Advertisement
E-Paper

বিজেপি-র মুখে সন্ত্রাস শুনে কটাক্ষ

বিজেপি শিবির শাসক দলের ‘সন্ত্রাস’-এর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। তৃণমূল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা বিজেপি-র দুর্বল সংগঠনের প্রতি কটাক্ষ করেছে।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৩৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সরাসরি ভোটের লড়াইয়ে এই তল্লাটে প্রায় দু’দশক ধরে তারা অপরাজিত। সেই পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নিজেদের ‘গড়’ নসরতপুর পঞ্চায়েতে এ বার এখনও মনোনয়ন জমা দিতে পারেনি বিজেপি। এর কারণ হিসাবে বিজেপি শিবির অবশ্য শাসক দলের ‘সন্ত্রাস’-এর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। তৃণমূল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা বিজেপি-র দুর্বল সংগঠনের প্রতি কটাক্ষ করেছে।

তাঁত এলাকা হিসাবে চিহ্নিত এই পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের বাস। এক সময় পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষজনই এখানকার মূল ভোটব্যাঙ্ক। ভোটের পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, নসরতপুর পঞ্চায়েতের ৩০টি আসনের মধ্যে এই অংশের মানুষদের ভোটের উপরে হারাজেতা নির্ভর করে অন্তত ১৭টি আসনের প্রার্থীদের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত পঞ্চায়েত ভোটের লড়াইয়ে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দল নসরতপুরে বিজেপিকে হারাতে পারেনি। বরং তারা এক শক্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই বোর্ড গঠন করেছে।

২০১৩ সালের ভোটের আগে থেকেই ছবিটা বদলাতে শুরু করে। এলাকায় বিজেপি-র সাংগঠনিক শক্তিকে টক্কর দিতে শুরু করে তৃণমূল। ভোটের আগে বিজেপি-র অঞ্চল সভাপতি বিকাশ বসাক যোগ দেন শাসকদলে। তৃণমূল তাঁকে টিকিট দেয় জেলা পরিষদের একটি আসনে। ভোটে তৃণমূল ভালই ধাক্কা দেয় বিজেপি-কে। ৩০টি আসনের মধ্যে ১২টি করে পেয়েছিল তৃণমূল এবং বিজেপি। ৬টি আসন পায় সিপিএম। বোর্ড গঠনের দিন সিপিএমের কয়েক জন সদস্য বিজেপি-কে সমর্থন করে। এর ফলে সিপিএমকে নিয়ে বোর্ড গড়তে সমর্থ হয় বিজেপি। তবে, মাস পাঁচেকে পরেই হয় পালাবদল। প্রধান-সহ পঞ্চায়েতের চার বিজেপি সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় বোর্ডের দখল চলে যায় শাসক দলের হাতে।

সেই থেকে নসরতপুরে তৃণমূলের বাড়বাড়ন্ত। তা বলে বিজেপি-র সংগঠনও একেবারে তলানিতে ঠেকেছে, এমন নয়। তা সত্ত্বেও এ বার এখনও পর্যন্ত এই পঞ্চায়েতের কোনও আসনেই তারা প্রার্থী দিতে পারেনি। এমন পরিস্থিতির জন্য শাসক দলের দিকেই আঙুল তুলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের অভিযোগ, এ বার মনোনয়ন পর্বের শুরু থেকে শাসক দলের বাহিনী মারমুখী হয়ে উঠেছে। গত সোমবার পূর্বস্থলী ১ ব্লক অফিস সংলগ্ন এলাকায় বিজেপি-র একাধিক প্রার্থীর উপরে হামলাও চালানো হয়। নষ্ট করে দেওয়া হয় তাঁদের নির্বাচন সংক্রান্ত নথিপত্র। তার পরেই তাঁদের মনোবল ভাঙতে শুরু করে বলে মেনে নিচ্ছেন বিজেপি-র নিচুতলার অনেক কর্মীই।

পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বিজেপি নেতা বিধান ঘোষ দাবি, ‘‘এখানেই শেষ নয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাণনাশের হুমকিও দিচ্ছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। এলাকার বেশির ভাগ মানুষই ব্যবসায়ী। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই নসরতপুরে প্রার্থী হওয়ার রাস্তায় হাঁটতে চাইছে না।’’ দলের রাজ্য নেতারা বিষয়টি জানাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনকে।

এই অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের পাল্টা দাবি, আসলে নসরতপুরে বিজেপি-র সংগঠনই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এক সময় যাঁরা ময়দানে নেমে বিজেপি-র নেতৃত্ব দিতেন, তাঁদের বড় অংশই এখন শাসকদলে নাম লিখিয়েছেন। এলাকার বিদায়ী জেলা পরিষদের বিদায়ী সদস্য বিকাশবাবুর দাবি, ‘‘স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ তাঁতযন্ত্র বিলি, রাস্তা তৈরি করা-সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। ফলে, বেশির ভাগ মানুষের আস্থা রয়েছে আমাদের প্রতি। তৃণমূল সরকারের উন্নয়নে এলাকায় বিজেপি-র সংগঠন তলানিতে ঠেকেছে। ফলে প্রার্থী পেতে অসুবিধা হচ্ছে ওদের।’’ পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা দিলীপ মল্লিকের প্রশ্ন, ‘‘আমরা যদি সন্ত্রাসই করব, তা হলে বিজেপি অন্য পঞ্চায়েতগুলিতে কী ভাবে প্রার্থী পেল?’’

আজ, সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। সুপ্রিম কোর্টে অবশ্য মনোনয়নের সময়সমা বাড়ানোর আবেদন করেছে রাজ্য বিজেপি। আজই তার রায় বেরনোর কথা। নিয়ম অনুযায়ী সোমবার ব্লকের পাশাপাশি কালনায় মহকুমাশাসকের অফিসেও প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন। শেষ দিন এই পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপি কি মনোনয়ন জমা দিতে পারবে, প্রশ্ন ঘুরছে নসরতপুরে।

West Bengal Panchayat Elections 2018 Nominations BJP TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy