E-Paper

শহর ঢেকেছে পার্থেনিয়ামে, রোগের আশঙ্কা

আসানসোল পুরসভার ১০৬টি ওয়ার্ডের সর্বত্র এই বিষাক্ত আগাছায় ভরে গিয়েছে বলে জানান বাসিন্দারা। আসানসোল থেকে বরাকর পর্যন্ত জিটি রোডের দু’পাশে পার্থেনিয়ামের জঙ্গল তৈরি হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৪ ১০:০৫
ও

দুর্গাপুরে পার্থেনিয়ামের ঝোপ। নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যে বর্ষা ঢুকতে দেরি আছে। এরই মধ্যে পার্থেনিয়ামের জঙ্গলে ছেয়ে গিয়েছে আসানসোল ও দুর্গাপুর পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা। এমনকি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির আশপাশের এলাকাও পার্থেনিয়াম গুল্ম দখল নিয়েছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক থেকে পরিবেশকবিদরা। অবিলম্বে এই ঝোপ পরিষ্কার করার দাবি তুলেছেন তাঁরা। দুই পুরসভা কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

পার্থেনিয়াম মূলত আগাছা। জানা গিয়েছে, এই গাছের আসল নাম ‘পার্থেনিয়াম হিস্টেরোফরাস’। আদি নিবাস উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং উত্তর-পূর্ব মেক্সিকো। কিন্তু ভারতবর্ষে এই আগাছা আসার ইতিহাস রয়েছে। আসানসোল শহরের পরিবেশবিদ ও কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক অরূপ ঘোষ জানান, কয়েক দশক আগে আমেরিকা থেকে পাঠানো গমের বস্তায় এই গাছের বীজ ভারতে আসে। পার্থেনিয়ামে রয়েছে ‘পার্থেনিন’ নামক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান এবং এক ধরনের টক্সিন বা বিষ। যা ভীষণ ক্ষতিকর।

আসানসোল পুরসভার ১০৬টি ওয়ার্ডের সর্বত্র এই বিষাক্ত আগাছায় ভরে গিয়েছে বলে জানান বাসিন্দারা। আসানসোল থেকে বরাকর পর্যন্ত জিটি রোডের দু’পাশে পার্থেনিয়ামের জঙ্গল তৈরি হয়েছে। চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, “পার্থেনিয়ামের গুল্মের ফুলরেণু শ্বাসকষ্ট জনিত উপসর্গের বাহক। ফুসফুসেরও প্রদাহ হতে পারে। ফলে, সাবধানে থাকা উচিত।” দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার ধীমান মণ্ডল জানান, পার্থেনিয়াম ফুলের রেণু বাতাসে ছড়িয়ে মানব শরীরে ঢুকে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, অ্যালার্জি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগ হতে পারে। গবাদি পশু পার্থেনিয়াম গাছ খেয়ে ফেললে অসুস্থ হতে পারে। অরুণাভ জানান, তাই এই জঙ্গল বেড়ে ওঠার আগেই, তা নষ্ট করে দেওয়া উচিত। একই বক্তব্য আসানসোল পুরসভার মুখ্য চিকিৎসক দীপক গঙ্গোপাধ্যায়েরও। তা হলে আসানসোল পুরসভা কী পদক্ষেপ করছে? দীপক বলেন, “এমনিতেই বিভিন্ন রকমের প্রতিষেধক দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবা সরবরাহে পুরকর্মীরা নাজেহাল। তার উপর পার্থেনিয়ামের জঙ্গল নষ্ট করতে হলে পুরসভার নতুন একটি বিভাগ খুলতে হবে। তা সম্ভব নয়।” তবে তিনি জানান, পুরসভার স্বাস্থ্যদফতর জনসচেতনতা প্রচার করছে। সামাজিক সংগঠনগুলিকেও ইতিবাচক পদক্ষেপ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার হোক বা বিধাননগর, ডিএসপি টাউনশিপ, এমএএমসি টাউনশিপ, ফুলঝোড়, সর্বত্র পার্থেনিয়ামের ঝোপ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। সিটি সেন্টারের বাসিন্দা শুভব্রত রায়, বিধাননগরের অপর্ণা রায়দের দাবি, “পার্থেনিয়াম থেকে শহরকে বাঁচাতে দ্রুত পুরসভাকে এগিয়ে আসতে হবে।” পরিবেশপ্রেমীরা জানান, রেণু যাতে ছড়িয়ে পড়ে বংশবিস্তার করতে না পারে, সে জন্য পার্থেনিয়াম গাছ কেটে মাটিতে পুঁতে দিতে হয়। তা ছাড়া ৪-৫ লিটার জলে এক কেজি নুন ভাল করে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ও পাতায় ছিটিয়ে দিলে দু’দিনের মধ্যে গাছ মারা যায়। তবে সাফাই করার সময় শরীর, হাত, মুখ, নাক ঢেকে রাখা জরুরি। পরিবেশবিদ অরূপের দাবি, এই গাছ থেকে বায়োগ্যাস বা জৈবসার তৈরি করা সম্ভব। পুরকর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই দিকটি ভেবে দেখতে পারেন।

আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, “চিকিৎসক ও পরিবেশ সচেতকদের পরামর্শ মতো দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।” দুর্গাপুর পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য রাখি তিওয়ারি বলেন, “দ্রুত পার্থেনিয়াম সাফাই কর্মসূচি নেওয়া হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durgapur Municipality

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy