রবিবারের প্রচার: রায়নার সেহারাবাজারে। নিজস্ব চিত্র
তখন মনোনয়ন পর্ব চলছে। খণ্ডঘোষ ব্লক অফিসের পাশে মিষ্টির দোকানে বসে এক তৃণমূল নেতা বলে দিয়েছিলেন, “এ তল্লাটের কোথাও সন্ত্রাসের কথা শুনতে পাবেন না। সবাই উন্নয়নের গল্প শোনাবে। ঘুরে দেখলেই বুঝতে পারবেন।” জামালপুরের এক তৃণমূল নেতা জৌগ্রামে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে একই সুরে বলেছিলেন, “এ-দিক, ও-দিক বিজেপি থাকলেও তারাও সন্ত্রাসের অভিযোগ করতে পারবে না।”
রায়না, জামালপুর ও খণ্ডঘোষ। বর্ধমানের মানুষের কাছে ওই বিস্তীর্ণ অঞ্চল দক্ষিণ দামোদর বলেই পরিচিত। বাম আমলে সিপিএমের মতো ভোটের আগেই একের পর এক পঞ্চায়েত এ বার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে তৃণমূল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের কথায়, “তখন সিপিএম বলত, বিরোধীরা প্রার্থী পাচ্ছে না। এখন তা বলছে তৃণমূলও।” সন্ত্রাস প্রসঙ্গ উঠলেই কেউ কোনও কথা বলতে রাজি হচ্ছে না। জৌগ্রাম থেকে জামালপুর যাওয়ার পথে মায়ের তলা-ভাঙা বাড়ি গ্রাম পেরিয়ে একটি হিমঘরের সামনে চায়ের দোকানে বসে সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ উঠতে অনেকেই ‘কাজ আছে’ বলে দোকান ছেড়ে রাস্তায় নেমে হাঁটা দেন। আর দোকানি বললেন, “শান্তিতে আছি। এখন চায়ের দোকানেও কেউ রাজনীতির কথা তোলেন না।”
এক সময় সাবেক বর্ধমান জেলা ছিল সিপিএমের দুর্গ। আর বর্ধমানে জেলা সিপিএমের ‘দুর্গ’ ছিল নিম্ন দামোদর। এই এলাকা থেকে সিপিএম ৫৫-৬০ শতাংশ ভোট পেত। আর এখন হাতেগোনা কয়েকটি এলাকা ছাড়া বিরোধীদের দেখা নেই। এলাকার অনেক প্রবীণ জানাচ্ছেন, বাম শাসনকালে রায়না ১ ব্লকের হিজলনা, পলাসন, রায়না, মুগুরা গ্রাম পঞ্চায়েত ভোটের আগেই জিতে যেত শাসক দল। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রায়না ২ ব্লকের গোতান, পহলানপুর, কাইতি, আরুই গ্রাম পঞ্চায়েত কিংবা খণ্ডঘোষের সগড়াই, বেরুগ্রাম, লোদনা, শশঙ্গা পঞ্চায়েতের বেশির ভাগ সংসদে এ বার ভোট নেই। জামালপুরের জারগ্রাম, জ্যোৎসিরাম, পাড়াতল ১ ও ২, চকদিঘি, নবগ্রাম পঞ্চায়েতও চরিত্র বদলায়নি!
সামনে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসের র্যালি। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা দুই বৃদ্ধ গলা নামিয়ে বলেন, “আমরা এক সময় ফরওয়ার্ড ব্লক করতাম। সিপিএমের দাপটে গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল। এখন এখানে বিরোধী নেই। আছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।” বর্ধমান-আরামবাগ রোডের সগড়াই মোড়ের সিপিএমের দলীয় দফতরে বসে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েক জন কর্মীর অভিযোগ, “মনোনয়নের সময় থেকেই রাতপাহারার নাম করে বাইক বাহিনীর দাপট চলছে। কার ঘাড়ে ক’টা মাথা আছে, যে মুখ খুলবে?” সিপিএম নেতা অমল হালদারের দাবি, “সাবেক বর্ধমানে গোটা তিনেক পঞ্চায়েত ছাড়া নির্বাচন হয়নি, এ রকম কথা কেউ বলতে পারবেন না। ২০০৮ সালে গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে দলীয় প্রার্থী ঠিক করা হয়েছিল। তখন অনেক জায়গায় বিরোধীরা প্রার্থী পাননি। কিন্তু এখনকার মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।”
যা শুনে জেলা পরিষদের প্রার্থী তথা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত বলে দিচ্ছেন, “বাম আমলে অত্যাচারের কথা কাউকে বলে দিতে হবে না। আর এখন উন্নয়নের জোয়ারে বিরোধীরা প্রার্থী হতে চাইছেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy