Advertisement
১৯ মে ২০২৪
লক্ষ্মী পুজোয় আশা বেনায়

উন্নয়নের পথে ঘুচবে ‘ভূতের গ্রামে’র তকমা

ন্যূনতম পরিকাঠামো না থাকার কারণে এক সময় সকলে মিলে গ্রাম ছেড়েছিলেন। আর এখন জমি কেনার জন্য আসছেন কেউ কেউ।

শহরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে রাস্তা। নিজস্ব চিত্র।

শহরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে রাস্তা। নিজস্ব চিত্র।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৪৬
Share: Save:

ন্যূনতম পরিকাঠামো না থাকার কারণে এক সময় সকলে মিলে গ্রাম ছেড়েছিলেন। আর এখন জমি কেনার জন্য আসছেন কেউ কেউ। উন্নয়নের এই পথেই আজ, শনিবার লক্ষ্মীপুজোর প্রস্তুতি নিতে নিতে ‘ভূত তাড়ানো’র স্বপ্ন দেখছেন কুলটির বেনা গ্রামের ‘একদা বাসিন্দা’রা। প্রত্যেকেরই আশা, ফের হয়তো ফেরা যাবে বাপ-ঠাকুরদার ভিটেয়।

বেনার এমন ‘ভূতের গ্রাম’ তকমা জুটল কী ভাবে? প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, শতাব্দী প্রাচীন এই গ্রামে এক সময় ২০টি পরিবারের প্রায় শতাধিক বাসিন্দা বাস করতেন। তবে গ্রামে রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানীয় জল-সহ কোনও কিছুরই বন্দোবস্ত ছিল না। অবস্থা এমনই হয়ে পড়ে দিন গুজরান করা দায় হয়ে যায়। তারপরে সকলে একসঙ্গে ভিটে-মাটি ছেড়ে যান। গ্রাম জনশূন্য হয়ে যাওয়ায় এলাকায় রটে যায়, বেনা গ্রামে না কি ভূতের উৎপাত শুরু হয়েছে। তখন থেকেই এই তকমা লেগে রয়েছে গ্রামের নামের সঙ্গে।

সারা বছর গ্রাম জনশূন্য থাকলেও একমাত্র ব্যতিক্রম লক্ষ্মী পুজোর দিন। ফি বছর লক্ষ্মীপুজোর রাতে গ্রামে আসেন বাসিন্দারা। কোনও রকমে পুজো সেরে ফের চলে যান বাসিন্দারা। এ বারেও তার অন্যথা হবে না। তবে পুজোর জাঁকজমক এ বার অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। কুলদেবতার মন্দিরের চারপাশ পরিষ্কার করা হোক বা মন্দির চত্বর জুড়ে আলপনা দেওয়া— পুজোর যাবতীয় প্রস্তুতিতে বাসিন্দাদের উৎসাহ নজরে পড়ার মতো।

হঠাৎ এমনটা কেন? পুজোর প্রস্তুতি জোগাড় করতে করতেই কয়েক জন জানান, সম্প্রতি গ্রামের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছে আসানসোল পুরসভা। যেমন, কুলটি শহরের সঙ্গে গ্রামকে জুড়তে প্রায় দু’কিলোমিটার ঢালাই রাস্তা, পানীয় জলের পাইপ লাইন, বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা, পুকুরের সংস্কার-সহ বেশ কিছু পরিকাঠামো কাজ হয়েছে। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগার সঙ্গে সঙ্গে লাগোয়া এলাকায় জমি বিক্রিও শুরু হয়ে গিয়েছে। জমি কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারাও।

তবে উন্নয়নের কাজ এক দিনে শুরু হয়নি। সম্প্রতি আসানসোল পুর কর্তৃপক্ষের কাছে ‘ভূতড়ে গ্রামে’ উন্নয়নের দাবি জানান রঞ্জিত মাজিদের মতো কয়েক জন বাসিন্দা। শুধু তাই নয়, বাসযোগ্য হলে ফের গ্রামে ফেরার কথাও জানান বাসিন্দারা। পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের আবেগ দেখেই ওই গ্রামে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে।’’

এই পরিস্থিতিতে ‘ভূতের গ্রাম’ তকমা ঘুচবে বলেই আশা করছেন বেনা গ্রামের বাসিন্দা সুবোধ মাজিরা। তাঁরা জানান, ফের গ্রামে ফেরার সম্ভাবনা তৈরি হওয়াতেই এ বার জাঁক বেড়েছে লক্ষ্মীপুজোরও। জাঁক যে বেড়েছে তা বোঝা গেল কুলদেবতার মন্দিরে গিয়ে। সেখানে জোরকদমে পুজোর প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত সকলে। মন্দির চত্বরে আলপনা দিয়ে লক্ষ্মীর পা, ধানের শিস প্রভৃতি ফুটিয়ে তুলছেন মহিলারা। সে দিকে তাকিয়েই প্রতিমা মাজি নাম এক বধূ বলেই ফেলেন, ‘‘হয়তো মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদেই ফের শ্বশুরের ভিটেয় ফিরতে পারব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kulti Benagram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE