তিন দিনের সফরে রাজ্যে এলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অসমের কর্মসূচি শেষ করে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছোন তিনি। শাহ পৌঁছোনোর আগে থেকেই দমদম বিমানবন্দরের বাইরে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের ভিড় জমেছিল। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বিজেপি কর্মীদের জমায়েতের দিকে হাত নাড়েন তিনি। গাড়ি থেকে নেমে বেশ কিছুটা হেঁটে এগিয়েও যান কর্মীদের দিকে। আগে কখনও বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর সময়ে এমনটা করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর সময়ে শাহের গাড়িতে ছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। শাহ যখন গাড়ি থেকে নেমে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে এগিয়ে যান, তখন শমীক-শুভেন্দুও ছিলেন তাঁর দু’পাশে। তার পরে ফের বঙ্গ বিজেপির দুই নেতাকে নিজের গাড়িতে তুলেই সল্টলেকে বিজেপির দফতরের দিকে রওনা দেন শাহ।
সোমবার রাতে দমদম বিমানবন্দরের বাইরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। পিছনে রয়েছেন শমীক ভট্টাচার্য এবং শুভেন্দু অধিকারীও। —নিজস্ব চিত্র।
আগামী বছরই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। তার আগে পশ্চিমবাংলায় দলের সাংগঠনিক হালহকিকত বুঝে নেওয়ার জন্যই রাজ্যে এসেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তিন দিনের এই সফরসূচির পুরোটাই থাকছে কলকাতাকেন্দ্রিক। নেই কোনও প্রকাশ্য জনসভা বা সমাবেশ। একগুচ্ছ সাংগঠনিক বৈঠক রয়েছে তাঁর তিন দিন ধরে। এবং তা শুরু হয়ে যাচ্ছে সোমবার রাত থেকেই।
শাহের এ বারের পশ্চিমবঙ্গ সফরে কোনও প্রকাশ্য জনসংযোগ কর্মসূচি না থাকায়, তাঁর কনভয় ঘিরে একটি বাইক মিছিলের ব্যবস্থা করার ইচ্ছা ছিল রাজ্য বিজেপির। শাহের পশ্চিমবঙ্গ সফরে সে ভাবেই শক্তিপ্রদর্শনের ইচ্ছা ছিল বিজেপি নেতৃত্বের। তিনি কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর পরেই তাঁর কনভয়ের সামনে-পিছনে কয়েক হাজার বাইক নিয়ে বিজেপি কর্মীরা দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত যাবেন অথবা পরের দিন সকালে নিউটাউনের হোটেল থেকে দলীয় কার্যালয় পর্যন্ত শাহের কনভয়ের সঙ্গে বাইক মিছিল থাকবে বলে পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু সোমবার শাহ কলকাতায় নামার পরে তেমন কোনও বাইক মিছিল দেখা যায়নি।
বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার সকালেও তেমন কোনও মিছিল হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো প্রায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা যাঁরা পান, তাঁদের কনভয় ঘিরে এমন মিছিলের অনুমতি পাওয়া কঠিন। নিরাপত্তা বাহিনীর অনুমতি না-মেলাতেই ওই বাইক মিছিলের পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে।
দমদম বিমানবন্দর থেকে শাহ সোজা পৌঁছে যান সল্টলেকে বিজেপির দফতরে। রাতেই সেখানে রাজ্য বিজেপির নেতাদের সঙ্গে একটি সাংগঠনিক বৈঠক সারবেন তিনি। প্রায় এক ঘণ্টা ওই বৈঠক চলার কথা। বৈঠক শেষে শাহ পৌঁছে যাবেন নিউটাউনের একটি হোটেলে। সেখানেই রাত্রিবাস করবেন তিনি।
মঙ্গলবারও জোড়া বৈঠক রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। তার আগে একটি সাংবাদিক বৈঠকও করতে পারেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ সেটি হতে পারে। রাজ্য বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, ওই সাংবাদিক বৈঠকে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর নিয়ে কেন্দ্র তথা বিজেপির অবস্থান আরও এক বার স্পষ্ট করতে পারেন তিনি। এসআইআর প্রক্রিয়ায় একাধিক অনিয়ম এবং সাধারণ মানুষকে হেনস্থার অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি দেশের শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনেও এই বিষয়টি বড় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই আবহে কেন্দ্র বিরোধীদের অভিযোগ নস্যাৎ করতে শাহ কোনও বার্তা দেবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
সাংবাদিক বৈঠকের পরে মধ্যাহ্নভোজ সেরে পর পর দু’টি বৈঠক সারবেন শাহ। মঙ্গলবার বিধাননগরে দুপুর ২টো নাগাদ একটি বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলতে পারে সেটি। এর পরে তিনি যাবেন আরএসএস-এর দফতর কেশব ভবনে। বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে সেখানে সঙ্ঘের নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এই জোড়া বৈঠক শেষে তিনি ফের ফিরে যাবেন নিউটাউনের ওই হোটেলে।
বুধবার সকালে কলকাতায় ইসকনের মন্দিরে যাবেন শাহ। সেখান থেকে হোটেলে ফিরে দলীয় নেতাদের নিয়ে আবার একটি সাংগঠনিক বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকের পর মধ্যাহ্নভোজ সেরে শাহ যাবেন সায়েন্স সিটিতে। দুপুরে সায়েন্স সিটির প্রেক্ষাগৃহে একটি সম্মেলনে থাকবেন শাহ। ওই সম্মেলন শেষে দমদম বিমানবন্দর হয়ে দিল্লিতে ফিরে যাবেন তিনি।