Advertisement
E-Paper

ভাঙন কেন, চলছে তিন মতের দ্বন্দ্ব 

শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত এলাকাতেও কুঠিডাঙা থেকে শ্রীরামপুর মানা পর্যন্ত ভাঙন-পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে জানান এলাকাবাসী।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৩৬
এ ভাবেই ভাঙছে দামোদরের পাড়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

এ ভাবেই ভাঙছে দামোদরের পাড়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ

দামোদরের পাড়ে এই এলাকাগুলিতে কোথায় ঘাট, কোথায় জমি-জিরেত, সবই যেন গুলিয়ে যায় এলাকাবাসীর। আর ‘নদীর জল’-এর ‘গল্প’ এখানে শুধুই ভাঙনের, বিপন্নতার, জানান পশ্চিম বর্ধমানের অণ্ডাল ব্লকের মদনপুর, রামপ্রসাদপুর এবং শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা। এ দিকে, এই ভাঙন কেন, তা নিয়েও নানা মত উঠে এসেছে।

মদনপুর, পুবরার বাসিন্দারা জানান, নদীর পাড়ে তাঁদের এক সময় জমি ছিল। কিন্তু এখন সেই কয়েকশো একর জমিতে ক্রমাগত ঝাপটা দিচ্ছে দামোদর। চাষাবাদ দূর-অস্ত‌্। অণ্ডাল পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য তথা মদনপুর গ্রামের বাসিন্দা ঘনশ্যাম দেওয়াসি বলেন, ‘‘কয়েকশো একর জমি জলের তলায়। মদনপুর গ্রামের শ্মশান থেকে বাসকা প্রাথমিক স্কুল পর্যন্ত এলাকায় একশো ফুট দূরে দামোদর বয়ে চলেছে।’’

এ দিকে, শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত এলাকাতেও কুঠিডাঙা থেকে শ্রীরামপুর মানা পর্যন্ত ভাঙন-পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে জানান এলাকাবাসী। এর ফলে, কুঠিডাঙা, ডাঙালপাড়া, বাউড়িপাড়া বিপন্ন হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা তপন দাস, দীপক দালাল, অখিল মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘প্রতি বছর ধান, আনাজ চাষে ক্ষতি হচ্ছে। বর্ষায় ফসল ডুবছে। ২০১৬-য় প্রবল বৃষ্টির পরে শ্রীরামপুর গ্রাম তিন দিন জলবন্দি ছিল।’’

পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের কো-অর্ডিনেটর কাঞ্চন মিত্র জানান, নদের অদূরে তিন বছর আগে অণ্ডাল ব্লক প্রশাসন ইকো পার্ক তৈরির কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু ফি বছর বর্ষায় নদের জল পার্কে ঢুকে যাওয়ায় অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, শ্রীরামপুর মানার বাসিন্দাদের প্রায় প্রতি বছরই অন্যত্র সরে যেতে হয়। ভাঙন এখনই না আটকানো গেলে ভিটে-মাটি সবই হারাতে হবে বলে আশঙ্কা শ্রীরামপুর ও কুঠিডাঙা গ্রামের বাসিন্দাদের।

কিন্তু এই ভাঙনের কারণ নিয়ে দ্বন্দ্ব বেধেছে নানা পক্ষে।

প্রথম মত: ব্লক প্রশাসনের ‘উদাসীনতা’। মদনপুর, রামপ্রসাদপুর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা রবীন মিশ্র, চন্দ্রভানু দত্তদের বক্তব্য, ‘‘বারবার পাড় বাঁধানোর জন্য ব্লক প্রশাসনকে বলা হলেও রামপ্রসাদপুরের ভালুকসোদা থেকে বাসকা পর্যন্ত মোটে কয়েকশো মিটার এলাকায় সেই কাজ হয়েছে। কিন্তু শ্মশানকালী মন্দির থেকে প্রাথমিক স্কুল পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার এলাকা বাঁধানো দরকার।’’ ব্লক প্রশাসনের কাছে বারবার পদক্ষেপ করার জন্য আর্জি জানানো হয়েছে বলে দাবি কাঞ্চনবাবুরও।

ভাঙন নিয়ে

• সমস্যা: অণ্ডাল ব্লকের মদনপুর, রামপ্রসাদপুর এবং শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতে।

• প্রভাব: চাষাবাদে, জনজীবনে।

• এলাকাবাসীর দাবি: পাড় বাঁধানোর দাবি জানিয়েও লাভ হয়নি। ফলে, বাড়ছে ভাঙন।

• অন্য মত: বালির ‘অবৈধ’ কারবার। বদলেছে দামোদরের গতিপথ। বাড়ছে ভাঙন।

• ব্লক প্রশাসনের মত: ডিভিসি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জল ছাড়ার জন্য ভাঙন হচ্ছে।

• ডিভিসি বলছে: সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের নির্দেশিকা মেনেই জল ছাড়া হয়।

দ্বিতীয় মত: বালির ‘অবৈধ’ কারবার। অণ্ডাল পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য ঘনশ্যাম দেয়াসির অভিযোগ, ‘‘ব্লক প্রশাসনের নজরদারির অভাবে নদের পাড় ঘেঁষে অবৈধ ভাবে যন্ত্রের সাহায্যে বালি তোলা চলে। তার জেরে দামোদরের গতিপথ কিছুটা পাল্টে গিয়েছে।’’

তৃতীয় মত: যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বিডিও (অণ্ডাল) ঋত্বিক হাজরার বক্তব্য, “রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন দফতরের কাছে পাড় বাঁধানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আপাতত, অণ্ডালে অবস্থিত ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই পুকুরের (অ্যাসপন্ড) ছাইয়ের সঙ্গে মাটি ফেলে অস্থায়ী বাঁধ দেওয়া হবে। তবে ভাঙন বর্ষার জলে নয়, বরং ডিভিসি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জল ছাড়ার জন্য হচ্ছে।’’ যদিও ডিভিসি-র সিএসআর বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার সঞ্জিত শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘জল বৈজ্ঞানিক ভাবেই ছাড়া হয়। জল ছাড়া ডিভিসি-র উপরে নির্ভর করে না। সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের নির্দেশিকা মেনেই তা করা হয়।’’

বালির অবৈধ কারবারের অভিযোগে প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়ার জন্য বিএলএলআরও (অণ্ডাল) শান্তনু মাঝির বক্তব্য, ‘‘বালি চুরি আটকাতে পাঁচটি ঘাটকে লিজ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, গত দেড় বছরে মোট সাড়ে ছ’কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। বছরখানেকের মধ্যে অন্তত ১০ বার বালি চুরি আটকাতে অভিযান হয়েছে। এই মুহূর্তে বালি চুরি বা এর জন্য পাড় ভাঙছে, এমন অভিযোগ মেলেনি।’’

Erosion Damodar Damodar River Andal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy