প্রায় তিন বছর পরে, বর্ধমান পুরসভায় গঠিত হল প্রশাসকমণ্ডলী। পুর-বোর্ডের মেয়াদ ফুরোলেও ভোট না হওয়ায় এত দিন এই পুরসভায় প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন মহকুমাশাসক (বর্ধমান দক্ষিণ)। মঙ্গলবার দুপুরে মহকুমাশাসক তীর্থঙ্কর বিশ্বাস পুরসভার দায়িত্বভার তুলে দিলেন প্রশাসক প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। কালনায় পুরসভার প্রশাসক পদে রদলবদল হয়েছে। বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগের বদলে পুর-প্রশাসক করা হয়েছে বিদায়ী কাউন্সিলর আনন্দ দত্তকে। এ ছাড়া, মেমারি, দাঁইহাট ও কাটোয়ায় পুরসভায় প্রশাসকমণ্ডলী গঠন করা হলেও প্রশাসক পদে বদল হয়নি। তবে মেমারিতে সুপ্রিয় সামন্তকে সরিয়ে কৃষ্ণপদ বিশ্বাসকে উপ-প্রশাসক করা হয়েছে। এরই মধ্যে, বর্ধমান পুরসভায় আইনুল হককে উপ-প্রশাসক করা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কিছু লোকজন পুরসভায় বিক্ষোভ দেখান।
২০১৩ সালে সিপিএমকে সরিয়ে বর্ধমান পুরসভায় ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। শাসক দল সূত্রের খবর, তখন থেকে পুরসভার ‘ক্ষমতার কেন্দ্রে’ ছিলেন বর্তমান বিধায়ক খোকন দাস। ২০১৮ সালের অক্টোবরে মেয়াদ শেষের পরেও পুরসভার অন্দরে তাঁর প্রভাব ছিল। কিন্তু এ বার বর্ধমান পুরসভার যে প্রশাসকমণ্ডলী ঘোষণা হয়েছে, সেখানে দলে খোকনবাবুর বিরোধী-গোষ্ঠীর লোক বলে পরিচিতেরাই দায়িত্ব পেয়েছেন বলে তৃণমূল সূত্রের দাবি। প্রশাসক প্রণববাবুর সঙ্গে উপ-প্রশাসক করা হয়েছে প্রাক্তন পুরপ্রধান আইনুল হক এবং সদ্য প্রাক্তন জেলা যুব সভাপতি রাসবিহারী হালদারের মা আল্পনা হালদারকে। কয়েকবছর রাজনীতি থেকে দূরে থাকা প্রণববাবুকে প্রশাসক করা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে শাসক দলের অন্দরে।
দল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে কংগ্রেসের হয়ে প্রথম বার কাউন্সিলর হন প্রণববাবু। ১৯৯৮ সালে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে কাউন্সিলর হয়ে পুরসভার বিরোধী দলনেতা হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে পুরভোটে টিকিট না পাওয়ার পর থেকে ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিলেন। তবে রাসবিহারী হালদার দলের জেলা যুব সভাপতি হওয়ার পরে, তাঁকে ফের সভা-সমিতিতে দেখা যাচ্ছিল। তৃণমূলের একাংশের দাবি, সম্প্রতি দল তাঁকে জেলার সহ-সভাপতি করে। প্রশাসক পদ নিয়ে বিতর্ক এড়াতেই শহরের পুরনো নেতাকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূলের অনেকের ধারণা।
বাম আমলে বর্ধমানের পুরপ্রধান আইনুল হককে উপ-প্রশাসক করা নিয়ে তৃণমূলের কিছু কর্মী এ দিন ক্ষোভ জানান। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রবের দাবি, ‘‘সিপিএম আমলে পুরপ্রধান থাকা আইনুল হক সম্প্রতি আমাদের দলে যোগ দিয়েই উপ-প্রশাসক হলেন। তাঁকে মানা আমাদের মতো পুরনো কর্মীদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’’ আইনুল এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘সরকার দায়িত্ব দিয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্প ঠিক ভাবে রূপায়ণের চেষ্টা করব।’’
এ দিনই কালনা পুরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব নেন আনন্দ দত্ত। পাঁচ জনের প্রশাসকমণ্ডলীতে উপ-প্রশাসক হয়েছেন রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। আনন্দবাবু ১৯৯০ সাল থেকে কালনার কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘দায়িত্ব সামলাতে অসুবিধা হবে না।’’ বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘নতুন প্রশাসকমণ্ডলীকে অভিনন্দন জানিয়েছি। পুরসভার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছি।’’ মেমারি পুরসভায় স্বপন বিষয়ী প্রশাসক থাকলেও উপ-প্রশাসক পদ থেকে সরানো হয়েছে বিদায়ী কাউন্সিলর সুপ্রিয় সামন্তকে। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে মতুয়া সম্প্রদায়ের মেমারির সভাপতি কৃষ্ণপদ বিশ্বাসকে।
কাটোয়ায় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কেই পুর-প্রশাসক রাখা হয়েছে। উপ-প্রশাসক হয়েছেন প্রাক্তন কাউন্সিলর সুদীপ্তময় ঘোষ ও সুফল রাজোয়ার। প্রশাসকমণ্ডলীতে আনা হয়েছে বিমা নিগমের প্রাক্তন কর্তা অম্বিকাপ্রসন্ন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দাঁইহাটে পাঁচ জনের প্রশাসকমণ্ডলীতে প্রশাসক ও উপ-প্রশাসক পদে পুরনোদেরই রাখা হয়েছে।