Advertisement
E-Paper

বাস কমই, ভোগান্তি অব্যাহত

ধর্মঘটের প্রথম দিন, মঙ্গলবার সাফল্য দাবি করেছেন ধর্মঘট সমর্থকেরা। অন্য দিকে, সাধারণ ধর্মঘট প্রত্যাখ্যানের কথা জানিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু এই দুই দাবি-পাল্টা দাবির মাঝে জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দাদের দাবি, ধর্মঘটে ভোগান্তির ছবিটা অন্য বারের মতো একই রকম থেকে গিয়েছে।ধর্মঘটের প্রথম দিন, মঙ্গলবার সাফল্য দাবি করেছেন ধর্মঘট সমর্থকেরা। অন্য দিকে, সাধারণ ধর্মঘট প্রত্যাখ্যানের কথা জানিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু এই দুই দাবি-পাল্টা দাবির মাঝে জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দাদের দাবি, ধর্মঘটে ভোগান্তির ছবিটা অন্য বারের মতো একই রকম থেকে গিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৭
মঙ্গলবার সকালে যাত্রীর ভিড় বর্ধমান স্টেশনে। ছবি: উদিত সিংহ।

মঙ্গলবার সকালে যাত্রীর ভিড় বর্ধমান স্টেশনে। ছবি: উদিত সিংহ।

অমিল বাস

এলাকাবাসী জানান, আসানসোল, বরাকর, বার্নপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে একটিও দূরপাল্লার বেসরকারি বাস ছাড়েনি। দুর্গাপুরেও দূরপাল্লার বাস চলেছে হাতেগোনা। আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, ‘‘বাস মালিকেরা রাস্তায় বাস নামালেও যাত্রী না থাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা থেকে বাস তুলে নেন।’’ তবে দুর্গাপুর স্টেশন, বেনাচিতির প্রান্তিকা থেকে সকালে মিনিবাস ছাড়ে নির্দিষ্ট সময়েই।

সোমবার জেলা প্রশাসন জানিয়েছিল, বেসরকারি বাস ও মিনিবাস মালিকদেরও রাস্তায় বাস বার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিম্তু নাগরিকদের অভিজ্ঞতা, নির্দেশই সার। কার্যক্ষেত্রে, বেসরকারি বাসের দেখা মেলেনি। অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম রায় অবশ্য বলেন, ‘‘বেসরকারি বাস পরিষেবা কেন ব্যাহত হল, তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’’ এ দিন জামুড়িয়ার মণ্ডলপুরে সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ধর্মতলাগামী বাসে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে ধর্মঘট সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

এই অবস্থায় দিনভর শিল্পাঞ্চলের রাস্তা জুড়ে দাপিয়েছে অটো ও টোটো। যাত্রীদের অভিযোগ, ইচ্ছেমতো ভাড়াও নেওয়া হয়েছে।

‘স্বাভাবিক’ শিল্পক্ষেত্র

জেলার শিল্পক্ষেত্রে ধর্মঘটের প্রভাব পড়েনি বলেই দাবি করেছেন নানা সংস্থার কর্তারা। ইস্কো কর্তৃপক্ষ জানান, সকাল ও দুপুরের পালিতে হাজিরা ও উৎপাদন ছিল স্বাভাবিক। তবে ইস্কোয় সকাল ৬টায় প্রথম পালিতে কয়েক জন শ্রমিক কারখানায় ঢুকতে চাইলে তাঁদের বাধা দেন ধর্মঘট সমর্থকেরা। প্রায় সেই সময়েই তৃণমূল সমর্থকেরা ঘটনাস্থলে চলে আসায় দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ ও শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী। ইসিএল জানায়, দু’-একটি খনি বাদে কয়লা উত্তোলন ও পরিবহণ ছিল স্বাভাবিক। চিত্তরঞ্জন রেল কারখানার জিএম কার্যালয়ে ধর্মঘট সমর্থকেরা ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভ দেখালেও উৎপাদন ব্যাহত হয়নি। ধর্মঘট সমর্থকদের বিরুদ্ধে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কল্যাণেশ্বরী শিল্পতালুকে। তবে সেখানে ধর্মঘট সমর্থকদের হটিয়ে দেন তৃণমূল সদস্য, সমর্থকেরা। রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুক, বামুনাড়া শিল্পতালুক, লেনিন সরণি, হেতেডোবা শিল্পতালুকের কারখানাগুলিতেও হাজিরা ছিল প্রায় স্বাভাবিক। একই পরিস্থিতি ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিএসপি, অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট এবং রাজ্য সরকারের সংস্থা দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডেও।

রেল-অবরোধ

সকাল ১০টা ৫১-য় ধর্মঘট সমর্থকেরা আসানসোলের বিএনআর ব্রিজ লাগোয়া দক্ষিণ-পূর্ব শাখার রেল লাইন অবরোধ করেন। প্রায় ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে ডিব্রুগড়-চেন্নাই সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ দিন সকালে নমো সগরভাঙায় হাওড়াগামী শিপ্রা এক্সপ্রেস আটকে দেন বন্‌ধ সমর্থনকারীরা। তার জেরে আটকে পড়ে হাওড়াগামী ময়ূরাক্ষী এক্সপ্রেস। কয়েক জন অবরোধকারীকে আটক করে রেল পুলিশ। মিনিট কুড়ি পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। ইকড়ায় অণ্ডাল-জসিডি ট্রেনও প্রায় পনেরো মিনিটের জন্য আটকে দেন ধর্মঘট সমর্থকেরা। আসানসোল ও দুর্গাপুর, দুই স্টেশনেই যাত্রী সংখ্যা ছিল ভালই।

অবরুদ্ধ রাস্তা

রানিগঞ্জের মূল রাস্তা নেতাজি সুভাষ বসু রোডে নেতাজি মূর্তির সামনে বংশগোপাল চৌধুরী, রুনু দত্তদের নেতৃত্বে অবরোধ হয়। এর জেরে রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া থেকে আসানসোল-সহ নানা রুটের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে জামুড়়িয়ার কুনস্তোরিয়া কালীমন্দিরের কাছে সকাল ৬টা থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা অবরোধ করা হয়। সিপিএম নেতা মনোজ দত্তের অভিযোগ, পুলিশ লাঠি চালিয়ে তাঁদের হঠিয়ে দেয়। লাঠি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

সরকারি অফিস, স্কুল

আসানসোল মুখ্য ডাকঘর সূত্রে জানা যায়, উপস্থিতির হার ছিল অত্যন্ত কম। জেলায় স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। তবে জেলার সমস্ত সরকারি অফিসে উপস্থিতি ও কাজ স্বাভাবিক ছিল বলে দাবি করেছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দমবাবু।

বাজার-দোকান

অণ্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জ, দুর্গাপুরে স্টেশন বাজারের বেশির ভাগ দোকানই বন্ধ ছিল। তবে স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ডের দোকানগুলির অধিকাংশই খোলা ছিল। বেনাচিতি বাজারে ধর্মঘটের তেমন প্রভাব পড়েনি। ভিড়ও ছিল রোজকার মতোই। সকালে চণ্ডীদাস বাজারে সিপিএম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়ের নেতৃত্বে বন্‌ধ সমর্থনকারীরা মিছিল করেন। তবে বাজার বন্ধ হয়নি। মামরা বাজারেও দোকান খোলা ছিল।

দিনভর ধর্মঘট প্রসঙ্গে সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, ‘‘কোলিয়ারি, কারখানায় ধর্মঘটের ভাল প্রভাব পড়েছে। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল নানা জায়গায় ধর্মঘট সমর্থকদের উপরে হামলা চালিয়েছে। বুধবার ধর্মঘট আরও সফল হবে।’’ তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘হামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন। সাধারণ মানুষ ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করেছেন। বুধবারও তাই হবে।’’

Strike Bharat bandh 2019 Bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy