Advertisement
E-Paper

সীমান্ত পেরোনোর সময় দুর্জয় বলল, ‘থ্যাঙ্ক ইউ’

যশোর রোড ধরে গাড়ি ছুটছে পেট্রাপোল সীমান্তের দিকে। পিছনের আসনে মা ও মামার মাঝে বসে বছর পনেরোর দুর্জয়। একের পর এক প্রশ্নে জেরবার করে চলেছে সে। কী প্রশ্ন? যশোরে তার পাড়ার বন্ধুরা কেমন আছে? স্কুলের বন্ধুদেরই বা কী খবর ? কেমন আছে পরিচিত আত্মীয়েরা?

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৫ ০০:২৩
শনিবার মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে ঢুকছে দুর্জয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

শনিবার মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে ঢুকছে দুর্জয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

যশোর রোড ধরে গাড়ি ছুটছে পেট্রাপোল সীমান্তের দিকে। পিছনের আসনে মা ও মামার মাঝে বসে বছর পনেরোর দুর্জয়। একের পর এক প্রশ্নে জেরবার করে চলেছে সে। কী প্রশ্ন?

যশোরে তার পাড়ার বন্ধুরা কেমন আছে? স্কুলের বন্ধুদেরই বা কী খবর ? কেমন আছে পরিচিত আত্মীয়েরা?

এ দেশের স্বাধীনতা দিবস যেন প্রতীকি মাত্রা পেল বাংলাদেশি কিশোর দুর্জয় ভক্তের কাছে। চার বছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভিনদেশে কাটিয়ে শনিবারই নিজের বাড়ি ফিরে গিয়েছে সে। ফিরে পেয়েছে মা,বাবা, ভাই-সহ গোটা পরিবারকে। বন্ধু-পরিচিতদেরও। তাই সকালে কলকাতা থেকে সীমান্তের দিকে যাওয়ার পথে পুরনো পাড়া-বন্ধু-পরিজনদের খোঁজ নিয়ে সে হয়তো বোঝার চেষ্টা করছিল, এত দিন পর ফিরে গিয়ে কেমন দেখবে নিজের ভিটেকে। ছেলের যাবতীয় উত্তর হাসিমুখে দিয়ে যাচ্ছিলেন মা নমিতা ভক্ত। ছেলেকে নিয়ে দেশে ফেরার আনন্দ চোখেমুখে ঠিকরে বেরোচ্ছিল তাঁর।

শুক্রবার রাতটা মা ও মামার সঙ্গে পার্ক স্ট্রিটের একটি হোটেলে ছিল দুর্জয়। এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ একটি ভাড়া গাড়িতে চেপে নমিতাদেবীরা রওনা দেন সীমান্তের দিকে। পথে যেতে যেতেই এত দিনের নানা কষ্টের কথা এই প্রতিবেদককে শোনাচ্ছিলেন নমিতাদেবী ও তাঁর ভাই সু্ব্রত মণ্ডল। চুপ করে সে সব কথা শুনছিল কিশোরটি। এরই মাঝে ফোন এল দুর্জয়ের এক বন্ধুর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কামালগাজিতে ‘ইচ্ছে’ আশ্রমে থাকার সময় স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি হয়েছিল দুর্জয়। সেখানেই তার সহপাঠী ছিল ওই কিশোর। বন্ধুর সঙ্গে নানা কথার শেষে দুর্জয় বলল, ‘‘তোর নম্বর সেভ করে নিলাম। পরে আবার ফোন করব।’’

বাংলাদেশি কিশোর দুর্জয় ২০১১ সালে ইদের আগের দিন উৎসব দেখতে সীমান্তের কাছে এসেছিল। তার পরেই এক হুড়োহুড়িতে পড়ে সে চলে আসে এ-পার বাংলায়। দুর্জয় জানিয়েছে, এ দেশে এসে প্রথমে মাদক পাচারকারী খপ্পরে পড়ে। তার পরে মালিপুকুর হোমের অত্যাচার সইতে হয়েছিল তাকে। পরে শিশুকল্যাণ সমিতির মাধ্যমে ঠাঁই পায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার কামালগাজির ‘ইচ্ছে’ অনাথ আশ্রমে। সেখানে নিজের নাম বলেছিল, ইন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী।

মালিপুকুর হোমে থাকতেই দুর্জয়ের খবর বিদেশ মন্ত্রক মারফত গিয়েছিল বাংলাদেশে। সেই খবর পেয়ে তার মা নমিতা ভক্ত এ রাজ্যে এলেও মালিপুকুর হোম ওই নামে তাদের কোনও আবাসিকের কথা স্বীকার করেনি। দুর্জয়ের এই নিখোঁজ রহস্য বুধবার আনন্দবাজারে প্রকাশিত হয়। ‘ইচ্ছে’ আশ্রমে সে দিন সেই খবর পড়েছিল দুর্জয়। তার পর বুধবার নিজেই শিয়ালদহ স্টেশনে এসে পরিচিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীদের নিজের কথা খুলে বলে। সেখান থেকে খবর আসে আনন্দবাজারে। আনন্দবাজারের কাছে দুর্জয়ের মামা সুব্রত মণ্ডলের ফোন নম্বর ছিল।

আনন্দবাজারের প্রতিনিধির মাধ্যমেই দুর্জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয় বাংলাদেশের সুব্রতর। বৃহস্পতিবার সুব্রতর সঙ্গে দুর্জয়ের মা নমিতাদেবী এ দেশে এসে দুর্জয়ের সঙ্গে দেখা করেন। শুক্রবার কলকাতা শিশুকল্যাণ সমিতির কাছ থেকে দুর্জয়কে ফিরে পাওয়ার অনুমতিও পান নমিতাদেবী। তার পরেই রাত কাটিয়ে সোজা রওনা নিজের দেশের দিকে।

শনিবার বেলা সাড়ে বারোটা। দুর্জয়দের গাড়ি পৌঁছল পেট্রাপোল। অভিবাসন দফতরে দুর্জয় ও তার মায়ের নাম বলতেই নড়ে বসলেন অফিসাররা। বললেন, ‘‘তোমার খবরই তো আনন্দবাজারে বেরিয়েছিল।’’ তার পরই সীমান্ত পেরনোর কাগজপত্র তৈরি করে দিলেন তাঁরা।

বিকেল সাড়ে চারটে। সব কাগজপত্র তৈরি শেষে সীমান্তের গেটের দিকে মায়ের হাত ধরে এগিয়ে চলেছে দুর্জয়। গেট পেরোনোর আগে থমকে দাঁড়াল ছটফটে কিশোর। এই প্রতিবেদকের দিকে ফিরে হাসিমুখে বলল, ‘‘থ্যাঙ্ক ইউ। দিদি, তোমরাই তো আমায় বাড়িতে ফিরিয়ে দিলে।’’

bangladeshi teen durjoy bhakta durjoy mother durjoy uncle bangladeshi teenager durjoy MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy