Advertisement
E-Paper

দায়িত্ব নেওয়ার আগেই শিক্ষকের বাড়িতে বোমা

বাড়তি ছাত্র ভর্তির দাবিতে বিক্ষোভ-ঘেরাওয়ের মুখে ‘টিচার-ইন-চার্জ’-এর দায়িত্ব থেকে সদ্য অব্যহতি পেয়েছেন কলেজের এক শিক্ষক। তাঁর জায়গায় যাঁর দায়িত্ব নেওয়ার কথা, চেয়ারে বসার আগেই সরে দাঁড়ালেন তিনিও। বুধবার রাতে তাঁর বাড়িতে পরপর দু’টি বোমা ছোড়া হয়। জানলার কাচ ভেঙে আহত হয় তাঁর ছেলে। অঙ্কের শিক্ষক রতনেশ মিশ্র স্পষ্ট জানিয়েছেন, দরকারে চাকরি ছেড়ে, শহর ছেড়ে চলে যাবেন, কিন্তু শান্তিপুর কলেজের দায়িত্ব নেবেন না। কেন এই হামলা?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫৮

বাড়তি ছাত্র ভর্তির দাবিতে বিক্ষোভ-ঘেরাওয়ের মুখে ‘টিচার-ইন-চার্জ’-এর দায়িত্ব থেকে সদ্য অব্যহতি পেয়েছেন কলেজের এক শিক্ষক। তাঁর জায়গায় যাঁর দায়িত্ব নেওয়ার কথা, চেয়ারে বসার আগেই সরে দাঁড়ালেন তিনিও।

বুধবার রাতে তাঁর বাড়িতে পরপর দু’টি বোমা ছোড়া হয়। জানলার কাচ ভেঙে আহত হয় তাঁর ছেলে। অঙ্কের শিক্ষক রতনেশ মিশ্র স্পষ্ট জানিয়েছেন, দরকারে চাকরি ছেড়ে, শহর ছেড়ে চলে যাবেন, কিন্তু শান্তিপুর কলেজের দায়িত্ব নেবেন না। কেন এই হামলা?

রতনেশবাবু বলেন, “কলেজে ভর্তি নিয়ে ডামাডোল শুরু হয়েছে। আমি দায়িত্ব নিলে অনৈতিক ভাবে ভর্তি করা সম্ভব হবে না বুঝতে পেরেই বোমা ছুড়ে ভয় দেখাতে চাইছে। শুরু থেকেই চাপ তৈরি করতে চাইছে।” ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এই বোমাবাজির সঙ্গে ছাত্র রাজনীতির যে যোগ রয়েছে, মেনে নিয়েছেন কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক তৃণমূলের পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “দ্বিতীয় কাউন্সেলিংয়ে ভর্তি আটকে আছে। ভর্তি যাতে মেধা তালিকা অনুযায়ী না হয় তার জন্য ভয় দেখাতেই রতনেশবাবুর বাড়িতে বোমা ছোড়া হয়েছে।”

ওই কলেজের ছাত্র সংসদ অবশ্য টিএমসিপি-র দখলে। কলেজ সূত্রে খবর, প্রথম কাউন্সেলিংয়ের পরে অনার্সে প্রায় ১১৫টি আসন খালি আছে। দ্বিতীয় কাউন্সেলিংয়ে এই আসনগুলিতে ভর্তি নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ছাত্র সংসদের চাপানউতোর শুরু হয়। অভিযোগ, ১১৫টি-র জায়গায় ২৫০ জনকে ভর্তি করতে হবে, এবং মেধা তালিকা না মেনে তাদের তৈরি তালিকা অনুসারে ভর্তি করতে হবে, এমনই দাবি তোলে ছাত্র সংসদ। প্রাক্তন টিচার-ইন-চার্জ চয়ন ভট্টাচার্য তাতে রাজি ছিলেন না। লাগাতার চাপের মুখে শারীরিক অসুস্থতার কারণে চয়নবাবু টিচার-ইন-চার্জ পদ থেকে পদত্যাগ করেন বলেই মনে করেন তাঁর সহকর্মীরা। বৃহস্পতিবার রতনেশবাবু টিচার-ইন-চার্জ পদের দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগের রাতে কাশ্যপপাড়ায় তাঁর বাড়িতে বোমা পড়ল।

বিরোধীরা এই ঘটনার জন্য টিএমসিপি-র দিকেই আঙুল তুলছেন। জেলা বিজেপির মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, “শান্তিপুর কলেজে অনৈতিক ভাবে ভর্তি করতে যাতে সমস্যা না হয়, তার জন্য ওই বোমা মেরেছে টিএমসিপি।” পার্থবাবুর অবশ্য দাবি, “তৃণমূলের ভাবমূর্তি খারাপ করতেই এ কাজ করা হয়েছে।” কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক মনোজ সরকারও চক্রান্তের অভিযোগ করেছেন। এ দিন তাঁর নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদ মিছিলও হয়।

আতঙ্কিত রতনেশবাবু জানান, রাত পৌনে বারোটা নাগাদ তাঁর বাড়িতে পরপর দু’টি বোমা পড়ে। জানালার কাচের টুকরো ছিটকে লাগে তাঁর ছেলের গায়ে। তিনি বলেন, “দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বাড়িতে আক্রমণ করল, দায়িত্ব নিয়ে সততার সঙ্গে কাজ করতে গেলে তো আরও বড় বিপদ নেমে আসবে।”

রতনেশবাবুর উপর আক্রমণের ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়। ২০১২ সালে শিক্ষক দিবসের আগের দিন রাতে তাঁর উপর হামলা হয়েছিল। তিনি বলেন, “সে বার কলেজের অ্যাডমিশন কমিটির আহ্বায়ক ছিলাম। অনৈতিক ভাবে ভর্তি করার চাপ আসছিল। তাতে রাজি ছিলাম না বলে আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।” আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে রতনেশবাবুর পরিবার।

এই ঘটনায় কলেজেও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ দিন সকালে ইতিহাসের শিক্ষক রামকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “আমরা আতঙ্কিত। ভাবতেই পারছি না, শিক্ষক দিবসের আগে এভাবে এক অধ্যাপকের বাড়িতে হামলা হতে পারে।” এ দিন কলেজে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতিও ছিল কম। সদ্য পদত্যাগ-করা অধ্যাপক চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, “এ ভাবে চলতে থাকলে কোনও শিক্ষকই আর দায়িত্ব নিতে চাইবেন না।”

shantipur teacher incharge bombing state news online news latest news online latest news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy