Advertisement
E-Paper

প্রৌঢ়াকে ট্রেন থেকে ফেলে ব্যাগ ছিনতাই

ঘুমের মধ্যেও নিজের চামড়ার ব্যাগটি আঁকড়ে ছিলেন প্রৌঢ়া যাত্রী। শুধু আঁকড়ে থাকা নয়, ব্যাগের ফিতে গলায় বেড় দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন।কাল হল সেটাই। চলন্ত ট্রেনে উঠে চেষ্টা করেও ব্যাগটি কেড়ে নিতে না-পেরে টানতে টানতে মহিলাকে নিয়েই দরজার দিকে এগিয়ে গেল এক ছিনতাইবাজ। শেষ চেষ্টা হিসেবে দিল মোক্ষম টান।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৯

ঘুমের মধ্যেও নিজের চামড়ার ব্যাগটি আঁকড়ে ছিলেন প্রৌঢ়া যাত্রী। শুধু আঁকড়ে থাকা নয়, ব্যাগের ফিতে গলায় বেড় দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন।

কাল হল সেটাই। চলন্ত ট্রেনে উঠে চেষ্টা করেও ব্যাগটি কেড়ে নিতে না-পেরে টানতে টানতে মহিলাকে নিয়েই দরজার দিকে এগিয়ে গেল এক ছিনতাইবাজ। শেষ চেষ্টা হিসেবে দিল মোক্ষম টান। মহিলাও নাছোড়। প্রাণপণে আঁকড়ে ছিলেন ব্যাগটি। পোক্ত চামড়ার ফিতে ছেঁড়েনি। ছিনতাইবাজের মরিয়া টানে ব্যাগ-সহ প্রৌঢ়া পড়ে গেলেন নীচে। হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেল দুষ্কৃতীও। মারাত্মক আহত হয়ে মহিলা তখন কাতরাচ্ছেন। সেই অবস্থাতেই তাঁর ব্যাগটি কেড়ে নিয়ে পালিয়ে গেল ছিনতাইবাজ।

সোমবার ভোরে কলকাতামুখী আনন্দবিহার এক্সপ্রেসের এই ঘটনায় ট্রেনযাত্রায় নিরাপত্তার কঙ্কাল আবার বেরিয়ে পড়েছে। আরপিএফ স্কোয়াড, প্ল্যাটফর্মে সিসিটিভি, হরেক সুরক্ষা অ্যাপ— এলাহি আয়োজনেও যে কত ফাঁক, সেটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই ভয়াবহ ঘটনা।

ঠিক কী ঘটেছিল ওই ট্রেনে?

পুলিশ জানায়, ওই প্রৌঢ়ার নাম কৃষ্ণা দাস। কলকাতার হরিদেবপুরের ওই বাসিন্দা বৃহস্পতিবার একটি দলের সঙ্গে কাশী বেড়াতে গিয়েছিলেন। সোমবার আনন্দবিহার এক্সপ্রেসে ফিরছিলেন কলকাতায়।

ট্রেনের একটি সংরক্ষিত কামরার দরজার সামনে লোয়ার বার্থে শুয়ে ছিলেন কৃষ্ণাদেবী। ভোর ৪টে নাগাদ ট্রেনটি ধানবাদ স্টেশন ছাড়া মাত্রই এক দুষ্কৃতী ছিনতাই করতে ওঠে। প্রথমেই ওই মহিলার বুকে জড়ানো ব্যাগটি টানতে থাকে সে। ব্যাগে টান পড়ায় মহিলার ঘুম ভেঙে যায়। তিনি চিৎকার করে ওঠেন। কিন্তু দুষ্কৃতী এত জোরে বারবার টান মারছিল যে, তিনি কামরার মেঝেতে পড়ে যান। ব্যাগের ফিতে ছিঁড়ে গেলে তিনি হয়তো রক্ষা পেতেন। কিন্তু চামড়ার ফিতে ছেঁড়েনি। গলায় বেড় দেওয়া সেই ফিতে খুলে ফেলারও সময় পাননি কৃষ্ণাদেবী। দুষ্কৃতীর টানাটানিতে এক সময় দু’জনেই রেললাইনে পড়ে যান। জোর আঘাত লাগলেও প্রৌঢ়া বেঁচে গিয়েছেন। ছিনতাইকারী কিন্তু ব্যাগটি নিয়েই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়।

এত দ্রুত ঘটনাটি ঘটে যায় যে, জেগে উঠেও অন্য যাত্রীরা কিছু করে উঠতে পারেননি। স্বর্ণেন্দু ঘোষ নামে ওই প্রৌঢ়ার এক সহযাত্রী বলেন, ‘‘কৃষ্ণাদির চিৎকার শুনে প্রথমে আমরা কেউ বুঝতেই পারিনি, কী হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় বার চিৎকার শুনে এগিয়ে গিয়েই দেখি, দু’জনে দরজা দিয়ে পড়ে গেলেন।’’ ওই ঘটনার পরে ওই কামরার যাত্রীরা ভয় পেয়ে যান। তাঁরা জানান, প্রৌঢ়ার চিৎকার শুনে এক যাত্রী চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে দেন। খবর পেয়ে রেল সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানেরা চলে আসেন। আসে রেল পুলিশও। আহত মহিলাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। পরে তাঁকে আবার তুলে দেওয়া হয় ওই ট্রেনেই। তবে ছিনতাই হওয়া ব্যাগ বা অন্য মালপত্র এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

চলন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায় ছিনতাইবাজ উঠল কী ভাবে?

যাত্রীরা জানান, ট্রেনটি সবে ধানবাদ থেকে ছাড়ছিল। তাই গতি ছিল বেশ কম। সেই সুযোগেই দুষ্কৃতী উঠে পড়ে বলে মনে হচ্ছে। আবার এটাও ঠিক যে, গতি কম ছিল বলেই ট্রেন থেকে বেমক্কা লাইনে পড়েও রক্ষা পেয়েছেন প্রৌঢ়া। এক যাত্রী রেলের ১৮২ নম্বরে ফোন করেন। তার পরেই পুলিশ ও রেলের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে আসেন। পৌঁছে যান রেলের চিকিৎসকও।

রেলের অফিসারেরা এই ঘটনায় হতবাক। পুলিশও তা-ই। তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না, কী ভাবে এমনটা ঘটল! তবে রেল পুলিশ জানিয়েছে, ধানবাদে সিসিটিভি রয়েছে। সেটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেখান থেকে কিছু তথ্য মিলতে পারে। এক যাত্রী দ্রুত ১৮২ নম্বরে ফোন করায় সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক সেখানে গিয়ে প্রৌঢ়ার চিকিৎসা করতে পেরেছেন। নইলে ওই প্রৌঢ়ার মাথায় ও পায়ে যে-ভাবে আঘাত লেগেছে, তাতে জীবন-সংশয় হতে পারত বলে ডাক্তারদের আশঙ্কা।

ট্রেন আসানসোলে পৌঁছনোর পরে স্বর্ণেন্দুবাবুরা জিআরপি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ঘটনাটি ধানবাদে ঘটায় অভিযোগপত্র পাঠানো হয় সেখানকার জিআরপি-র কাছে। তারাই তদন্ত করছে। ট্রেনটি হাওড়ায় পৌঁছয় সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ। আহত কৃষ্ণাদেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়া জেলা হাসপাতালে। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ব্যাগটি চামড়ার। তাই টানাটানিতেও ছেঁড়েনি। ওই লোকটি এমন টান দিয়েছিল যে, নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। খোলা দরজা দিয়ে আমিও পড়ে যাই।’’

Train
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy