Advertisement
E-Paper

চোখ বাঁচাতে পাঠ সুন্দরবনে

সন্দেশখালির বাসিন্দা সাড়ে ন’বছরের সোনালি ঘোষের চোখের ছানির কথাও পরিবার বিশ্বাস না করায় দেরিতে চিকিৎসা শুরু হয়। ক্লাস ফাইভের সোনালি খেলার সময় হঠাৎ বুঝতে পারে তার দেখতে সমস্যা হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১৬

বছর ছয়েকের ইমরাজ শেখের কখনও চোখ লাল হয়ে যেত, আবার কখনও জল পড়ত। ছ’মাস বয়স থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর বাসিন্দা ইমরাজের এই সমস্যা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তার এই সমস্যা বুঝতে বেশ কিছু সময় কেটে যায় তার মায়ের। স্থানীয় চিকিৎসক পরীক্ষা করিয়ে জানান, চোখে ছানি হয়েছে তার। ছ’বছরের বাচ্চার ছানির কথা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেনি পরিবার।

সন্দেশখালির বাসিন্দা সাড়ে ন’বছরের সোনালি ঘোষের চোখের ছানির কথাও পরিবার বিশ্বাস না করায় দেরিতে চিকিৎসা শুরু হয়। ক্লাস ফাইভের সোনালি খেলার সময় হঠাৎ বুঝতে পারে তার দেখতে সমস্যা হচ্ছে। বেশ কিছু দিন পরে অবশ্য এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্যোগী হওয়ায় প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার করে সুস্থ হয়ে উঠেছে সোনালি। শুরু হয়েছে তার স্বাভাবিক জীবন।

সরকারি এবং বেসরকারি একাধিক সমীক্ষার পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সব চেয়ে বেশি চোখের সমস্যায় ভোগেন সুন্দরবন এলাকার মানুষ। শিশুদের একটা বড় অংশ ছানির সমস্যায় ভোগে। পাশাপাশি বড়রাও এই সমস্যায় জর্জরিত। চল্লিশোর্ধ্ব মানুষের মধ্যে ৮৩.৮ শতাংশ ছানিজনিত অন্ধত্বের শিকার। ৫০ শতাংশ মানুষ ছানি অস্ত্রোপচার করান। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই অস্ত্রোপচারের হার আরও কম।

চোখের সমস্যা নিয়ে এই এলাকায় কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা জানাচ্ছেন, এই সব এলাকায় চোখে ছানির সমস্যা গুরুতর হওয়ার সব চেয়ে বড় কারণ হল, ওই এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান। সুন্দরবন এলাকার মাটি লবণাক্ত হওয়ায় তা থেকে চোখের সমস্যা বেশি হয়। প্রথম দিকে সমস্যা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারলে তা বাড়তে পারে না। কিন্তু চোখে ছানি পড়লে বা সমস্যা হলেও সেটা চোখের সমস্যা বলে বুঝতে চান না এলাকার মানুষজন। তাই চিকিৎসাও করাতে যান না। এর জেরে সমস্যা আরও বেড়ে যায়।

এই এলাকার মানুষদের ছানির সমস্যা নিয়ে সচেতন করতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ২০১৬ সালে মৌ স্বাক্ষর হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকার পাশাপাশি বাঁকুড়া, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগু়ড়ি, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর-সহ রাজ্যের সাতটি জেলার চোখ সংক্রান্ত রোগ নিয়ে মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ওই সংস্থাকে।

ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা জানান, সাধারণ মানুষের মধ্যে অন্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যার তুলনায় চোখের সমস্যা নিয়ে সচেতনতার হার খুব কম। তাই সচেতনতা প্রসারই তাদের সব চেয়ে বড় কাজ। তার পাশাপাশি বিভিন্ন মহকুমা হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো রয়েছে কি না সেটা পর্যবেক্ষণের দায়িত্বও তাদের। যেমন, কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে চোখের চিকিৎসার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। সেই হাসপাতালে এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে যাওয়া এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা পেলেন কিনা তা নজরদারি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সংস্থার পূর্ব ভারতের প্রধান সুদীপ্ত মোহান্তির কথায়, ‘‘সরকার পাশে থাকায় কাজ করতে আরও সুবিধা হচ্ছে। প্রশিক্ষিত কর্মী সংখ্যা বাড়াতে প্রয়োজনীয় কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার যে সব ছেলেমেয়েরা প্যারামেডিক্যাল নিয়ে পড়াশোনা করেছে, তাদের বেছে নিয়ে চোখের রোগ সংক্রান্ত বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এনআরএস হাসপাতাল এ ব্যাপারে বিশেষ সহযোগিতা করছে।’’

স্বাস্থ্য দফতরের চক্ষু বিভাগের উপ-অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘‘কাজ চলছে। আশা করছি, পরিস্থিতি উন্নত হবে। মানুষ সচেতন হয়ে চিকিৎসা করতে এগিয়ে আসবেন।’’

Sundarban সুন্দরবন ছানি Cataract
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy