Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

নিখোঁজ ছেলের খোঁজে রোজ স্টেশনে বৃদ্ধা

নিত্য যাত্রী থেকে ফেরিওয়ালা সকলেই দেখেন এক বৃদ্ধা হাতে ছবি নিয়ে কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। একটু নজর করলেই জানা যায়, কালনা স্টেশনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ঘুরে বেড়ানো ওই বৃদ্ধা তাঁর হারানো ছেলের সন্ধান চাইছেন। আশির দোড়গড়ায় পৌঁছনো পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বাসিন্দা হানিফা বিবির এটাই প্রতিদিনের কাজ।

যাত্রীদের ছেলের ছবি দেখাচ্ছেন হানিফা বিবি। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।

যাত্রীদের ছেলের ছবি দেখাচ্ছেন হানিফা বিবি। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৫ ০১:৫৮
Share: Save:

নিত্য যাত্রী থেকে ফেরিওয়ালা সকলেই দেখেন এক বৃদ্ধা হাতে ছবি নিয়ে কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। একটু নজর করলেই জানা যায়, কালনা স্টেশনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ঘুরে বেড়ানো ওই বৃদ্ধা তাঁর হারানো ছেলের সন্ধান চাইছেন। আশির দোড়গড়ায় পৌঁছনো পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বাসিন্দা হানিফা বিবির এটাই প্রতিদিনের কাজ।

শনিবার সকাল ১১টা। একটি লোকাল ট্রেনে পূর্বস্থলী থেকে কালনায় নামলেন হানিফা। কিছুক্ষণের বিশ্রামের পরেই শুরু হল তাঁর খোঁজার কাজ। ব্যাগের ভেতর থেকে পাসপোর্ট সাইজের একটি ছবি বের করে জনে-জনে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘আমার ছেলেকে দেখেছেন কোথাও?’’ ব্যস্ত মানুষজন কেউ বা শুধুই চোখ বুলিয়ে চলে যান। অনেকে আবার ছবির তলায় লেখা বৃদ্ধার ফোন নম্বরটি টুকে রাখেন। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো ট্রেনের জানালা, দরজার কাছে গিয়েও একই জিজ্ঞাসা করে চলেন বৃদ্ধা।

ফিরতি ট্রেন ধরার আগে বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হারানো ছেলের নাম রবিউল মণ্ডল। রবিউল হানিফার সাত ছেলেমেয়ের মধ্যে সবথেকে ছোট। ছেলের কথা উঠতেই হানিফা বলেন, ‘‘ছোট থেকেই সামান্য অপ্রকৃতস্থ ছিল রবিউল। সারাদিন ও আমার সঙ্গেই থাকত।’’ নিখোঁজ ছেলের গায়ের রং, স্বভাব ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য দিয়ে রেলপুলিশ, সিআইডি, স্থানীয় থানা-সহ বিভিন্ন জায়গায় দরবার করেছেন বৃদ্ধা। কিন্তু কোনও মেলেনি।

কী ভাবে ছেলে নিখোঁজ হলেন? বৃদ্ধা জানান, ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর ছেলেকে নিয়ে পাটুলি থেকে আজিমগঞ্জ যাচ্ছিলেন। কাটোয়া স্টেশনে ছেলে শৌচাগারে যাওয়ার সময় আচমকা ট্রেন ছেড়ে দেয়। হানিফা চিৎকার করলেও ভিড় ট্রেনে আর উঠতে পারেননি বছর সাতাশের রবিউল। এরপর ট্রেন দাঁড়ায় চৌরিগাছা স্টেশনে। ট্রেনের অন্য কামরাগুলিতে খোঁজও চালান বৃদ্ধা। তবে ছেলের সন্ধান মেলেনি।

নাগাড়ে কথা বলতে বলতে খানিকটা হাঁপ ধরে বৃদ্ধার গলায়। খানিকটা হতাশ হয়েই যেন বলেন, ‘‘অনেকেই আজকাল বলে ছেলে কোনওদিন আর ফিরবে না। অন্য ছেলে-মেয়েরাও হাল ছেড়ে দিয়েছে। তবে আমি এখনও খুঁজে চলেছি।’’ ট্রেন আসার সময় হয়ে আসে। থলে হাতে নিয়ে বদ্ধা হেঁটে যান ট্রেন ধরতে। ফের কাল নিখোঁজ ছেলের সন্ধানে বেরোতে হবে যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kalna rail train CID police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE