Advertisement
E-Paper

ভোটে ব্যস্ত পঞ্চায়েত, বাড়ছে ডেঙ্গি

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নদিয়ার প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী ডেঙ্গি মোকাবিলায় পঞ্চায়েতের ভূমিকায় খুশি নন বলে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫৯

ভোটের জন্য সরকারি কাজকর্ম থমকে যেতে পারে, তা বলে মশার কামড় কী বন্ধ থাকবে? ফল, বাড়ছে ডেঙ্গির প্রকোপ।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, গত তিন মাসে (শনিবার পর্যন্ত ) পূর্ব বর্ধমানে ৪১ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। তার মধ্যে ৩৬ জনই গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা। রিপোর্ট দেখে চিন্তিত জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এক কর্তার কটাক্ষ, “পঞ্চায়েতের কর্তারা ব্যস্ত নির্বাচনে। আর মনের সুখে হুল ফোটাচ্ছে মশারা।’’

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নদিয়ার প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী ডেঙ্গি মোকাবিলায় পঞ্চায়েতের ভূমিকায় খুশি নন বলে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন। ডেঙ্গি মোকাবিলায় পঞ্চায়েত দফতরকে নামার নির্দেশ দিয়েছিলেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। স্বাস্থ্য দফতরও মনে করে, ডেঙ্গির মতো জনস্বাস্থ্যের বিষয়ে পঞ্চায়েত তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। প্রতিটি পঞ্চায়েতের সংসদ স্তর পর্যন্ত ‘গ্রামীণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কমিটি’ রয়েছে। ওই কমিটির কাজ হল, স্বাস্থ্য সচেতনা বিষয়ক প্রচার, এলাকা পরিষ্কার রাখা। এর জন্য ফি বছর ওই কমিটি ১০ হাজার টাকা করে পায়। এ ছাড়াও জেলা পরিষদে জনস্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কর্মাধ্যক্ষ রয়েছে। তার তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য বিষয়ক একাধিক কমিটি রয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, ‘‘পূর্ব বর্ধমান নির্মল জেলা ঘোষণা হয়েছে। নির্মল জেলা মানে তো স্বচ্ছ, আবর্জনামুক্ত পরিবেশ। সেখানে মশার উৎপাত হওয়ার কথা নয়। তাহলে ডেঙ্গি হচ্ছে কী ভাবে?’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন ঘোষণার আগে পর্যন্ত জেলা পরিষদ বা পঞ্চায়েতগুলি নড়াচড়া করছিল। সভাধিপতি দেবু টুডু বেশ কয়েকটি জায়গায় হাজির থেকে পঞ্চায়েতগুলিকে আবর্জনা পরিষ্কার করতে বাধ্য করেছিলেন। ‘গ্রামীণ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কমিটি’র সদস্যদের ডেঙ্গি মোকাবিলার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়াও শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভোট ঘোষণা হতেই ডেঙ্গি-মোকাবিলায় পঞ্চায়েতের ভূমিকায় কার্যত দাঁড়ি পড়ে গিয়েছে। আর তারপরেই স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টে ডেঙ্গি-আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। হিসেব অনুযায়ী, কাটোয়ার দুটি ব্লকে ৯ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। কাটোয়া শহরেও ৪ জনের রক্তে ডেঙ্গি মিলেছে। এ ছাড়া বর্ধমান ১ ব্লকে তিন জন, গলসি ২ ব্লকে চার জনের রক্তে ডেঙ্গি জীবাণু মিলেছে। জেলার ২৩টি ব্লকের মধ্যে দু’একটি ছাড়া সব জায়গাতেই ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ পেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও চাপান উতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের উদয় সরকার বলেন, “পঞ্চায়েত তো উন্নয়নের টাকা লুটপাঠ করতেই ব্যস্ত। ডেঙ্গিতে মানুষ আক্রান্ত হল কি হল না— তাতে শাসকদলের যায় আসে না।” বিজেপির নেতা সন্দীপ নন্দীর কথায়, “পঞ্চায়েতগুলি শৌচাগার করতেই ব্যস্ত ছিল, আবর্জনা সাফাইয়ে নয়।” জেলা পরিষদের বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ (জনস্বাস্থ্য) গার্গী নাহার দাবি, “জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত ডেঙ্গি মোকাবিলা করতে মাঠে নেমেছিল। কিন্তু ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় জনপ্রতিনিধিরা সরাসরি কোনও কিছু করতে পারছেন না। তবে প্রশাসনিক কর্তারা কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।”

স্বাস্থ্য দফতর যে খুশি নয়, তা স্পষ্ট জেলার উপ-স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) সুনেত্রা মজুমদারের কথায়। তিনি বলেন, “গত বার গ্রামীণ এলাকায় যত জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল, এ বার তার থেকে বেশি আক্রান্ত হবেন বলে আশঙ্কা করছি।”

West Bengal Panchayat Election 2018 Dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy