পরপর পাঁচ বার পঞ্চায়েত বোর্ডের সভায় অনুপস্থিত থাকায় উপপ্রধান প্রদ্যুৎ রায়-সহ পাঁচ জনের সদস্য পদ খারিজ করার নির্দেশ দিলেন বর্ধমান সদর (উত্তর) মহকুমাশাসক মুফতি শামিম সওকত। তবে তার আগে এক মাসের মধ্যে ভাতারের আমারুন ১ পঞ্চায়েতের ওই সদস্যদের আবেদন করারও সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের কয়েক মাস পর থেকেই তৎকালীন প্রধান আমিরুন্নেসা বেগম ও উপপ্রধান প্রদ্যুৎ রায়ের মধ্যে নানা বিষয়ে গোলমাল শুরু হয়। ন’সদস্যের আমারুন ১ পঞ্চায়েতের তৃণমূলের ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই উপপ্রধানের দিকে। বাকি তিন জনের মধ্যে ২ জন নির্দল ও আরেক জন সিপিএমের সদস্য। ফলে, প্রধানের পক্ষে একা পঞ্চায়েত চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। পুরো পঞ্চায়েতটাই কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েতে তালা পড়ে যায়। পঞ্চায়েত কর্মীরা বিডিও-র কাছে হাজিরা দিতে থাকেন। তৃণমূল নেতাদের হস্তক্ষেপে এক বার তালা খুললেও আবারও তালা পড়ে যায়। এর মধ্যেই প্রদ্যুৎবাবুরা অনাস্থা নিয়ে আসেন। কিন্তু দলের হস্তক্ষেপে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়নি। বিধানসভা নির্বাচনের আগে টানা সাত মাস পঞ্চায়েত তালা বন্ধ থাকে। এমনকী, জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুর বৈঠকের পরে পঞ্চায়েত খুললেও প্রদ্যুৎবাবু-সহ পাঁচ সদস্য পঞ্চায়েতমুখো হননি। তাঁরা ফের অনাস্থা নিয়ে আসেন। ২৮ জুন পঞ্চায়েত প্রধান আমিরুন্নেসা বিবি অপসারিত হন। নতুন প্রধান গঠনের আগেই আমিরুন্নেসা বিবি হাইকোর্টে দ্বারস্থ হয়ে দাবি করেন, ওই পাঁচ সদস্য টানা পাঁচ বার বোর্ডের সভায় হাজির হয়নি। পঞ্চায়েতের আইন মোতাবেক তাঁদের সদস্য থাকারই কথা নয়। হাইকোর্ট বর্ধমান সদর (উত্তর) মহকুমাশাসককে নির্দেশ দেন, অনাস্থা যেমন আনা হয়েছে, তেমনই থাকুক। কিন্তু ওই মেহেরুন্নেসা বিবির দাবি খতিয়ে দেখে পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
ওই নির্দেশ পাওয়ার পর মহকুমাশাসক সমস্ত নথি চেয়ে পাঠান বিডিওর কাছে। বিডিও-র রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই পাঁচ সদস্য গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এ বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত পরপর পাঁচটি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। ২৮ সেপ্টেম্বর দেওয়া নির্দেশে মহকুমাশাসক জানান, ওই পাঁচ সদস্য নিরাপত্তার অভাবে অনুপস্থিত থাকার কথা জানালেও উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারেননি। ভাতারের বিডিও-র রিপোর্ট অনুযায়ী পঞ্চায়েত আইন মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যদিও প্রদ্যুৎবাবু বলেন, “আমরা কী জন্য অনুপস্থিত ছিলাম সেটা জানিয়েছিলাম। আমাদের দাবি মতো অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হয়েছে। তারপরেও ওই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশ বাতিলের দাবিতে আমরা প্রশাসনকে চিঠি দেব।” অভিযোগকারী আমিরুন্নেসা বিবির কথায়, “অন্যায় ভাবে আমাকে অপসারণ করা হয়েছিল। প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু দু’পক্ষের গোলমালের মাঝে পঞ্চায়েত চলবে কী ভাবে? মহকুমাশাসক বলেন, “সময় রয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”