Advertisement
E-Paper

নাড়া পোড়ানো বন্ধে পরীক্ষামূলক ক্যাপসুল

কৃষি-কর্তারা জানান, প্রতি পাঁচ লিটার জলের মিশ্রণে অনেকটা জমির নাড়া পচানো যাবে। ১০-১৫ দিনের মধ্যে নাড়া পচে গেলে, জৈব সারে পরিণত হবে। মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ায় জমির উর্বরতা বাড়বে। সে ক্ষেত্রে আলাদা করে তা পোড়ানোর প্রয়োজন হবে না। 

সৌমেন দত্ত ও সুপ্রকাশ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২০ ০১:২৫
বিলি করার আগে। নিজস্ব চিত্র।

বিলি করার আগে। নিজস্ব চিত্র।

গত কয়েকবছর ধরেই পূর্ব বর্ধমান-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে দেখা যাচ্ছে, ধান কাটার পরে, জমিতে গাছের গোড়া (নাড়া) পোড়ানো চাষিদের ‘অভ্যাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি ও পরিবেশ দফতরের আক্ষেপ, এ বছর পুজোর মণ্ডপ থেকে শহর-গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় নাড়া পোড়ানো বন্ধে প্রচার চালানো হয়েছে। ‘নাড়া পোড়ানো প্রতিরোধ দিবস’ পালন করা হয়েছে। তার পরেও চাষিদের পরোয়া নেই। নাড়া পোড়ানো আটকাতে পরীক্ষামূলক ভাবে ১০০ একর জমিতে নাড়া পচানোর বিশেষ ‘ক্যাপসুল’ চাষিদের দেওয়ার কথা ভাবছে জেলা কৃষি দফতর।

রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জাতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের তৈরি ওই ক্যাপসুল পরীক্ষামূলক ভাবে বিনামূল্যে প্রতিটি জেলার চাষিদের দেওয়া হবে। বীরভূম থেকে তা শুরু হয়েছে।’’ রাজ্যের অন্যতম সহ কৃষি অধিকর্তা (তথ্য ও সুরক্ষা) অরিন্দম চক্রবর্তী জানান, ক্যাপসুলটির মধ্যে উপকারী ব্যাকটিরিয়া থাকছে। সেগুলিই নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যবহৃত হলে জমির উর্বরতা বাড়বে।

কৃষি দফতরের দাবি, পরিমাণমতো গুড়ের সঙ্গে সামান্য জল মিশিয়ে পাঁচ মিনিট ফোটাতে হবে। ঠান্ডা হলে একটা আস্তরণ পড়বে। সেই আস্তরণ সরিয়ে পাঁচ লিটার জল, ৫০ গ্রাম ছাতু ও পাঁচটি ক্যাপসুল দিয়ে মাটির পাত্রে পাঁচ দিন রেখে দিলে কঠিন আস্তরণ তৈরি হবে। সেই আস্তরণ ভেঙে নীচের মিশ্রণ জমিতে ছড়িয়ে দিতে হবে। কৃষি-কর্তারা জানান, প্রতি পাঁচ লিটার জলের মিশ্রণে অনেকটা জমির নাড়া পচানো যাবে। ১০-১৫ দিনের মধ্যে নাড়া পচে গেলে, জৈব সারে পরিণত হবে। মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ায় জমির উর্বরতা বাড়বে। সে ক্ষেত্রে আলাদা করে তা পোড়ানোর প্রয়োজন হবে না।

কৃষি দফতরের দাবি, এ বছর অনেক আগে থেকেই নাড়া পোড়ানো নিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। পুজোর সময়েও পূর্ব বর্ধমানে দু’শোটি হোর্ডিং লাগানো হয়েছিল। সাড়ে চারশোর বেশি ব্যানার লাগানো হয়েছে। গ্রামে-গ্রামে চাষিদের নিয়ে বৈঠক করে নাড়া পোড়াতে নিষেধ করছেন কৃষি-সহায়কেরা। প্রদর্শনী করেও দেখানো হচ্ছে, এতে পরিবেশ ও জমির কী-কী ক্ষতি হয়। তার পরেও জেলার বহু জায়গাতেই গত এক মাসে সেটাও চাষিদের বোঝানো হচ্ছে। নাড়া পোড়ালে জমির উর্বরতা কমে, এটা বারবার চাষিদের বলা হচ্ছে। তার পরেও পূর্ব বর্ধমানের মেমারি, দক্ষিণ দামোদরের নানা এলাকা ও মঙ্গলকোটের দিকে জমিতে নাড়া পোড়ানোর প্রবণতা দেখা গিয়েছে।

চাষিদের একাংশের দাবি, বর্তমানে মজুরের অভাবে অনেক জায়গায় বীজ বোনা থেকে ধান কাটা, সবটাই হয় ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টর’ যন্ত্রের মাধ্যমে। কিন্তু যন্ত্রে ধান কাটার পরে, অপেক্ষাকৃত বড় গোড়া পড়ে থাকে জমিতে। ধান ঝাড়ার পরে, প্রচুর টুকরো খড়ও পড়ে থাকে। এ সব সাফ করার লোক মিলছে না। আবার বিকল্প পদ্ধতিতে জৈব সার তৈরি করা গেলেও তা সময়সাপেক্ষ। জমিতে আগুন দিলে সময় ও খরচ, দুই-ই বাঁচে, দাবি তাঁদের। মন্তেশ্বেরে আবুল কালাম, ভাতারের নিত্যানন্দ সামন্ত, মেমারির দীপ রায়, রায়নার তমাল সাঁই-সহ জেলার নানা প্রান্তের চাষিদের দাবি, ‘‘আগে তো পোকামাকড় মারতে আগুন দেওয়াই রীতি ছিল। আমাদের বাবা-দাদারাও তা-ই করেছেন। এতে জমি ভাল হয়।’’

যদিও চাষিদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও অবৈজ্ঞানিক বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৌশিক ব্রহ্মচারী বলেন, “নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সালফার-সহ সতেরোটি মৌল গাছের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এগুলি গাছের মধ্যেই থাকে। নাড়া পোড়ানোর ফলে, ওই সব মৌল বিষাক্ত গ্যাসে পরিণত হয়ে বাতাসে মিশছে।’’ আর এ থেকেই দূষণ বাড়ছে, জানাচ্ছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষক অপূর্বরতন ঘোষ। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ নীলাদ্রি হাজরার মতে, ‘‘আগুন দিলে জমির নরম মাটির সঙ্গে উপকারী পোকা-প্রাণী, জীবাণু ও কেঁচোও নষ্ট হয়ে যায়। চাষের ক্ষতিই হয়।’’ জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চাষের জন্য জমির উপরি ভাগের ছ’ইঞ্চি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগুনে সব থেকে ক্ষতি হয় জমির এই অংশেরই। এর ফলে, জমি বন্ধ্যা পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।’’

Agriculture department Capsules
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy