কথাগুলো নতুন নয়। নতুন নয় সমস্যাও। পুরনো অথচ প্রয়োজনীয় কথাগুলোই আমরা বারবার ভুলে যাই। তাই সেগুলিই মনে করিয়ে দিতে মঙ্গলবার শহরে একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করে মার্কিন সংস্থার প্রকল্প- টিউবারকিউলোসিস হেল্থ অ্যাকশন লার্নিং ইনিশিয়েটিভ বা থালি। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য, ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারতকে যক্ষ্মামুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা।
থালি-র তরফে প্রাচী শুক্ল মনে করিয়ে দেন, যক্ষ্মা রুখতে সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট হলেও পর্যাপ্ত নয়। তাই যে কোনও সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা— সকলকে তাদের প্রকল্পে স্বাগত জানাচ্ছে থালি। শুধু ওষুধ নয়,
ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া এবং কাউন্সেলিংও এক জন টিবি রোগীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞেরা বলেন, যাদের পুষ্টির অভাব তাদের মধ্যে এই রোগ বেশি হলেও কোনও নির্দিষ্ট শ্রেণি, সামাজিক অবস্থান বা অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর উপরে যক্ষ্মা সংক্রমণ নির্ভর করে না। রোগীকে দূরে না-সরিয়ে রোগটাকে কী করে দূর করা যায় তার ব্যবস্থা করাই উচিত কাজ। আর সে জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট সচেতনতা।
আর সব কিছু উপরে আছে যক্ষ্মা রোগের উৎস এবং এই রোগের ছড়িয়ে পড়া নিয়ে নানা ভুল ধারণা। বিশেষজ্ঞরা জানালেন, দু’তিন সপ্তাহ টানা কাশি, ঘুসঘুসে জ্বর, ওজন কমে যাওয়া— এ সমস্ত লক্ষণ শরীরে দেখা গেলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়াটা জরুরি। আর এই সচেতনতা দিয়েই প্রথম স্তরে টিবি ধরা পড়লে চিকিৎসা হয়ে যায় সহজতর। স্পর্শে ছড়ায় না এই রোগ, ছড়ায় হাঁচি-কাশি-কফের মাধ্যমে। তাই রাস্তাঘাটে বা যানবাহনে কোনও মানুষ রুমাল ছাড়া হাঁচলে সে বদভ্যাস নিয়ে তাঁকে সচেতন করাটাও কর্তব্য— বললেন চিকিৎসকেরা।
হতে হবে সংবেদনশীলও। ‘‘আমাদের বাড়ির গাড়িচালকেরা বা পরিচারকেরা অনেক সময় বহু দিন সর্দি-কাশি-জ্বরে ভোগেন, আমরা প্যারাসিটামল দিয়ে ছেড়ে দিই। কিন্তু আর একটু খেয়াল করে তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠালে হয়তো যক্ষ্মা এড়ানো যেতে পারে।’’— বললেন কলকাতা পুরসভার যক্ষ্মা-কর্তা সৌমিত্র ঘোষ। তবে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রচারেও যে খামতি আছে, তা মেনে নিয়েছেন সৌমিত্রবাবু।
আলোচনায় জানা গেল, যক্ষ্মা রোগে বিশ্বের মধ্যে সব চেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ভারতবর্ষে। প্রতি বছরে এই সংখ্যাটা ৪৮০০, প্রতি ঘণ্টায় ৫৪। সচেতনতা প্রচারে ২০১৫ সালের তুলনায় অনেকটাই রোখা গিয়েছে টিবির প্রকোপ।
আমেরিকান সেন্টারের লিঙ্কন হল-এ, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএইড)-এর এই আলোচনাচক্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র প্রতিনিধি বিপ্রা বসু, ফুসফুস-বিশেষজ্ঞ সুস্মিতা রায়চৌধুরীও
বক্তব্য রাখেন।