কোথাও নেতাদের সঙ্গে গাড়িতে করে ব্লক অফিসে পৌঁছনো, আবার কোথাও মোড়ে জমায়েত হয়ে দলবেঁধে রওনা— মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য পশ্চিম বর্ধমানের নানা এলাকায় বিজেপি-র এমন সক্রিয়তা চোখে পড়েছিল সোমবার। কিন্তু, সেই তুলনায় সিপিএম নেতা-কর্মীদের পথে নামতে দেখা যায়নি। বাড়তি মনোনয়নের পরে প্রশ্ন উঠেছে সে নিয়ে। সিপিএম নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, শাসক দলের ‘সন্ত্রাস’ এড়িয়ে মনোনয়ন জমা দিতে নানা পদ্ধতি নেওয়া হয়েছিল। যদিও দিনের শেষে পঞ্চায়েতের একটি আসন ছাড়া জেলায় আর কোনও মনোনয়নই জমা দিতে পারেনি তারা।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদের ১৭টি আসনের ১৫টিতে আগেই মনোনয়ন জমা দিয়েছিল সিপিএম। একটিতে প্রার্থী দিয়েছিল সিপিআই। পাণ্ডবেশ্বরে বাকি আসনটিতে সোমবার আর কোনও মনোনয়ন জমা দেয়নি বামেরা। পঞ্চায়েত সমিতির ১৬১টি আসনে সিপিএম ৮৪টি এবং সিপিআই ও ফরওয়ার্ড ব্লক একটি করে আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছিল। সোমবার আর কোনও মনোনয়ন জমা পড়েনি। গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮৩৩টি আসনের মধ্যে সিপিএম ৩৫৩, সিপিআই ২১ ও ফরওয়ার্ড ব্লক ৬টি আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছিল। সোমবার শুধু অণ্ডালে একটি মনোনয়ন জমা দেয় সিপিএম।
গোটা জেলায় সে দিন পঞ্চায়েত স্তরে ৬টি ও জেলা পরিষদে একটি আসনে মনোনয়ন জমা পড়ে। তার মধ্যে বিজেপি জেলা পরিষদের একটি ও পঞ্চায়েতের তিনটি আসনে মনোনয়ন দেয়। বিজেপি-র দাবি, শাসক দল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আটকে না দিলে আরও অনেক মনোনয়ন জমা দেওয়া যেত। অণ্ডাল, লাউদোহা, বারাবনিতে তাঁদের প্রার্থীদের ব্লক অফিসে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। সে দিন পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান তিনি। মনোনয়ন দিতে বাধার অভিযোগে নানা জায়গায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিজেপি।
মনোনয়নের বাড়তি দিনে বামেদের তরফে অবশ্য এই রকম কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। সিপিএমের যদিও দাবি, দুর্গাপুরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুষ্কৃতীরা সিটি সেন্টারের পার্টি অফিস ঘিরে রেখেছিল। তবু প্রার্থীদের লুকিয়ে পাঠানো হয়েছিল মহকুমাশাসকের অফিসে। কিন্তু সেখানে মনোনয়ন ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে সিপিএম নেতাদের অভিযোগ। তাঁদের আরও দাবি, অণ্ডাল ব্লক অফিসেও একই রকম পরিস্থিতি ছিল। শেষে এক প্রার্থীকে ছদ্মবেশে ভিতরে গিয়ে মনোনয়ন জমা দেন।
সিপিএম নেতাদের দাবি, পরিস্থিতি বুঝে পরিকল্পনা বদল করা হয়। নির্বাচন কমিশনের কাছে দুর্গাপুর মহকুমা থেকে ১৭টি এবং আসানসোল মহকুমা থেকে ১৪টি মনোনয়নপত্র ই-মেল করে পাঠানো হয়েছে। ই-মেলে মনোনয়ন গ্রাহ্য না হওয়া সত্ত্বেও এই পদক্ষেপ কেন? সিপিএম নেতাদের দাবি, পরিস্থিতির নিরিখে ওই মনোনয়ন গ্রাহ্য হতেও পারে। দলবেঁধে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কৌশল নেওয়া হল না কেন? সিপিএম নেতাদের দাবি, বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করেই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজেপি-র থেকে অন্তত দেড়শো বেশি আসনে বামেরা প্রার্থী দিয়েছে বলেও জানান নেতারা। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের বক্তব্য, ‘‘আমাদের কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নেই। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীও নেই। যা করেছি, মানুষকে সঙ্গে নিয়েই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy