E-Paper

উদ্ধার হয়নি আমানত,  ব্যাখ্যা চাওয়ার সিদ্ধান্ত

মামলা এখন সিআইডি-র হাতে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, যে সই দু’টিতে ওই স্থায়ী আমানত ভেঙে টাকা পাঠানো হয়েছিল, সেগুলি জাল।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫১
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।

খোয়া যাওয়ার মাস পাঁচেকের মধ্যে তিন ধাপে বর্ধমান পুরসভার টাকা ফিরিয়ে দিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। ওই ব্যাঙ্কেরই বর্ধমানের জেলখানা শাখা থেকে স্থায়ী আমানত ভেঙে খোয়া যাওয়া প্রায় দু’কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ হয়নি বলে অভিযোগ। ওই টাকা উদ্ধারে সম্প্রতি আদালতে মামলা করেছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সপ্তাহ দুয়েক আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়িকিউটিভ কমিটিতে (ইসি) রিপোর্ট জমা পড়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে একটি ‘চক্রের’ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, টাকা খোয়া যাওয়া নিয়ে ফিনান্স অফিসারের কাছ থেকে বিশদ রিপোর্ট চাওয়া হবে। মূল অভিযুক্ত, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরের কর্মী ভক্ত মণ্ডলের খোঁজ পায়নি সিআইডি। ইসিতে ভক্তকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করার প্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পুরসভার টাকা খোয়া যাওয়া নিয়ে গত বছর অগস্টে বর্ধমান থানায় অভিযোগ হয়। সেই মামলার সূত্র ধরে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সপ্তাহখানেক আগে খোয়া যাওয়া ১ কোটি ৪৩ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে। তিনটি ধাপে তা ফেরানো হয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্থায়ী আমানত ভেঙে ১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে বলে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানায়। ২০২৩ সালের অগস্টে দু’ধাপে ওই টাকা তৃতীয় পক্ষের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছিল বলে জানা গিয়েছিল। এই মামলা এখন সিআইডি-র হাতে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, যে সই দু’টিতে ওই স্থায়ী আমানত ভেঙে টাকা পাঠানো হয়েছিল, সেগুলি জাল।

একই ব্যাঙ্ক বর্ধমান শহরের দু’টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে দু’রকম ভূমিকা নিল কেন? ব্যাঙ্কের এক কর্তার কথায়, “পুরসভার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের গাফিলতিতেই টাকা খোয়া গিয়েছে বলে মনে করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক তা মনে করছে না। স্থায়ী আমানত ভেঙে টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের পদ্ধতিগত কোনও গাফিলতি নেই বলেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ মনে করছেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতরের নির্দেশেই ওই টাকা ছাড়া হয়েছে।” টাকা খোয়া যাওয়ার খবরের পরেই তৎকালীন অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য একাধিক কমিটি গঠন করেন। সেই সব কমিটির রিপোর্ট ইসি-তে পেশ হয়। সেখানে বিশদ আলোচনার পরে বোঝা যায়, স্থায়ী আমানত ভেঙে টাকা তৃতীয় পক্ষের অ্যাকাউন্টে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটা ‘চক্র’ কাজ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বৈঠকে ইসি-র এক সদস্য প্রশ্ন তোলেন, স্থায়ী আমানত ভাঙার সময়ে ব্যাঙ্ক নিশ্চয় ফোন করবে, সম্মতি নেবে। তাহলে চুরি আটকানো গেল না কেন? তাই ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ফিনান্স অফিসারের কাছে বিশদ রিপোর্ট চাওয়া হবে। চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে সেই ব্যাখা জমা দিতে হবে। তাতে ইসি সন্তুষ্ট না হলে আইন মেনে পরবর্তী ব্যবস্থা হবে। ফিনান্স অফিসার সৌগত চক্রবর্তী শুধু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরের বিষয়ে কোনও কথা বলব না।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী আমানত থেকে টাকা খোয়া যাওয়ার এই ঘটনায় উচ্চপদস্থ কর্তারা জড়িত, এমন অভিযোগে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন প্রাক্তন আধিকারিক দেবমাল্য ঘোষ। সিআইডি আদালতে জানিয়েছে, ৪০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করা হয়েছে। মূল ৯ জন অভিযুক্তের মধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে ইডি-ও অনুসন্ধান করছে। গত জুন মাসে ইডি আদালতে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছিল। আদালত নতুন করে আর একটি রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy