অভিযুক্ত রিঙ্কি বিশ্বকর্মা। —ফাইল চিত্র।
এক মহিলার একাধিক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক তাঁরই পরিবারের মধ্যে জানাজানি হওয়ায়, খুন হতে হয় তিন জনকে। পুলিশি তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। গত ১০ নভেম্বর পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা থানার পানাগড়ের রেলপাড়ের সারদাপল্লিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রহস্যজনক ভাবে খুন হয় একই পরিবারের এক বৃদ্ধা, এক যুবক এবং এক যুবতী। ঘটনার দু’মাস পরে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করে কাঁকসা থানার পুলিশ। দুর্গাপুর মহকুমা আদালত তাঁকে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়।
গত ১০ নভেম্বর পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা থানার পানাগড়ের রেলপাড়ের সারদা পল্লিতে রহস্যজনকভাবে খুন হয় একই পরিবারের তিন জন। মৃতেরা হলেন সিমরন বিশ্বকর্মা (২৩), সোনু বিশ্বকর্মা (২১) এবং সীতা দেবী (৭০)। সোনু সম্পর্কে সিমরনের মামা হন এবং সীতা দেবী সিমরনের দিদিমা। খুনের প্রায় দু’মাস পরে পুলিশ মূল অভিযুক্ত রিঙ্কি বিশ্বকর্মাকে গ্রেফতার করে। জানা গিয়েছে, রিঙ্কি সম্পর্কে সিমরনের কাকিমা হন। পুলিশ তদন্ত করে জানতে পেরেছে, রিঙ্কি একাধিক বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেই সম্পর্কের কথা সিমরন জানতে পারে এবং সেই ভয়েই তিনি পরিকল্পনা করে খুনগুলি করান। যাদের সঙ্গে রিঙ্কির বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল তাদেরকে দিয়েই খুন করানো হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান।
পানাগড়ের রেলপাড়ে ধনঞ্জয় বিশ্বকর্মার অনুপস্থিতিতে তাঁর মেয়ে সিমরন, শাশুড়ি সীতা দেবী ও শ্যালক সনু বিশ্বকর্মার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকা জুড়ে। সেই সময়ে ধনঞ্জয় তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে অসমে মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ওই সময়ে ছোট মেয়ে সিমরন তাঁর দিদা এবং মামার সঙ্গে ঝাড়খণ্ড থেকে পানাগড়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। সিমরনের কাকিমা রিঙ্কি বিশ্বকর্মা ও কাকু রাজা বিশ্বকর্মার বাড়িও সিমরনের আত্মীয়ের বাড়ির পাশেই। তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারেন ওই বাড়িতে একটি পোষ্যও ছিল। কিন্তু খুনের ঘটনার সময়ে কোনও চিৎকার করেনি সেই পোষ্যও। এখানেই সন্দেহ হয় পুলিশের। পরিচিত কেউ এই খুনের সঙ্গে যুক্ত মনে করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। সিমরনের দু’টি মোবাইল ফোন খুনি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় সন্দেহ আরও তীব্র হয় পুলিশের। সেই মোবাইল ফোনের সন্ধান করে পুলিশ। তাঁর পাশাপাশি, একাধিক জনকে ধারাবাহিক ভাবে জেরা করা হয়। এমনকি ঝাড়খণ্ডেও এই খুনের হদিস পেতে হানা দেয় পুলিশ। তার পর তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের অনুমান, এই খুনের সঙ্গে রিঙ্কি কোনও ভাবে জড়িত রয়েছেন। রিঙ্কিকে জেরা করে এই খুনের কারণ জানতে পারে পুলিশ। খুনের প্রায় ছয় মাস আগে সিমরন তাঁর কাকিমার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের একাধিক ছবি ও ভিডিয়ো ফাঁস করে দেন পরিবারের মধ্যে। দিনে রাতে অন্য পুরুষও ঢুকছে রিঙ্কির ঘরে তার প্রতিবাদও করেছিলেন সিমরন। এ ছাড়া রিঙ্কির উপর নজরদারি করতে সিমরন তাঁর মোবাইলে একটি বিশেষ সফটওয়্যারের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু পরে তা জেনে যায় অভিযুক্ত ব্যক্তি। এর পরেই সিমরনের উপর ক্ষোভ তৈরি হয় রিঙ্কির। পরিচিত কাউকে দিয়ে সিমরনকে খুনের ছক কষেন তিনি। যাদের সঙ্গে রিঙ্কির বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল তাঁদেরকে দিয়েই খুন করানো হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ রিঙ্কিকে গ্রেফতার করে। বুধবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে আদালত অভিযুক্তের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয়। রিঙ্কিকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে খুব তাড়াতাড়ি এই ঘটনায় আসল খুনিকে গ্রেফতার করতে পারবে বলে পুলিশের অনুমান।
এসিপি কাঁকসা সুমন জয়সোওয়াল বলেন, “খুনের ঘটনায় রিঙ্কি বিশ্বকর্মাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে বিচারক ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy