Advertisement
E-Paper

বাতিল নোটে নিরামিষ রবিবার

গত চার দিনের মতো রবিবারেও খুচরোর আকাল দেখা গিয়েছে বর্ধমান শহরে। আর তার জেরে মাছে-ভাতে বাঙালির পাতে রবিবার শুধুই নিরামিষ। মার খেল মাছ ও মাংস ব্যবসাও। শহরের বিভিন্ন মাছ বাজার ঘুরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার।এখানে ইলিশ, পমফ্রেট, পাবদা, গলদা-সহ বহু ধরনের দামি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। এখানে চিংড়ির জোগান আসে কলকাতার বিভিন্ন বাজার থেকে। কিন্তু সেখানেও ব্যবসায়ীরা বাতিল নোট নিতে না চাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানা গেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৪
ছুটির দিনেও ভিড় কম রথতলা বাজার। নিজস্ব চিত্র।

ছুটির দিনেও ভিড় কম রথতলা বাজার। নিজস্ব চিত্র।

স্টেশন বাজার

এখানে ইলিশ, পমফ্রেট, পাবদা, গলদা-সহ বহু ধরনের দামি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। এখানে চিংড়ির জোগান আসে কলকাতার বিভিন্ন বাজার থেকে। কিন্তু সেখানেও ব্যবসায়ীরা বাতিল নোট নিতে না চাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানা গেল। রামকিঙ্কর দত্ত, সুলতান খানদের মতো কয়েক জনের বক্তব্য, ‘‘রবিবার দামি মাছই কিনতাম। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি ডাল-ভাত আর ডিমেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।’’ মাছ বাজারের মতো প্রভাব পড়েছে মাংসের বাজারেও। খাসির মাংসের দর ৪৬০ থেকে ৪২০ টাকায় নেমেছে। মাংস বিক্রেতাদের শেখ রতন, আবদুল্লা শেখরা জানান, এ দিন প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ লোকসান হয়েছে। একই হাল মুরগির মাংসের ক্ষেত্রেও। মাংসের দর ১৬০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকায়। তারপরেও ক্রেতাদের ভিড় তেমন নজরে পড়ছে না বলে জানান রাজেশ দেবনাথ, সুনীল সাউদের মতো বিক্রেতারা।

গত কয়েক দিনের মতো এ দিনও ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে গ্রাহকদের লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অধিকাংশ এটিএম থেকে এ দিনও টাকা তোলা যায়নি। মেমারিতে নোট বদলের লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে এক জন বৃদ্ধা সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

উদয়পল্লি বাজার

এখানে ২২ জন মাছ বিক্রেতা রয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্রচুর মাছ নষ্ট হয়েছে বলে জানান তিনি। রবিবার সাধারণত ৫ থেকে ৬ কুইন্ট্যাল মাছ বিক্রি হলেও আজ সেই পরিমাণ মাত্র দু’কুইন্ট্যালে দাঁড়িয়েছে বলে জানান মাছ ব্যবসায়ী সঞ্জীত দাস। খুচরো ও চাহিদার অভাবে পাইকারি বাজার থেকে ইলিশ, পার্সের মতো দামি মাছ কেনেননি বলে জানান মাছ বিক্রেতারা। সাধারণ ভাবে ২৫০-৩০০ গ্রামের মাছই বেশি নজরে পড়েছে বাজারে। রাধেশ্যাম ঘোষ, মমতা দাসদের মতো কয়েক জন ক্রেতা বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে মাত্র চার হাজার টাকা পেয়েছি। এর অর্ধেক চলে গিয়েছে মুদির দোকানে জিনিস কিনতে। মাছের বাজারে কিছু তো কাটছাট করতেই হবে।’’

রথতলা বাজার

এই বাজারে রয়েছেন ৪৮ জন মাছ বিক্রেতা। রবিবার ৭-৮ কুইন্ট্যাল মাছ বিক্রি হয়। মাছ ব্যবসায়ী সুজিত শীল জানান, বৃহস্পতিবার প্রায় কিছুই বিক্রি হয়নি। শুক্রবার মাত্র ২০-৩০ টাকা দরে মাছ বিক্রি হয়েছে। মাছ ব্যবসায়ীদের আক্ষেপ, আড়তদারেরা বড় নোট নিতে না চাওয়ায় মাছ তোলা যাচ্ছে না।

নতুনগঞ্জ

শহরের অন্যতম বনেদি এই বাজারে রবিবার সাধারণ ভাবে ৮ কুইন্ট্যালের মতো মাছ বিক্রি হলেও এ দিন তার অর্ধেক হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, দামী মাছের ক্রেতা নেই। যা বিক্রি হচ্ছে, তাও ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা দরের চারাপোনা, ছোট রুই। এই পরিস্থিতির কথা আন্দাজ করা গেল অনুপম দে নামে এক ক্রেতার কথাতেও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের বড় সংসার। হিসেব করে খাচ্ছি।’’

রানিগঞ্জ বাজার

এখানে চেক বা ই-পেমেন্টের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ লেনদেনই হয় নগদ টাকায়। এই বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, মহাজনরা পাঁচশো-হাজারের নোট নিতে চাইছেন না। ভিন্ রাজ্যের মহাজনরাও বাতিল নোটে ‘না’ বলায় অর্ডার দিয়েও তা বাতিল করতে হচ্ছে বলে জানা গেল। এই বাজারে স্থানীয় বিভিন্ন জলাশয় থেকে ৪০-৫০ কুইন্ট্যাল মাছ বাজারে আসে। কিন্তু রবিবার তা এসেছে মাত্র ১০ কুইন্ট্যালের মতো। কেন এমনটা? মাছ বিক্রেতারা জানান, ছোট নোট না থাকায় মাছচাষিদের টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। আবার বাতিল নোট নিতেও চাষিরা অস্বীকার করছেন। মাছ ব্যবসায়ী বৃন্দাবন মণ্ডল, শেখ ইমরানদের আক্ষেপ, ‘‘মাছ ব্যবসার এমন টালমাটাল অবস্থা কবে যে কাটবে, কে জানে!’’

Fish market
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy