Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
হুমকির নালিশ বিরোধীদের

সাঁঝ এলেই বাইক নিয়ে গ্রামে কারা

পূর্ব বর্ধমানের কিছু এলাকায় শাসকদল তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন তোলানোর জন্যই এই বাইক-বাহিনী নামিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০৮
Share: Save:

সন্ধ্যার পরেই বাইক-বাহিনী ঘুরপাক খাচ্ছে রাস্তায়। মাঝেমধ্যে কোনও বাড়ির সামনে ‘ভুট-ভুট’ শব্দ বন্ধ হচ্ছে। মনোনয়ন প্রত্যাহার নিশ্চিত হওয়ার পরে পরবর্তী ঠিকানার উদ্দেশে চালু হচ্ছে মোটরবাইক।

পূর্ব বর্ধমানের কিছু এলাকায় শাসকদল তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন তোলানোর জন্যই এই বাইক-বাহিনী নামিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। খণ্ডঘোষে বিজেপি-র জেলা পরিষদের প্রার্থী, কুমিরকোলা গ্রামের হরেকৃষ্ণ মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালায় মোটরবাইক আরোহী কিছু দুষ্কৃতী। বৃহস্পতিবার ওই ঘটনা ঘটলেও পুলিশের কাছে শনিবার লিখিত অভিযোগ করেছেন হরেকৃষ্ণবাবুর স্ত্রী মীরাদেবী। অভিযোগ বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ তৃণমূলের লোকজন তাঁর স্বামীকে খুঁজতে বাড়িতে আসেন। স্বামীর খোঁজ না পেয়ে বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। হামলাকারীদের হাত থেকে হরেকৃষ্ণবাবুর ৯৫ বছরের বৃদ্ধা শাশুড়িও রেহাই পাননি বলে অভিযোগ। হরেকৃষ্ণবাবু বলেন, “তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের ভয়ে গ্রামছাড়া হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, কুমিরকোলার পরে বাইক-বাহিনী যায় মামিলা-চণ্ডীপুর গ্রামে। সেখানে সিপিএমের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের ‘হুমকি’ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এর পরে বাইক-আরোহীরা ঢোকেন সালুন গ্রামে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, মারধর করছে এই খবর রটে যেতেই সালুন গ্রামে প্রচুর মানুষ ওই রাতেই জড়ো হয়ে যান। গ্রামের কয়েক জন জানালেন, বাইক-বাহিনী গ্রামে ঢুকতেই বেশ কয়েক জনকে ধরে উত্তম-মধ্যম দেওয়া হয়। বাকিরা বাইক নিয়ে চম্পট দেয়। অনেকে বাইক ছেড়েই পালায়! সূত্রের দাবি, ওই রাতে ২৩টি মোটরবাইক ভাঙচুর হয়েছে। আটটি বাইক উদ্ধার করে খণ্ডঘোষ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

সিপিএমের দাবি, খণ্ডঘোষ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে মাত্র ২৩টি আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া গিয়েছে। ইতমধ্যেই হুমকি দিয়ে ৭ জনকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো হয়েছে। অভিযোগ, হাইকোর্ট ভোট প্রক্রিয়ার উপরে স্থগিতাদেশ দেওয়ার আগেই অনেক আসনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন বিরোধী প্রার্থীরা। এই অবস্থায় হাইকোর্টের দিকেই আশার চোখে চেয়ে আছে বিরোধী শিবির। আজ, সোমবার হাইকোর্ট যদি মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য বাড়তি দিন দেয়, তা হলে তারা খণ্ডঘোষ-রায়নার প্রতিটি আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে দাবি সিপিএমের। এ ছাড়াও বর্ধমান ২, ভাতার, গলসি-সহ বেশ কয়েকটি ব্লকেও প্রার্থী দেওয়ার জন্য ঘুঁটি সাজাতে শুরু হয়েছে।

সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদার বলেন, “জাতিগত শংসাপত্রও তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ছিঁড়ে দিয়েছে। সে জন্য কিছু জায়গায় সমস্যা হতে পারে।” তবে প্রার্থী দেওয়ার পরেও রক্ষণ কতটা সামলানো যাবে, তা নিয়ে বেশ চিন্তিত সিপিএম নেতৃত্ব। বিজেপি-ও মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন হাইকোর্টের নির্দেশে বাড়লে কী ভাবে জমা দেওয়া যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। তাজেরও দাবি, মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরেও প্রার্থীরা শান্তিতে ঘুমাতে পারছেন না। খণ্ডঘোষের মতো অনেক জায়গাতেই বাইক-বাহিনীর ঘুরছে। এরই মধ্যে মন্তেশ্বর ব্লকের জামনা পঞ্চায়েতের দেওয়ানিয়া গ্রামে পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি প্রার্থী সনকা পালকে ভয় দেখিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দলের জেলা যুব মোর্চার সভাপতি সৌগত দে-র অভিযোগ, ‘‘শনিবার তৃণমূলের লোকজন সনকাদেবীর বাড়িতে এসে হুমকি দেয়, মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। মাঝরাতে বাড়িতে দুটি বোমাও ছোড়া হয়।’’ রবিবার লিখিত অভিযোগ হয়েছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। পুলিশ জানিয়েছে তদন্ত শুরু হয়েছে।

বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এত সবের পরেও গলসির দুটি ব্লক, আউশগ্রাম ও রায়নায় নতুন করে প্রার্থী দেওয়া যাবে। দলের জেলা সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীর কথায়, “সালুনের মতো দলমত নির্বিশেষে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ধীরে হলেও সেই ইঙ্গিত মিলছে।”

জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের প্রার্থী উত্তম সেনগুপ্ত অবশ্য বলেন, “আমাদের সময়েই বিরোধীরা সবচেয়ে বেশি প্রার্থী দিয়েছে—সেটা পরিসংখ্যান বলছে। ওরা অনেক আসনে প্রার্থী খুঁজে পায়নি বলে দিতে পারেনি। বাইক-বাহিনী গ্রামে ঘুরছে, এমন অভিযোগ করে বিরোধীরা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে গিয়ে নিজেরাই দিশেহারা হয়ে পড়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE