একমাত্র শিক্ষক অবসর নিতেই বন্ধ হয়ে গেল স্কুল। আঁধারে পশ্চিম বর্ধমানের জঙ্গলমহলের একঝাঁক পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ। ক্ষোভপ্রকাশ করলেন অভিভাবকেরা। আর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কটাক্ষ করে বলছে, এটাই বাংলার বর্তমান পরিস্থিতি। যদিও সমস্যা জানার পরে আশ্বাসবাণী শোনা গিয়েছে রাজ্যের মন্ত্রীর গলায়।
পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসার মলানদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের একেবারে শেষ প্রান্তে গড়জঙ্গল এলাকা। জঙ্গলের মাঝে রয়েছে আদুরিয়া নামে ছোট্ট গ্রাম। মূলত দলিত সম্প্রদায়ের বাস সেখানে। শিশুদের পড়াশোনার জন্য ছিল একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। তবে মাসখানেক আগে ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের একমাত্র শিক্ষক অবসর নেন। তার পর থেকে আর কোনও শিক্ষক আসেননি। শিক্ষকের অভাবে বন্ধই হয়ে সেই শিক্ষাকেন্দ্র।
ওই শিক্ষাকেন্দ্র থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে রয়েছে মলানদিঘি গ্রাম পঞ্চায়েতের রক্ষিতপুর গ্রাম। সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হচ্ছে মলানদিধির পড়ুয়াদের। কিন্তু জঙ্গল পেরিয়ে ছয় কিলোমিটার দূরে শিশুরা কত দিন পড়াশোনা করতে যেতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান অভিভাবকেরা। তাঁরা জানাচ্ছে, গ্রামের সিংহভাগ মানুষ দিনমজুরির কাজ করে সংসার চালান। তাই কাজ ছেড়ে বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া এবং বাড়ি নিয়ে আসা তাঁদের পক্ষে কঠিন। তা হলে কি পড়াশোনা হবে না তাঁদের ছেলেমেয়েদের? প্রশ্ন তুলেছেন আদুরিয়ার বাসিন্দারা। তাঁরা রাজ্যের পঞ্চায়েত গ্রামোন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের কাছে শিক্ষাকেন্দ্রটি পুনরায় খুলে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন। কাঁকসার বিডিও-র কাছেও ওই একই আবেদন করেছেন।
আরও পড়ুন:
সুমিত্রা রায়, রাজু সোরেনরা বলেন, ‘‘যে দিন শিক্ষক অবসর নিয়েছেন, সে দিন থেকে গ্রামের শিশু শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আশায় ছিলাম, কোনও শিক্ষককে পাঠানো হবে। কিন্তু স্কুল আর খুলল না!’’ সুমিত্রা নামে এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘জঙ্গলে হিংস্র জীবজন্তু রয়েছে। সেই জঙ্গল পেরিয়ে বাচ্চাদের পড়তে পাঠাব কোন সাহসে? আমরা চাই, গ্রামের শিশু শিক্ষাকেন্দ্রটি আগের মতো চলুক।’’
শিক্ষাকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সহ-সভাপতি রমন শর্মার কটাক্ষ, ‘‘শিক্ষকের অভাবে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়, এটা এ রাজ্যেই সম্ভব। এই রাজ্য সরকারের আমলে শিক্ষার হাল এমনই।’’ যদিও রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ আশ্বাস দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগ শুনেছি। কিন্তু ওই শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে মাত্র ১৫ জন পড়ুয়া ছিল। ১৫ জনকে নিয়ে কী ভাবে স্কুল চালানো সম্ভব? তবুও আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’’