পুকুরপাড়ে বালি চাপা শিশুর দেহ, ধৃত তরুণ

চানাচুর কিনে দেওয়ার নাম করে সন্ধেবেলা ডেকে নিয়ে গিয়েছিল প্রতিবেশী তরুণ। রাতভর খোঁজ মেলেনি বছর পাঁচেকের শিশুটির। বৃহস্পতিবার সকালে কেতুগ্রামের খাসপুরে একটি পুকুরের পাড়ে বালি চাপা দেওয়া অবস্থায় মিলল তার দেহ। পড়শি ওই তরুণই শিশুটিকে ধর্ষণ করে খুন করেছে বলে অভিযোগ পরিবারের। অভিযুক্তকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা।

পুলিশ জানায়, সন্ধে পর্যন্ত থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে এসডিপিও (কাটোয়া) ত্রিদিব সরকার বলেন, ‘‘কী ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ জেলার এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘কী ভাবে মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে বা যৌন নির্যাতন হয়েছে কি না, তা ময়না-তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরেই বোঝা যাবে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আদতে ভাতারের সেরো গ্রামে বাড়ি ওই শিশুটির। তার বাবা চেন্নাইয়ে একটি দোকানে কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী চার মেয়েকে নিয়ে খাসপুরে বাপের বাড়িতে থাকেন। বছর পাঁচেকের মেয়েটি সবচেয়ে ছোট। সম্প্রতি তার বাবা চেন্নাই থেকে ফিরেছেন। এর পরে তাঁরা সেরো গ্রামেই পাকাপাকি ভাবে থাকবেন, সেই প্রস্তুতি চলছিল। অভিযুক্ত বছর উনিশের জাহাঙ্গিরও চেন্নাইয়ে একটি হোটেলে কাজ করে। তার বাড়ি কেতুগ্রামের তিলডাঙায়। সম্প্রতি সে-ও বাড়ি ফিরে খাসপুরে মামারবাড়িতে এসেছিল।

পরিবারের অভিযোগ, বুধবার সন্ধ্যায় জাহাঙ্গির শিশুটির মামারবাড়িতে এসে জানায়, সে দোকানে যাচ্ছে। মেয়েটি তার সঙ্গে যেতে চাইলে চানাচুর কিনে দেবে বলে সে তাকে সঙ্গে নিয়ে যায়। আধ ঘণ্টা পরে জাহাঙ্গিরকে বাড়ির কাছে দেখতে পেয়ে শিশুটির মা তার কাছে মেয়ে কোথায় জানতে চান। জাহাঙ্গির জানায়, বাড়ির সামনেই তাকে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে সে। এর পরে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। কিন্তু সারা রাত খুঁজেও হদিস মেলেনি মেয়েটির।

ওই এলাকার বাসিন্দা জামু শেখ, আলো শেখদের দাবি, এ দিন সকালে গ্রামের কলাপুকুরে জাহাঙ্গিরকে পা ধুতে দেখে তাঁরা চেপে ধরেন। তখন সে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এলাকার লোকজন তাকে ধরে ফেলেন। তাকে চেপে ধরতেই শিশুটির হদিস মেলে। ওই পুকুরের পাড়ে এক জায়গায় সরাতেই শিশুটির দেহ মেলে। পরিবারের দাবি, গলায় আঁচড়ের দাগ রয়েছে। নিম্নাঙ্গে রক্তের ছোপ পাওয়া গিয়েছে। ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিজন ও এলাকাবাসীর।

মেয়েটির মা বলেন, ‘‘আমার মেয়ে জাহাঙ্গিরকে মামা বলে ডাকত। সে এ রকম করতে পারে, ভাবতেই পারিনি! ওর চরম শাস্তি চাই।’’ গ্রামের বাসিন্দা মালেক শেখ, রবি দাসেরা বলেন, ‘‘জাহাঙ্গির এখানে থাকত না। তাই সে কেমন ছেলে আমাদের বিশেষ ধারণা ছিল না।’’

দেহ উদ্ধারের পরে এলাকার কিছু লোকজন জাহাঙ্গিরের উপরে চ়়ড়াও হয়। তবে সিভিক ভলান্টিয়াররা গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে আসায় সময়ে জাহাঙ্গির অবশ্য দাবি করে, ‘‘আমি এমন কাণ্ড করিনি। বাচ্চাটিকে শুধু চানাচুর খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম। তার পরে কী হয়েছে জানি না।’’ ছেলেকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি করেন জাহাঙ্গিরের বাবা সিরাজ শেখ।