Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Corruption

দুর্নীতি, জালিয়াতির অভিযোগে এফআইআর দায়ের রায়নার এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

২০১৯ সালে প্রশান্ত দাস বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিদ্যালয়টি সুনাম খোয়াতে শুরু করে বলে অভিযোগ।

—প্রতীকী ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
রায়না শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:৫১
Share: Save:

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ড নিয়ে শোরগোল অব্যাহত রাজ্যে। দুর্নীতিতে নাম জড়ানোয় বহু শিক্ষকের যেমন চাকরি চলে গিয়েছে, তেমনই শ্রীঘরে ঠাঁই হয়েছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী-সহ শিক্ষা দফতরের একাধিক কর্তার। এই আবহে বেনজির আর্থিক দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগে এফআইআর দায়ের হল পূর্ব বর্ধমানের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। রায়না ২ নম্বর ব্লকের চকচন্দন দুর্গাদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই প্রধান শিক্ষকের নাম প্রশান্ত দাস। স্কুল পরিদর্শকের সই জাল করে সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা-সহ পড়ুয়াদের পোশাক কেনার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করার পাশাপাশি ওই প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে শিক্ষা দফতর। জেলার মাধবডিহি থানার পুলিশ কাঁচড়াপাড়ার বাসিন্দা ওই শিক্ষকের নাগাল এখনও পায়নি। তারই মধ্যে ওই শিক্ষক বর্ধমান জজ কোর্টে আগাম জামিনের যে আবেদন করেছিলেন, তা খারিজ হয়ে গিয়েছে।

চকচন্দন দুর্গাদাস উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। ২০১৯ সালে প্রশান্ত দাস বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিদ্যালয়টি সুনাম খোয়াতে শুরু করে বলে অভিযোগ। অভিভাবকদের দাবি, প্রশান্তের করা দুর্নীতি ও জালিয়াতির দরুণ স্কুলে পঠনপাঠন থেকে শুরু করে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন সবই থমকে গেছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে মিড-ডে মিল। এমনকি স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন পর্যন্ত হয়নি বলে অভিযোগ সহ-শিক্ষক ও অভিভাবকদের। এ সব অভিযোগের তদন্তে (রায়না ৪ চক্রের) স্কুলপরিদর্শক সুশান্ত ঘোষ গত ১৭ অগস্ট স্কুলে গেলে তাঁকে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। ওই দিনই সব অভিযোগ মেনে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের ইঙ্গিত দিয়ে রাখেন স্কুলপরিদর্শক।

দিন কয়েক আগে রায়না-৪ নম্বর চক্রের এসআই সুশান্ত ঘোষ মাধবডিহি থানায় চকচন্দন দুর্গাদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত দাসের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। তাতে তিনি প্রতারণা, স্কুলের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নষ্ট, ব্যাঙ্কের সঙ্গে জালিয়াতি করার অভিযোগ করেন। এসআই সুশান্ত ঘোষ পুলিশকে জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি চেকে, স্কুলের গৃহীত সিদ্ধান্তের খাতায় তাঁর সই জাল করা হয়েছে। এ ছাড়াও চারটি চেকে তাঁর সই জাল করে টাকা তোলা হয়েছে। এমনকি পড়ুয়াদের পোশাকের জন্যে চেকে ১০০০ টাকা লেখা থাকলেও জালিয়াতি করে এক বার ৬১ হাজার টাকা, আর একবার ৭১ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। একই রকম অন্য ক্ষেত্রেও ধরা পড়েছে। ২০২১ সালের ২২ মার্চ সর্বশিক্ষা মিশনের অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬১০ টাকা তোলার জন্যে চেক লেখা হয়েছিল। কিন্তু দু’দিন পর ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ৯২,৬১০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এ সব ছাড়াও ২০২০ ও ২০২১ আর্থিক বছরেও সর্বশিক্ষা মিশনের তহবিল নিয়ম মেনে খরচ হয়নি বলে পুলিশের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন এসআই।

এসআই সুশান্ত ঘোষ জানিয়েছেন, চলতি বছরের ৩ জুলাই থেকে প্রধান শিক্ষক ‘বেপাত্তা’। ই-মেলে তাঁকে তিন বার চিঠি দেওয়া হয়, হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগেরও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। স্কুলে যোগ দেওয়ার জন্যে প্রধান শিক্ষককে বলা হলেও তিনি তা করেননি। সে জন্যে প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের একজন শিক্ষককে টিচার-ইন চার্জের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্কুলের শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ‘‘আমরা চাই পড়ুয়া এবং স্কুলের স্বার্থে প্রশাসন ও শিক্ষা দফতর যথাযথ ব্যবস্থা নিক। যাতে করে অচলাবস্থা কাটিয়ে স্কুলটি পুণরায় পূর্বের গরিমা ফিরে পায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE