দু’দিকের গ্রামগুলির মধ্যে যোগাযোগের রাস্তা বলতে একটি বাঁশের সেতু। বছরভর প্রাণ হাতে নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। আর বর্ষায় তো কথাই নেই! নদীর জল উপচে সেতু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দু’দিকের যোগাযোগ।
কাটোয়া ২ নম্বর ব্লকের একদিকে মালঞ্চ, মেয়োগাছি এবং অন্য দিকে দেয়াসিন ও খাসপুর গ্রামের মাঝখানে এই সেতুটি পাকা করার প্রতিশ্রুতি জুটেছে বার বার। সম্প্রতি সেই প্রতিশ্রুতির ৫০ বছর পেরোলো। কিন্তু আজও তৈরি হয়নি পাকা সেতু।
সালটা ১৯৬৭। ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করে স্থানীয় প্রৌঢ় শিক্ষক পীযূষকান্তি সাহা বললেন, ‘‘তখন আমার বয়স দশ। রাইটার্স থেকে আধিকারিকেরা গ্রামের দুরবস্থা পরিদর্শনে এসেছিলেন। সেতু ছাড়া দু’দিকের গ্রাম যে বিচ্ছিন্ন, আধিকারিকদের তা বুঝিয়েছিলেন সমাজসেবক মনোমোহন চট্টোপাধ্যায়। তাতে পাকা সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতিও মেলে।’’ সেদিন থেকে আশায় বুক বেঁধেছিলেন মালঞ্চ, মেয়োগাছি, খাসপুর ও দেয়াসিনের বাসিন্দারা। এর মাঝে অবশ্য জল অনেক গড়িয়েছে। ভোটের পরে ভোট এসেছে। মিলেছে প্রতিশ্রতি। তবু তৈরি হয়নি সেতু।
এর পরে বছর আটেক আগে সিঙ্গি পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ৮০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সেতুটি তৈরি হয় ব্রহ্মানী নদীর উপরে। এতে সমস্যা কিছুটা মিটলেও বর্ষাকালে ভুগতে হয় বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দা অক্ষয় মণ্ডল, পার্থ ঘোষেরা জানালেন, এমনিতেই সেতুর রেলিং নেই। সাইকেল নিয়ে পার হতে গেলে জলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তার উপরে প্রতি বর্ষায় নদী উপচে সেতু ডুবে যায়। জল না নামা পর্যন্ত দু’দিকের গ্রামগুলির মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষাকালে অসুস্থ রোগী হোক বা স্কুলপড়ুয়া — যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয় নৌকো। পাকা সেতুর দাবিতে গত বিধানসভায় ভোট বয়কট করেন মালঞ্চ গ্রামের ২৫০ ঘর বাসিন্দা। কিন্তু তাতেও ফল মেলেনি।
স্বভাবতই বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলেছেন, এ ভাবে আর কতদিন! সমস্যা না মেটার কারণ অবশ্য স্পষ্ট ভাবে বলতে পারেননি প্রশাসনের কর্তারা। বিডিও শিবাশিস সরকার বলেন, ‘‘সাংসদ তহবিলের ২কোটি টাকা ব্যয়ে পাকা সেতু তৈরির জন্য মাটি পরীক্ষা করেছিল একটি বেসরকারি সংস্থা। তাদের সঙ্গে সমস্যা হওয়ায় ফের নতুন সংস্থাকে দিয়ে কাজ শুরু হয়।’’ তিনি জানান, শীঘ্রই মাটি পরীক্ষা করে ফের কাজ শুরু হবে। তবে চলতি বছর বর্ষার আগে কাজ শেষ করা যাবে না বলেই জানিয়েছেন বিডিও।