সময়টা অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। বাংলায় বর্গী আক্রমণের সময়। তখনই একবার শারদোৎসবের সময়ে দাঁইহাটের সমাজবাড়ি এলাকায় গঙ্গাতীরে দেবী আরাধনা বসেছিলেন মরাঠা বীর ভাস্কর পণ্ডিত। জনশ্রুতি, আরাধনা শেষ হওয়ার আগেই ভাস্কর পণ্ডিত আক্রান্ত হন। সেই শুরু। তারপরে থেকে এ পর্যন্ত দুর্গা-আরাধনায় আর বাধা পড়েনি। এখনও সেই পুজোকে ঘিরে দাঁইহাটবাসীর উৎসাহ নজরে পড়ার মতো।
জনশ্রুতি অনুযায়ী, ১৭৩৬ সালে বর্ধমানের মহারাজা কীর্তিচন্দ্র ওই এলাকায়, গঙ্গার পাড়ে বিঘা দুয়েক এলাকার উপরে একটি শিবমন্দির তৈরি করেন। পরে বাংলায় বর্গী আক্রমণের সময়ে ভাস্কর পণ্ডিত এই এলাকাতেই ঘাঁটি তৈরি করেন এবং ওই মন্দির লাগোয়া চণ্ডীমণ্ডপে সোনার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে শুরু করেন দেবীর আরাধনা। এরপরের ইতিহাস নিয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা রয়েছে। কেউ বলেন, নবাব আলিবর্দির গুপ্তচরদের আক্রমণে নদীতেই প্রতিমা-সহ সলিল সমাধি হয় মরাঠা দস্যুর। কারও মতে আবার, নবাবের আমন্ত্রণে ভাস্কর পণ্ডিত কোশিগ্রামে যান এবং সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
লোক ইতিহাস যাই হোক না কেন, দুর্গাপুজোর সেই শুরু বলে জানান দাঁইহাটের প্রবীণ বাসিন্দারা। মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত প্রশান্ত ভট্টাচার্য়ের মতে, সেই সময় থেকে এ যাবৎ বংশ পরম্পরায় ভট্টাচার্য বাড়ির সদস্যরা এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন। তিন দশক আগে মন্দিরের এক বার সংস্কার হয়। বর্তমানে কিশোর কিশোরী তত্ত্বাবধায়ক সমিতি ট্রাস্ট পুজোর যাবতীয় দায়িত্ব সামলায়।
ইতিহাসের এই পুজো ঘিরে দাঁইহাটবাসীর উৎসাহ এ বারেও ছিল নজরকাড়া। অষ্টমীর কুমারী পুজো বা নবমীর খিচুড়ি ভোগ বিতরণের সময়ে মন্দির চত্বরে ভক্ত-সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। আজ, দশমীতে রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে এলাকারই খুদের দল। আজ, স্থানীয় পুকুরে দেবীর বিসর্জনের পরে কাঠামোটি রাখা হবে চণ্ডীমণ্ডপে।