Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
সাতসকালে দুর্ঘটনা মুর্শিদাবাদে

সেতু ভেঙে বাস জলে, মৃত ৩৬, উদ্ধার ঘিরে বিক্ষোভ, আগুন মুর্শিদাবাদে

তীব্র গতিতে পাশ কাটাতে গিয়ে মুর্শিদাবাদের বালির ঘাট সেতু থেকে ভাণ্ডারদহ বিলে পড়ে গেল বাস। মৃত অন্তত ৩৬। হাসপাতালে ভর্তি ১৩।

সলিল-সমাধি: জলে বাস। চলছে উদ্ধারকাজ। সোমবার দৌলতাবাদের বালির ঘাটে। ছবি: শুভাশিস সৈয়দ।

সলিল-সমাধি: জলে বাস। চলছে উদ্ধারকাজ। সোমবার দৌলতাবাদের বালির ঘাটে। ছবি: শুভাশিস সৈয়দ।

শুভাশিস সৈয়দ ও অনল আবেদিন
দৌলতাবাদ শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:২০
Share: Save:

যাত্রীদের ট্রেন ধরার তাড়া ছিল। চালকের কানে মোবাইল ছিল। সামনে একটা গাড়ি ছিল।

তীব্র গতিতে পাশ কাটাতে গিয়ে মুর্শিদাবাদের বালির ঘাট সেতু থেকে ভাণ্ডারদহ বিলে পড়ে গেল বাস। মৃত অন্তত ৩৬। হাসপাতালে ভর্তি ১৩।

সোমবার সকাল ৭টা নাগাদ বহরমপুরের কাছেই দৌলতাবাদে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নদিয়ার করিমপুর থেকে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর হয়ে মালদহে যাওয়ার কথা ছিল বাসটির।

উদ্ধারকাজ শুরু হতে দেরি হওয়ায় ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ইটবৃষ্টিতে আহত হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অনীশ সরকার এবং দুই সংবাদকর্মী। ভাঙচুর করা হয় দমকলের ইঞ্জিন। টোলগেটে লুঠপাট হয়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। যদিও জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার তা অস্বীকার করেছেন।

শেষে বেলা ১১টা নাগাদ ক্রেন এসে পৌঁছয়। ঢিমেতালে হলেও শুরু হয় উদ্ধারের কাজ। নদিয়ার কৃষ্ণনগর থেকে ডুবুরিরা এসে জলে নামেন। পরে হরিণঘাটা থেকে নৌকা এবং নানা সরঞ্জাম নিয়ে পৌঁছন ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের ৪৮ জন সদস্য। তার পরেই প্রকৃত অর্থে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। চারটি ক্রেন দিয়ে টেনে বাসের সামনের দিকটা জল থেকে খানিক তোলার পরে দেহ বের করা হতে থাকে। রাত পৌনে ৮টায় জল থেকে তোলা হয় ফাঁকা বাসটি।

দুপুরেই হেলিকপ্টারে বহরমপুরে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চলে যান ঘটনাস্থলে। সঙ্গে ছিলেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ও পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তিনি গেলে ধাক্কাধাক্কিতে আরও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় সেতুতে উঠেও ফিরে যান মমতা। তবে তার আগে মৃতদের জন্য পাঁচ লক্ষ ও আহতদের জন্য এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন। তড়িঘড়ি দিল্লি থেকে ফিরে রাতেই সেতুতে পৌঁছে যান বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীও। বাসের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন।

আরও পড়ুন: কেন তুলতে গেলাম ঘুম থেকে! অনর্গল বলে চলেছেন সাজেদা

উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ৪০ আসনের বাসটি গত বছরই বহরমপুর পুরসভাকে দিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। পুরসভা সেটি লিজে চালাতে দেয়। ডোমকলের বক্সীপুরের বাসিন্দা দুই ভাই, সেন্টু আর মিন্টু বিশ্বাস সেটি চালাতেন। সেন্টু চালক, মিন্টু কন্ডাক্টর। বহরমপুর থেকে কলকাতা যাওয়ার ট্রেন ছাড়ে সকাল ৭টা ৫৫-য়। সেটি ধরতে অনেকেই এই বাসে আসতেন। ফলে, চালকের তাড়া থাকত সময়ে পৌঁছনোর।

চালকের পিছনে বসা এক যাত্রীর দাবি, সেন্টু ডান হাতে মোবাইল ধরে কথা বলতে-বলতে বাঁ হাতে স্টিয়ারিং ঘোরাচ্ছিলেন। সামনে একটি গাড়ি ছিল, সেটি বাস না লরি তা খেয়াল নেই। সেটিকে পাশ কাটিয়ে বেরোতে গিয়েই নিয়ন্ত্রণ হারান চালক। বাস সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে ডান দিকের রেলিঙে। পরপর তিনটি রেলিং ভেঙে সোজা জলে গিয়ে পড়ে বাস।

বিলে তখন দু’চারটে মাঝ-ধরা নৌকা ছিল। মাঝিরা নৌকা নিয়ে তড়িঘড়ি বাসের কাছে চলে যান। যাঁরা কোনও মতে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন, তাঁদের তুলে নেন। ১০ জনকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও তিন জনকে ডোমকল মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। ৩৬ জন মৃতের মধ্যে ২৪ জন পুরুষ, ১০ জন মহিলা এবং দু’টি শিশু। রাত পর্যন্ত ৩৪ জনের পরিচয় জানা গিয়েছে। ১২ জন নদিয়ার, দু’জন বীরভূমের, বাকিরা মুর্শিদাবাদের।

• সকাল ৭টা: সেতু থেকে পড়ল বাস

• বেলা ৯টা: বাধল গণ্ডগোল, পুড়ল পুলিশের গাড়ি

• বেলা ১১টা: এসে পৌঁছল ক্রেন

• বেলা ১টা: কৃষ্ণনগর থেকে ডুবুরি এল, শুরু বাস তোলার চেষ্টা

• দুপুর ৩টে: হরিণঘাটা থেকে এল ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স

• দুপুর সাড়ে ৩টে: ঘটনাস্থল ঘুরে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী

• বিকেল ৪টে: উঠে আসে বাসের সামনের দিকটা, কিন্তু ফের রশি ছেঁড়ে

• বিকেল ৫টা: বাস থেকে মৃতদেহ বের করা শুরু

• সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা: বাস থেকে সব দেহ বেরিয়ে এল

• রাত পৌনে ৮টা: জল থেকে সেতুতে তোলা হল ফাঁকা বাস

(সহ প্রতিবেদন: সামসুদ্দিন বিশ্বাস)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad Bus Accident Rescue Operation Video
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE