিবাহবহিভূর্ত সম্পর্ক ছিল এবং তার জেরেই ওই যুবক আত্মহত্যা করেছেন, এই অভিযোগ তুলে গ্রামের মহিলাদের একাংশ ওই মহিলার উপরে চড়াও হন। তাঁকে বাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে এসে বেধড়ক মারধর করে গ্রামে ঘোরানো হয় বলে অভিযোগ।
খুজুটিপাড়াতেই নির্যাতিতার বাপের বাড়ি। এক রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। খুজুটিপাড়ায় আলাদা বাড়ি করে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। দম্পতির দুই ছেলে। এক জন নবম শ্রেণিতে পড়ে। অন্য জন পঞ্চম শ্রেণিতে। শুক্রবার ঘটনার সময় তাঁর স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এ বার আমাদের নিষ্কৃতি দিন।’’
এ দিন গ্রামে ছিল থমথমে পরিবেশ। কেউ মুখ খুলতে চাননি। নির্যাতিতার বাড়িতে তালা ঝুলছে। তাঁর মা বলেন, ‘‘আমরা একটু দূরে থাকি। ঝামেলার খবর পেয়ে স্বামী আর আমি ছুটে এসে দেখতে পাই, এক দল মহিলা নাতিদের সামনেই মেয়েকে মারতে মারতে বার করে নিয়ে যাচ্ছে। নাতিরা কান্নাকাটি করছে। আমরা জোড় হাত করেও মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওরা মেয়েকে বিবস্ত্র করে গ্রামে ঘোরাতে থাকে। আমি আমার কাপড় দিয়ে ওর আব্রু রক্ষা করতে গেলে আমার কাপড়ও খুলে নেওয়ার হুমকি দেয়!’’ তাঁর আরও অভিযোগ, তাঁর স্বামী মেয়েকে জড়িয়ে ধরে তাঁর আব্রু রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু মারমুখী মহিলারা তাঁকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। মায়ের কথায়, ‘‘গ্রামের কেউ মেয়ের সম্ভ্রম রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। কেউ কেউ মোবাইলে ভিডিয়ো তুলতেও ব্যস্ত ছিল। শেষে একটি ঘরে ঢুকিয়ে মেয়ের লজ্জা নিবারণ করি। পরে পুলিশ মেয়েকে উদ্ধার করে।’’
মৃত যুবকের স্ত্রী এ দিনও দাবি করেন, ‘‘ওই মহিলার জন্যই স্বামী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। তাই উনি গণরোষের শিকার হয়েছেন। তবে, কেউ ওঁকে বিবস্ত্র করেনি। টানাটানির সময় কাপড় খুলে গিয়েছে।’’
দু’টি ঘটনায় অভিযুক্তদের এ দিন বোলপুরের এসিজেএম অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী প্রশান্ত নায়ক জানান, যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত মহিলার ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে। মারধরে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৪৮, ৩২৩, ৫০৬, ৫০৪, ৩৫৪ ধারা দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁদের জামিন মঞ্জুর হয়েছে। পুলিশ জানায়, মারধরের ঘটনায় আরও ৫ জনকে খোঁজা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy