আলোয় সাজবে ১০৮ শিবমন্দির। —নিজস্ব চিত্র।
পর্যটক টানতে রঙিন আলোয় সেজে উঠছে কালনা শহরের বেশ কিছু পুরাকীর্তি। কিছুদিনের মধ্যেই পর্যটকদের জন্য ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে বলেও জানা গিয়েছে।
বছর তিনেক আগে কালনা শহর পরিদর্শনে এসেছিলেন তৎকালীন পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহ। মহকুমা প্রশাসনের কাছ থেকে শহরের ইতিহাস, পুরাকীর্তিগুলির বিবরণ জানার পরে ১০৮ শিবমন্দির, প্রতাপেশ্বর মন্দির, কৃষ্ণচন্দ্র, লালজি মন্দির-সহ বেশ কিছু দ্রষ্টব্য ঘুরে দেখেন তিনি। বিভিন্ন মন্দিরের টেরাকোটার কাজ মন কাড়ে মন্ত্রীর। তখনই প্রাচীন স্থাপত্যগুলিকে বাহারি আলোয় সাজানোর পরামর্শ দেন তিনি। ‘লাইট অ্যাণ্ড সাউন্ড’ প্রকল্পের জন্য তড়িঘড়ি পুরসভাকে পরিকল্পনাও জমা দিতে বলেন তিনি। পরিকল্পনা জমা পড়ার পরে ২০১১ সালে রাজ্য পর্যটন দফতর ৬৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে। তবে পরিকল্পনাটি রূপায়ণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কেন্দ্রীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের অনুমতি। কারণ যে মন্দিরগুলি ঘিরে প্রকল্পটি হওয়ার কথা সেগুলি কেন্দ্রীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীনে রয়েছে। রাজ্য পর্যটন দফতর থেকে সংস্থার দিল্লির কার্যালয়ে একাধিকবার অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। শুরু হয় পরিদর্শন পর্ব। বেশ কয়েকবার রাজ্য ও কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল কালনায় আসে। মন্দিরগুলি কতটা পুরনো, সেগুলির চারপাশে আলো জ্বালানো হলে কি ধরণের পোকা আসতে পারে, তাতে মন্দিরের কারুকার্যে ক্ষতি হবে কি না তা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন তাঁরা। প্রশ্ন ওঠে, আলোগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ও আলো জ্বালাতে যে বাড়তি বিদ্যুৎ খরচ হবে, তা কে মেটাবে তা নিয়ে।
পরে মাস সাতেক আগে কেন্দ্রীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ, রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগ এবং কালনা পুরসভার ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে এ জট কাটে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। পুরসভা জানিয়ে দেয় রক্ষণাবেক্ষন ও বিদ্যুৎ বিলের দায়িত্ব তারা নেবে। মাসখানেক আগে কেন্দ্রীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ প্রকল্পের ব্যাপারে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। প্রকল্প ঘুরে দেখে যান রাজ্য পুরাতত্ব আধিকারিকেরাও।
সম্প্রতি একটি ঠিকাদার সংস্থা প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। ওই সংস্থার তরফে ১০৮ শিবমন্দির, প্রতাপেশ্বর মন্দির, রাসমঞ্চ,পঞ্চরত্ন মন্দিরের আশেপাশে বেশ কিছু অত্যাধুনিক আলোও লাগানো হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্থাটিকে আলোর ব্যাবহারে পরামর্শ দিয়েছেন চলচ্চিত্র জগতের কনিষ্ক সেন। কালনায় ঘুরেও গিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি জেনারেটরে আলো জ্বালিয়ে দেখে নেওয়া হয়েছে স্থাপত্যগুলির নতুন সাজও। ১০৮ শিবমন্দিরে ও রাজবাড়ি কমপ্লেক্সে নতুন সাজ দেখে খুশি শহরবাসীও। পুরপ্রধান তথা কালনার বিধায়ক বলেন, “রাতের আলোর কারসাজিতে দর্শনীয় স্থানগুলি অপূর্ব লাগছে। আগামীতে গোটা জেলারই সম্পদ হতে চলেছে এই স্থান।” তিনি আরও জানান, শীঘ্রই ট্রান্সফর্মার বসিয়ে প্রকল্পটির বিদ্যুৎ সংযোগ ঘটানো হবে। তারপরেই উদ্বোধনের জন্য রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রীকে আমন্ত্রন জানানো হবে। পুরপ্রধানের দাবি, শহরের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান আলোয় সাজানোর জন্যও পর্যটন দফতরের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। পুরসভার আলো বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউন্সিলর আনন্দ দত্তর কথায়, “আমরা নিশ্চিত এ বার পর্যটকেরা এ শহরে ঘোরার বাড়তি স্বাদ পাবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy