Advertisement
E-Paper

কালনায় ছেলেধরার গুজবে গণপিটুনি, হত ১

শহরে ছেলেধরা, জঙ্গি ঢুকে পড়ার রটনা মাসখানেক ধরেই ঘুরছিল ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য়। শুক্রবার সেই গুজব থেকে ধুন্ধুমার বাধল কালনায়। একাধিক জায়গায় ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করা হয় আট জনকে। গণপিটুনিতে মারা যান নদিয়ার রানাঘাটের বাসিন্দা অনিল বিশ্বাস (৪৮)।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১৫
রক্ত পড়ে রয়েছে বারুইপাড়ায়।নিজস্ব চিত্র।

রক্ত পড়ে রয়েছে বারুইপাড়ায়।নিজস্ব চিত্র।

শহরে ছেলেধরা, জঙ্গি ঢুকে পড়ার রটনা মাসখানেক ধরেই ঘুরছিল ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য়। শুক্রবার সেই গুজব থেকে ধুন্ধুমার বাধল কালনায়। একাধিক জায়গায় ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করা হয় আট জনকে। গণপিটুনিতে মারা যান নদিয়ার রানাঘাটের বাসিন্দা অনিল বিশ্বাস (৪৮)। জনতার হাতে ছেলেধরা সন্দেহে আটক হওয়া কয়েকজনকে পুলিশ ছাড়াতে গেলে খণ্ডযুদ্ধ বাধে। পুলিশের পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আহত হন তিন পুলিশকর্মী।

বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘সমাজবিরোধীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এমন গুজব ছড়াচ্ছে। প্রশাসন সর্তক রয়েছে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে সাধারণ মানুষকে আইন হাতে তুলে না নিয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।’’ পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘গুজব যাতে আর না ছড়ায়, তাই প্রতি থানা এলাকাতেই প্রচার শুরু হয়েছে।’’ সব মিলিয়ে এ দিন বিভিন্ন এলাকায় জনতার হাতে আটক হওয়া ১৪ জনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মারধর, ভাঙচুর এবং পুলিশের উপরে হামলার ঘটনায় ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা শহরের বহু বাসিন্দা মাসখানেক ধরে ‘ফেসবুক’ এবং ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এ অন্যদের ‘শেয়ার’ করা ‘পোস্ট’ বা ‘মেসেজ’ পাচ্ছিলেন যে—তাঁদের এলাকায় ছেলেধরা, জঙ্গি বা ডাকাতেরা ঘুরছে। বাড়িতে ঢুকে তারা মহিলাদের শ্লীলতাহানিও করছে। মেসেজের মূল বক্তব্য, ‘ওই সব অপরিচিত লোকেদের থেকে সাবধান হন। বাচ্চাদের সাবধানে রাখুন। সকলের সুবিধার্থে মেসেজটি শেয়ার করুন’।

ঘটনার সূত্রপাত এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ কালনার বারুইপাড়ায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, গাছে পোকার হামলা রোখার কীটনাশক বিক্রি করতে নদিয়ার রানাঘাট থেকে ওই এলাকায় যান সাত জন। কীটনাশক বিক্রি শুরু করতেই তাঁদের ঘিরে ধরেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। পরিচয় ও পেশা জানতে চাওয়া হলে সঙ্গে থাকা ফল-ফুলের ক্যাটালগ এবং ব্যাগে থাকা স্প্রে করার যন্ত্রপাতি দেখান তাঁরা। অভিযোগ, কথা না শুনেই তাঁদের উপরে চড়াও হয় জনতার একাংশ। দু’জন পালান। অন্য পাঁচ জনকে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু হয়। রক্তে ভেসে যায় রাস্তা।

পুলিশের দাবি, খবর পেয়ে এলাকায় ঢুকতে গেলে তাদের বাধা দেয় কিছু লোক। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ একটি কাপড়ের দোকানের পাশ থেকে অচেতন অবস্থায় পাঁচ জনকে উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে কালনা হাসপাতাল, সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানো হয় তাঁদের। সেখানেই মারা যান অনিলবাবু। বারুইপাড়ার ওই দোকানের চারপাশে রক্ত, ব্যাগ, জুতো, কীটনাশকের বোতল এবং কয়েকটি ক্যাটালগ ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এলাকাবাসীর অধিকাংশের মুখে কুলুপ। তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে দু’-এক জন জানান, ওই সাত জনকে ঘিরে দেখতে দেখতে ভিড় জড়ো হয়। কয়েক জন বলতে শুরু করে, ‘‘ওরা নির্ঘাত ছেলেধরা। হোয়াটসঅ্যাপ দেখিসনি। ওদের ছাড়া যাবে না।’’

ভেঙেছে পুলিশের গাড়ি। প্রশাসনের বিলি করা লিফলেট। নিজস্ব চিত্র।

পরে এসডিপিও (কালনা) প্রিয়ব্রত রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতে না করতেই তাঁর মোবাইলে খবর আসে শহরের পীরতলা এলাকায় একটি ক্লাবেও ছেলেধরা সন্দেহে আটকে রাখা হয়েছে তিন যুবককে। তবে তাঁদের গণপিটুনির হাত থেকে বাঁচান এলাকারই কিছু মানুষ। পুলিশের দাবি, পূর্বস্থলীর চুপি এলাকার ওই তিন যুবকের কাছেও ছিল কীটনাশক স্প্রে করার সরঞ্জাম। এর মধ্যেই গোপালবাড়িতে এক মাঝবয়সী ব্যক্তিকে কয়েকটি বাচ্চার সঙ্গে কথা বলতে দেখে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করে কিছু লোক। পরে জানা যায়, তিনি গাছের শিকড়বাকড় বিক্রি করতে এসেছিলেন। তাঁকেও উদ্ধার করে পুলিশ।

একই কারণে ধাত্রীগ্রামের গ্রামকালনায় তুলকালাম বাধে বিকেল ৩টে নাগাদ। স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের আশপাশে পাঁচ মহিলা-সহ ন’জন গৃহস্থালীর টুকিটাকি জিনিস বিক্রি করছিলেন। ছেলেধরা সন্দেহে তাঁদের দলের দুই যুবককে ওই স্কুলেই বেঁধে রেখে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁদের উদ্ধার করতে গেলে পুলিশকে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। ভাঙচুর চালানো হয় পুলিশের গাড়িতে। মারমুখী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে চার রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। এসডিপিও (কালনা) বলেন, ‘‘গুজব যারা ছড়াচ্ছে তাদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। টহলদারি বাড়ানো হয়েছে।’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বারুইপাড়ায় প্রহৃতদের মধ্যে এক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় ছড়ানো খবরের সত্যতা নেই দাবি করে ইতিমধ্যেই প্রচার শুরু করেছে পুলিশ। ছড়ানো হচ্ছে লিফলেটও।

Beaten
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy