তছনছ হয়ে গিয়েছে সৈকত। —নিজস্ব চিত্র।
পোর্ট ব্লেয়ারের রোদ ঝলমল আকাশ দেখে শনিবার স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন দম্পতি। গত কয়েক দিন আবহাওয়ার মতিগতি দেখে আর রাজ্যের আমলাদের উদ্বিগ্ন ফোন পেতে পেতে বুঝতে পারছিলেন না, ফিরবেন কী ভাবে। নগদ ফুরিয়ে আসায় নিতে হল ধারও।— বেড়াতে গিয়ে প্রায় সাড়ে তিন দিন ধরে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছিল হ্যাভলকে আটকে পড়া কালনার মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া ও তাঁর স্ত্রী সুদীপ্তাদেবীর।
শনিবার পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ফোনে মহকুমাশাসক জানান, বেশ কয়েক দিনের ছুটি জমে থাকায় গত ৩ ডিসেম্বর আন্দামান বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। হ্যাভলকে তাঁরা ওঠেন সমুদ্র লাগোয়া একটি রিসর্টে। পরিকল্পনা ছিল, ৭ ডিসেম্বর কলকাতা ফেরার।
কিন্তু সব ভেস্তে দিল ৬ ডিসেম্বরের দিনটা। আচমকা শুরু হল প্রবল ঝড়-বৃষ্টি। ফুঁসতে থাকে সমুদ্রও। আশেপাশের বেশ কয়েকটি রিসর্টে জল ঢুকে পড়ে। নীতিনবাবু বলেন, ‘‘চোখের সামনে দেখছি ঝড়ের তাণ্ডবে গাছগুলো ভেঙে পড়ছে। গাড়ির উপরে গাছ ভেঙে জখম হন বেশ কয়েক জন। বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত পরিবহণ ব্যবস্থা।’’ তিনি জানান, ওই রাত থেকেই শুরু হয় নগদ টাকা নিয়ে সমস্যা। এটিএমে গিয়েও লাভ হয়নি বলে জানান মহকুমাশাসক। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের সংযোগ চলে যাওয়ায় সমস্যা আরও বাড়ে।
শেষমেশ সিংহানিয়া দম্পতির পাশে দাঁড়ান স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। তাঁর কাছ থেকেই টাকা ধার করতে হয় বলে জানান নীতিনবাবু। এই পরিস্থিতিতে খাবারের দাম আকাশ ছোয়ায় সমস্যা বাড়ে। ৬ থেকে ৯ ডিসেম্বর বিকেল পর্যন্ত শুধু ভাত-ডাল খেয়েই কাটাতে হয়েছে বলে জানান তিনি। কোনও ক্রমে আলু মিললেও, এক কেজির দাম ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা!
তবে নীতিনবাবু জানান, প্রাথমিক ধাক্কা সামলে কাজে নেমে পড়ে স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসনের তরফে সব হোটেলের কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয় ৭, ৮ ডিসেম্বরের জন্য পর্যটকদের কাছে যেন টাকা না নেওয়া হয়। শেষমেশ শুক্রবার সন্ধ্যায় বায়ুসেনার হেলিকপ্টার মহকুমাশাসক ও তাঁর স্ত্রী’কে উদ্ধার করে পোর্ট ব্লেয়ারে পৌঁছে দেয়। সব ঠিক থাকলে আজ, রবিবার দুপুরে কলকাতার বিমান ধরবেন বলে জানান তিনি।
উল্টো দিকে, মহকুমাশাসকের হ্যাভলকে আটকে পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই কালনায় প্রশাসনের কর্তারাও দুঃশ্চিন্তায় পড়েন। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বিডিও পুষ্পেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভীষণ চিন্তায় ছিলাম। এখন অবশ্য ভাল আছেন জানিয়ে মেসেজ পাঠিয়েছেন স্যার।’’ পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বিডিও সোমনাথ দে’ও বলেন, ‘‘১৪ ডিসেম্বর পাখিরালয়ের উদ্বোধন হবে। এখন মনে হচ্ছে, কাজ পরে হবে। আগে ওঁরা ভালই ভালই ফিরে আসুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy