রজত চৌধুরী
বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ‘ফেসবুকে’ তিনি আত্মঘাতী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তার আধ ঘণ্টা পরেই হাওড়ার উলুবেড়িয়ার স্টেশনের কাছে লতিবপুরে রেললাইন থেকে রজত চৌধুরী (৪৪) নামে সেখানকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক অস্থায়ী কর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার করল রেল পুলিশ।
উলুবেড়িয়ার বৃন্দাবনপুর গ্রামের বাসিন্দা রজতবাবু ‘ফেসবুকে’ তাঁর আত্মঘাতী হওয়ার পিছনে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী, তাঁর পরিবার এবং ব্যবসায়ীর এক কর্মীকে দায়ী করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ওই ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিবারের লোকেরা বাতিল নোট তাঁর মাধ্যমে জোর করে বদল করে তাঁকে দিয়ে লিখিয়ে নেন। আবার পুলিশে মামলাও করেন। উলুবেড়িয়া থানা সূত্রে রজতবাবুর নামে কোনও মামলার কথা জানা যায়নি। মৃতের স্ত্রী কবিতাদেবী শনিবার পুলিশের কাছে তাঁর স্বামীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন চার জনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার এবং ক্যাশিয়ার।
রজতবাবুর ব্যাঙ্কের ‘বিজনেস ফেসিলিটেটর’ হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর কাজ ছিল গ্রামীণ এলাকার মানুষের কাছে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলানো। তবে, কী ভাবে অভিযুক্তেরা রজতবাবুকে ‘ব্যবহার’ করেছেন, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানাতে পারেননি তাঁর বাড়ির লোকেরা। তাঁদের সন্দেহ, ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের পরে রজতবাবুকে কাজে লাগিয়ে ওই ব্যাঙ্কে বহু টাকা বেআইনি ভাবে বদল হয়। সেই চক্রান্তে জড়িত ছিলেন ওই চার জন। কবিতাদেবী বলেন, ‘‘দু’দিন ধরে স্বামী মনমরা ছিলেন। কিছু খুলে বলেননি। তাঁর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে যাঁরা পার পেতে চেয়েছেন, তাঁদের কঠোর শাস্তি চাই।’’
অভিযুক্তদের কারও সঙ্গেই চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁরা এসএমএসেরও উত্তর দেননি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, চলন্ত ট্রেনের সামনে আত্মঘাতী হন রজতবাবু। জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার সুমিত কুমার জানান, মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের সবাইকে জেরা করা হবে। ব্যাঙ্কে গিয়েও নথিপত্র খতিয়ে দেখা হবে।
পরিবার সূত্রে খবর, শুক্রবার সকালে রজতবাবু ব্যাঙ্কের কাজে যান। বিকেলে ফেরেন। কিছুক্ষণ পরে বেরিয়ে যান। আর ফেরেননি। তবে, রাত ৮টা নাগাদ ফোনে স্ত্রীকে জানান, তাঁর দু’টি সোনার আংটি খুলে রেখে এসেছেন। তা যেন তুলে রাখা হয়। এর আধ ঘণ্টা পরেই তাঁর ‘ফেসবুক পোস্ট’ দেখেন ভাইপো রূপমের এক বন্ধু। এর পরেই জানাজানি হয়। শুরু হয় রজতবাবুর খোঁজ। স্টেশনে গিয়ে সকলে জানতে পারেন, ৯টা ৫ মিনিটে আপ লাইন থেকে একটি দেহ উদ্ধার হয়েছে। রজতবাবুর দেহটি শনাক্ত করা হয়।
রজতবাবুর দাদা পবিত্রবাবুর সন্দেহ, ‘‘ভাইকে বোধহয় কোনও মুচলেকা দিতে হয়েছিল। বেআইনি ভাবে বাতিল নোট বদলানোর দায় হয়তো ভাইয়ের উপরে চাপানোর চেষ্টা হয়। মনে হয় তাতেই মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে ভাই আত্মঘাতী হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy