Advertisement
০৪ মে ২০২৪

আর্সেনিক রোধে চাই সচেতনতা

এই মুহূর্তে জেলায় প্রায় ১৩০ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। তাঁদের বেশির ভাগই গুণছেন মৃত্যুর প্রহর। এই রোগ নিয়ে কথা বললেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ কপিলদেব দাস শুনলেন জয়ন্ত সেন।এই মুহূর্তে জেলায় প্রায় ১৩০ জন আর্সেনিকে আক্রান্ত বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। তাঁদের বেশির ভাগই গুণছেন মৃত্যুর প্রহর। এই রোগ নিয়ে কথা বললেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ কপিলদেব দাস শুনলেন জয়ন্ত সেন।

দুরবস্থা: এ ভাবে সংগ্রহ হচ্ছে পানীয় জল। ছবি: তথাগত সেন শর্মা

দুরবস্থা: এ ভাবে সংগ্রহ হচ্ছে পানীয় জল। ছবি: তথাগত সেন শর্মা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০১:৩১
Share: Save:

প্রশ্ন: আর্সেনিক আসলে কী?

উত্তর: আর্সেনিক মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক এক ধরনের বিষ। এর কোনও রং, গন্ধ বা স্বাদ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি লিটার জলে ০.০৫ মিলিগ্রামের বেশি আর্সেনিক থাকলে তা মানুষের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। তবে, এখন ০.০১ মিলিগ্রামের বেশি আর্সেনিক জলে থাকলেই ক্ষতি বলে ধরা হচ্ছে। এর ফলে হচ্ছে দূষণজনিত রোগ।

প্র: কেন হচ্ছে এই দূষণজনিত রোগ?

উ: আর্সেনিক রোগটি ‘ম্যানমেড’। মাটির নীচে আর্সেনিক রয়েছে। কিন্তু আমরা যত্রতত্র স্যালো বসিয়ে অতিরিক্ত জল তুলছি। ফলে মাটির নিচে শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। সেই শূণ্যতায় মাটির নীচে থাকা আর্সেনিক দ্রাব্য হয়ে জলে মিশছে। জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারেও বাতাস ও ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের মাত্রা বাড়ছে।

প্র: কীভাবে তা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে?

উ: ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের পরিমাণ যদি বেশি থাকে তা খেলে রোগটি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আর্সেনিক দূষিত জল সেচের কাজে ব্যবহার করলে ধান বা অন্যান্য আনাজ থেকে আর্সেনিক দেহে ঢুকে পড়ে। দূষিত জলের মাধ্যমে গবাদি পশুর দেহ বা দুধেও আর্সেনিক প্রবেশ করে। খাদ্যশৃঙ্খলে আর্সেনিক ঢুকে পড়লে আর্সেনিক কবলিত এলাকার বাইরেও মানুষ এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। ৬ মাস বা তারও বেশি সময় পরে শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যেতে পারে। যেমন, একটি পরিবারে ১০ জন সদস্য রয়েছেন, কিন্তু সবাই যে আক্রান্ত হবেন তা নয়, দেখা গেল এক বা দু’জন বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হলেন। এ ছাড়া কারও যদি খুব পুষ্টির অভাব যদি থাকে, সে ক্ষেত্রেও আর্সেনিক থাকা জলের মাধ্যমে তিনি দ্রুত আক্রান্ত হতে পারেন।

প্র: এই বিষক্রিয়ার লক্ষণ কী কী?

উ: লক্ষণ দেখা যায় সাধারণত চামড়ায়, মুখে ও শরীরের অন্তঃস্থলের বিভিন্ন অঙ্গে। চামড়ায় আক্রান্তের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি মেলানোসিস বা চামড়ার রং পরিবর্তন এবং অপরটি কেরাটোসিস বা হাতে-পায়ের চামড়া মোটা হয়ে যাওয়া। মেলানোসিসের আবার তিনটি ভাগ। এক, পুরো গায়ের রং কালো বা বাদামি হয়ে যাওয়া; দুই, শরীরের কোথাও কোথাও কালো দাগ এবং তৃতীয়, সাদা-কালো দাগ। ছোট ছোট কালো দাগ, হাতে বা মুখে সাবুদানার মত গুটিও অনেক সময় শরীরে দেখা যায়। পরে সেটি বেড়ে মটরদানার মতো হয়ে যায়। এর তিনটি গ্রেড রয়েছে। যখন সেই দানা ছোট থাকে তখন প্রথম গ্রেডে দানাটি ২ মিলিমিটার মতো হয়, দ্বিতীয় গ্রেডে ২.৫ মিলিমিটার এবং তৃতীয় গ্রেডে ৫ মিলিমিটার। এ ছাড়া কখনও বমি বা পেট খারাপও হতে পারে। খাওয়া-দাওয়ায় অরুচি আসে, রক্ত আমাশয় হয়, মুখে দেখা যায় ঘা, জিহ্বার ওপর কালো দাগ। আর্সেনিক থেকে হতে পারে চামড়ায় ক্যানসারও। চামড়ায় তিন ধরনের ক্যানসার হয়। যেমন, বাওয়েন্স ডিজ়িজ়, বেজ়াল সেল কার্সিনোমা ও স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা। এ ছাড়া আর্সেনিকে শরীরের সমস্ত সিস্টেমকে আক্রমণ করে, যেমনটা হয় মধুমেহ হলে। সংক্রমণ হয় কিডনি, লিভার ও ফুসফুসে। হয় জন্ডিস। ফুসফুসে এই রোগ ঢুকলে শ্বাসকষ্ট, কাশি এমনকী হতে পারে ক্যানসারও। বেড়ে যায় হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও। হাত বা পায়ের অংশ পচে যেতে পারে। সংক্রমণ ঘটে শরীরের নার্ভাস সিস্টেমে।

প্র: কোন বয়সে সাধারণত এই বিষক্রিয়া হয়?

উ: মূলত ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সে এই বিষক্রিয়া বেশি হয়। মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই এটিতে বেশি আক্রান্ত হন।

প্র: বিষক্রিয়া নির্ণয় করা যায় কীভাবে?

উ: সাধারণত রোগীকে চোখে দেখেই রোগটি ধরা যায়। নখ, চুল ও প্রস্রাব পরীক্ষা করেও রোগটি হয়েছে কি না- তা জানা যায়। এই পরীক্ষার ব্যবস্থা মালদহ জেলায় নেই। কলকাতার ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পরীক্ষাগুলো করার ব্যবস্থা আছে।

প্র: বিষক্রিয়া হলে কী করণীয়?

উ: চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে, খেতে হবে আর্সেনিকমুক্ত জল। যে জল পান করা হচ্ছে তা পরীক্ষা করে জেনে নিতে হবে যে তাতে কতটা আর্সেনিক রয়েছে। বেশি করে শাক-সবজি ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। এই বিষক্রিয়া হলে খাবারে কোনও নিষেধ নেই।

প্র: এই বিষক্রিয়ার চিকৎসা কী?

উ: এই রোগ যাতে না হয় সে জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। বাড়ির জলে বা যে জল পান করছি, তাতে আর্সেনিকের মাত্রা কী পরিমাণ রয়েছে,তা জানতে জল পরীক্ষা করতে হবে। আর্সেনিক শরীরকে অক্সিডাইজ়ড করে দেয়। সে জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে। চিলেটিং এজেন্ট, ডিএমএসএ-ও খাওয়া দরকার। দরকার অ্যাসিটাইল সিস্টেম সাপ্লিমেন্টও। এটা খেলে আক্রান্তদের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে। রেটিনয়েডসও ব্যবহার করা হয়। সেটা চামড়ায় লাগাতে বা কখনও ওরাল হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। ক্যানসার আটকাতে সাহায্য করলেও ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকায় তা ব্যবহার কম হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Tips Arsenic Contamination Health Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE