শুক্রবার সকালে হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে পাকড়াও করা হয় সত্যেন্দ্রকে। ফাইল চিত্র।
বাগুইআটির জোড়া খুনে ধৃত সত্যেন্দ্র চৌধুরি জেরায় খুনের কথা কবুল করেছে বলে দাবি করেছে সিআইডি। তবে ঠিক কী কারণে খুন সে ব্যাপারে এখনও ধন্দে তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, জেরায় সত্যেন্দ্র নানা কথা বলছে। তার মধ্যে কোনটি খুনের মূল কারণ তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ সূত্রের দাবি, মোটরবাইক কেনার জন্য বাড়ির লোককে না-জানিয়ে সত্যেন্দ্রকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল অতনু দে। কিন্তু মোটরবাইক না-পাওয়ায় টাকা ফেরত চায় সে। অতনু ‘ব্ল্যাকমেলিং’ শুরু করেছিল। মূলত অতনুর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছিল বলেই জেরায় সত্যেন্দ্র দাবি করেছে।
তবে এই দাবি এখনও মানতে চাইছেন না তদন্তকারীরা। তাঁদের মতে, শুধু ৫০ হাজার টাকা কিংবা বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক চাপা দেওয়ার জন্য এ ভাবে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করে পরিকল্পনামাফিক খুন করা হবে তা পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য নয়। হেফাজতে থাকাকালীন আরও বিশদে এবং কড়া ভাবে জেরা করলে সত্যেন্দ্র আসল কারণ ফাঁস করতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। তদন্তকারীদের অনুমান, সত্যেন্দ্রর সঙ্গে অতনুর বহু পুরনো কোনও বিবাদ ছিল। তার জেরেই খুন।
বাগুইআটির দুই কিশোর অতনু দে এবং অভিষেক নস্কর গত ২২ অগস্ট নিখোঁজ হয়। প্রায় ১৩ দিন পরে বসিরহাট মর্গে তাদের দেহ শনাক্ত হয়। এই ঘটনায় বাগুইআটি থানার গাফিলতিও ধরা পড়ে এবং ওসি কল্লোল ঘোষকে সাসপেন্ড করে পুলিশ। প্রথমে ভাড়াটে খুনি-সহ চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার সকালে হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে পাকড়াও করা হয় সত্যেন্দ্রকে। প্রাথমিক জেরাতেই সে স্বীকার করে, রীতিমতো পরিকল্পনা করে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করে খুন করা হয়েছিল। এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ধাবাকর্মী অভিজিৎ বসু অবশ্য দাবি করেছে, ২ লক্ষ টাকায় রফা হলেও এক নয়া পয়সাও ঠেকায়নি সত্যেন্দ্র।
পুলিশ সূত্রের খবর, সত্যেন্দ্রর কাছ থেকে একটি সাধারণ মোবাইল মিলেছে। তাকে জেরা করে কলকাতার চাঁদনি মার্কেট থেকে আরেকটি স্মার্ট ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ফোনটি বৃহস্পতিবারই পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিল সত্যেন্দ্র। ফোনটি ফরম্যাট করে দেওয়ায় সরাসরি কোনও তথ্য মেলেনি। তাই সেটির ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হবে। ওই ফোন থেকেই অতনুর পরিবারকে মেসেজ পাঠিয়েছিল সে।
সিআইডি সূত্রের খবর, রাজারহাটের একটি হোটেলে বসে অতনুকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ২২ অগস্ট কেষ্টপুর বাজার থেকেই শ্বাসরোধ করার জন্য দড়ি কেনা হয়। সে দিন অতনু এবং অভিষেককে গাড়িতে তুলে রাজারহাটের বিষ্ণুপুরে একটি মোটরবাইকের শো-রুমে নিয়ে যায় সত্যেন্দ্র। কিন্তু বাইক না-কিনে বেরিয়ে আসে। সে সময় প্রথম গাড়িটি খারাপ হয়ে গিয়েছে বলে দ্বিতীয় গাড়িতে তোলা হয় দুই কিশোরকে। তার পর শ্বাসরোধ করে খুন করে দেহগুলি লোপাট করে ভাড়া গাড়ি নিয়েই কেষ্টপুরে ফিরে আসে। এর পর , প্রথমে একটি অ্যাপ-বাইক ভাড়া করে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দিকে রওনা দেয় সত্যেন্দ্র। সে সময় অতনু এবং অভিষেকের ফোন তার কাছে ছিল। সেগুলি রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে মোটরবাইক থেকে নেমে একটি বাসে উঠে পড়ে। নানা জায়গায় ঘুরে গত বুধবার থেকে সে হাওড়া স্টেশনেই থাকছিল। ধৃতদের নিয়ে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করা হবে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy