Advertisement
০২ মে ২০২৪

পাহাড়ে আক্রান্ত দিলীপ, মার খেলেন সঙ্গীরাও

দিল্লি থেকে দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার দাবি, ‘‘গোর্খারা কখনওই নিরস্ত্র ব্যক্তিকে আঘাত করে না। আজ যারা এই কাজ করেছে, তারা আসলে তৃণমূলের লোক।’’

দার্জিলিঙে দিলীপ ঘোষকে ঘিরে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

দার্জিলিঙে দিলীপ ঘোষকে ঘিরে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

প্রতিভা গিরি
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩১
Share: Save:

আপাত-শান্ত দার্জিলিঙে গিয়ে আক্রান্ত হলেন দিলীপ ঘোষ। বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে প্রথমে কালো পতাকা দেখানো হয়। পরে তাঁর সভায় ঢুকে বেশ কয়েক জন স্থানীয় যুবক হামলা চালায় বলে অভিযোগ। থানায় যাওয়ার পথে দিলীপ ও তাঁর সঙ্গীদের ঘিরে ধরে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। বিজেপি সভাপতির দুই সঙ্গীকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। তার পরেও পাহাড় ছাড়েননি দিলীপ। রাতে তিনি দার্জিলিঙেই থেকে যান।

এই ঘটনার খবর পেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে নবান্নে ফোন করা হয়। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ নিজে দিলীপকে ফোন করে খোঁজ নেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। দিলীপের অভিযোগ, ‘‘হামলাকারীদের মুখে বিনয় তামাঙ্গ জিন্দাবাদ স্লোগান ছিল। তাঁর লোকই নিশ্চয়ই করেছে। কলকাতা থেকেও মদত দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।’’ দিল্লি থেকে দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার দাবি, ‘‘গোর্খারা কখনওই নিরস্ত্র ব্যক্তিকে আঘাত করে না। আজ যারা এই কাজ করেছে, তারা আসলে তৃণমূলের লোক।’’

আরও পড়ুন: দিলীপের উপর হামলার নিন্দা বিরোধীদের

সন্ধ্যায় রাজ্য বিজেপির তরফ থেকে বিবৃতি দিয়ে দলের রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু দাবি করেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এই হামলা। এই দুষ্কৃতীরা দিলীপ ঘোষ ও অন্য বিজেপি নেতাদের খুন করতে চেয়েছিল।’’ তিনি আরও জানান, এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে আজ, শুক্রবার রাজ্য জুড়ে অবরোধ-বিক্ষোভ হবে।

শুনে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষকে নিয়ে ব্লক সভাপতিরাও ভাবেন না, মুখ্যমন্ত্রী তো দূরের কথা। উনি জিরো থেকে হিরো হতে চাইছেন।’’

কী হয়েছিল এ দিন? দার্জিলিঙের পথে বাতাসিয়া লুপের কাছে প্রথম দিলীপকে কালো পতাকা দেখান বিক্ষোভকারীরা। এর পরে দার্জিলিং স্টেশন থেকে চকবাজার পর্যন্ত মিছিল করেন দিলীপবাবু। চকবাজারে সভাও হয়। তখনও দার্জিলিঙের বিভিন্ন এলাকায় কালো পতাকা হাতে একদল যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বিকেল তিনটে নাগাদ গোর্খা দুঃখ নিবারণী সমিতির হলে অনুষ্ঠিত ‘বিজয়া সম্মিলনী’র সভায় পৌঁছন দিলীপ। সভাঘরে ঢুকতেই ‘গোর্খাল্যান্ড জিন্দাবাদ’, ‘বিনয় তামাঙ্গ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভকারীরা মারমুখী হয়ে ওঠে বলে বিজেপির দাবি।

দিলীপবাবুর অভিযোগ, প্রথমে সভায় ঢুকে হামলা চালানো হয়। মাইক কেড়ে নেওয়া হয় তাঁর হাত থেকে। অভিযোগ, তার পরে থানায় যাওয়ার সময়ে দিলীপবাবুকে ধাক্কা মারা হয়, তাঁর আপ্ত সহায়ক দেব সাহা ও দার্জিলিঙের যুব নেতা রাকেশ পোখরেলকে মারধর করা হয়। রক্তাক্ত এই দুই নেতাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য। তার পরে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন দিলীপ।

এই ঘটনায় বিনয় তামাঙ্গ, অনীত থাপার দিকেই আঙুল তুলেছেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। তিনি এক অডিও-বার্তায় বলেন, ‘‘বিনয়-অনীত ঠিক কাজ করেনি। আগামী দিনে দিলীপদের যাতে হেনস্থা হতে না হয়, তা আমরা দেখব।’’ জবাবে বিনয় বলেন, ‘‘যিনি এখানে হিংসার রাজনীতি করতেন, তাঁকে পাহাড় আর চায় না। তাঁকে রক্ষা করতে গিয়েই এ দিন জনরোষের মুখে পড়েছেন দিলীপ।’’

প্রশ্ন উঠেছে, দিলীপকে কি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল? দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী জানান, তাঁদের কাছে দিলীপ নিজের দৈনন্দিন কর্মসূচি জানাননি। ওই ঘটনার পরে দিলীপবাবুকে পাহাড় ছাড়তে হবে বলে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিলেও তিনি পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী রাতে দার্জিলিঙে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। আজ, শুক্রবার তাঁর সিকিম যাওয়ার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE