Advertisement
E-Paper

কপালে ফোঁটা দিয়ে হাতে মিষ্টি, অবাক মুসকানেরা

তাপ্পু সর, মুসকান আনসারিরা (নাম পরিবর্তিত) গোড়ায় বুঝতেই পারেনি, কী ঘটছে। শেষে দিদিরাই বুঝিয়ে দিলেন, আজ ভাইফোঁটা। শেষে হাতে ধরালেন মিষ্টির প্যাকেট আর উপহারও। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২০ ০২:৩৬
উৎসব। সোমবার আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র।

উৎসব। সোমবার আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র।

এটা বিশেষ কোনও দিন, জানা ছিল না ওদের। অন্য দিনের মতোই সকাল-সকাল কাঁধে বস্তা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল প্লাস্টিকের টুকরো, কাগজ কুড়োতে। ওদের ‘কর্মক্ষেত্র’ আসানসোল স্টেশন এলাকা থেকে বাসস্ট্যান্ড। সোমবার সকালে আসানসোল স্টেশন চত্বরে পৌঁছতেই যা ঘটল, তাতে ওরা হতভম্ব।

কাজ শুরু করতে না করতেই পিতলের রেকাব হাতে তাদের দিকে এগিয়ে এলেন কয়েকজন দিদি। হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বসালেন গাছের তলায় প্লাস্টিকের চেয়ারে। সেখানে ধুপ জ্বেলে কপালে এঁকে দিলেন চন্দনের ফোঁটা। মাথায় ধান-দুর্বা ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা..।’’ তাপ্পু সর, মুসকান আনসারিরা (নাম পরিবর্তিত) গোড়ায় বুঝতেই পারেনি, কী ঘটছে। শেষে দিদিরাই বুঝিয়ে দিলেন, আজ ভাইফোঁটা। শেষে হাতে ধরালেন মিষ্টির প্যাকেট আর উপহারও।

কাগজ কুড়োনো নাবালক-নাবালিকাদের নিয়ে আসানসোলে এ দিন এ ভাবেই ভাইফোঁটা উদযাপন করলেন একটি মানবাধিকার সংগঠনের মহিলা কর্মীরা। সংগঠনের সদস্য মিঠু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাইফোঁটা উপলক্ষ মাত্র। আসলে এই সামাজিক উৎসবের মাধ্যমে সমাজে অবহেলিত শিশুদের নিয়ে কয়েকঘণ্টা কাটানোই উদ্দেশ্য।’’ এ দিন সকাল থেকেই স্টেশন চত্বরে শুরু হয়ে যায় সাজ-সাজ রব। সার বেঁধে চেয়ার পাতা হয়। ফুলের মালা দিয়ে সাজা হয়েছে কিছু জায়গা। শুধু পথশিশুরা নয়, স্টেশন চত্বরে খোলা আকাশের নীচে থাকা মানুষজনকেও মিষ্টিমুখ করান তাঁরা। সংগঠনের অন্য এক সদস্য পূরবী সমাদ্দার জানান, সংসার সামলে নিয়মিত নানা সামাজিক কাজ করাই তাঁদের নেশা। তাঁরা বলেন, ‘‘সংসার খরচ থেকে সামান্য করে বাঁচিয়ে এ সবের জন্য খরচ জোগাড় করি। পরিবারের অন্য সদস্যেরাও সাহায্য করেন।’’

মুসকানেরা থাকে রেলপাড় এলাকায়। তাদের বাবা-মায়েরা ছোটখাট কাজ করেন। তারা জানায়, বাসি রুটি খেয়ে কাঁধে বস্তা নিয়ে রোজ সকালে বেরিয়ে পড়াই তাদের রুটিন। দুপুর পর্যন্ত এই কাজ করে তারা। তাদের কথায়, ‘‘আগে কখনও এ ভাবে কেউ কপালে চন্দনের ফোঁটা দেয়নি। মিষ্টি আর উপহারের প্যাকেট পেয়ে খুব ভাল লেগেছে। দিনটা অন্য রকম মনে হচ্ছে।’’

ফোঁটার অনুষ্ঠান চলাকালীন দূরে গাছের তলায় হুইলচেয়ারে বসেছিলেন সৈয়দ মহম্মদ নফিজ। তাঁর উদাস মুখও নজর এড়াল না মিঠুদের। রেকাব আর মিষ্টির প্যাকেট হাতে তাঁর দিকেও এগিয়ে গেলেন তাঁরা।

scrap collectors Bhaiphonta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy