Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জৌলুস নেই প্রচারে, ক্ষোভ দলেই

লোকসভা ভোটের ফলে আশার আলো দেখেছিলেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। সামনের ভোটগুলোয় আরও ভাল ফল করার জন্য সংগঠনকে জোরদার করার কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু পুরভোটে কাটোয়ায় বিজেপির সেই তৎপরতা যেন অনেকটাই ফিকে। কোথাও মনের মতো প্রার্থী পাওয়া যায়নি, কোথাও আবার সাঙ্গপাঙ্গ ছাড়াই প্রচারে বেরোচ্ছেন প্রার্থী। এমনকী ভোটের দিন দশেক আগেও বিশেষ ইস্তেহার বা দেওয়াল লিখনেও সেভাবে বিজেপির প্রচার নেই বলে জানাচ্ছেন শহরবাসীরা।

ফাঁকা প্রচার। নিজস্ব চিত্র।

ফাঁকা প্রচার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪১
Share: Save:

লোকসভা ভোটের ফলে আশার আলো দেখেছিলেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। সামনের ভোটগুলোয় আরও ভাল ফল করার জন্য সংগঠনকে জোরদার করার কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু পুরভোটে কাটোয়ায় বিজেপির সেই তৎপরতা যেন অনেকটাই ফিকে।

কোথাও মনের মতো প্রার্থী পাওয়া যায়নি, কোথাও আবার সাঙ্গপাঙ্গ ছাড়াই প্রচারে বেরোচ্ছেন প্রার্থী। এমনকী ভোটের দিন দশেক আগেও বিশেষ ইস্তেহার বা দেওয়াল লিখনেও সেভাবে বিজেপির প্রচার নেই বলে জানাচ্ছেন শহরবাসীরা। সাধারণ মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন নেতারাও। জেলা বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী অনিল দত্তের সাফ স্বীকারোক্তি, ‘‘কর্মীদের একটা বড় অংশ তৃণমূল বা কংগ্রেসকে চটাতে চাইছেন না বলে আমাদের সঙ্গে সেভাবে রাস্তায় নামছেন না।’’

বছর খানেক আগে, লোকসভা নির্বাচনের ফল বেরোনোর সময়ে অবশ্য কাটোয়া শহর নিয়ে বেশ আশান্বিত ছিল বিজেপি। দলের নেতারা ভেবেছিলেন, পুরভোটে কংগ্রেসের মূল প্রতিপক্ষ হিসাবে বিজেপিই লড়াবে। বিজেপির যুক্তি ছিল, কংগ্রেস প্রভাবিত কাটোয়া শহরে লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে বিজেপি ৬টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে। বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও অনেক বেশি উৎসাহ দেখা গিয়েছে। সেই সময় থেকে পুরভোটের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দেয় বিজেপি। কিন্তু ভোট যত এগিয়ে আসছে দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে গা-ছাড়া ভাব তত বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন একাংশ নেতারাই।

পুরভোটের প্রার্থী ঘোষণার প্রাক্কালে বিজেপি নেতারা ঠিক করেছিলেন, কাটোয়া শহরে চিকিৎসক, আইনজীবী, শিক্ষক, অধ্যাপকদের মতো এলাকায় ‘আস্থাভাজন ও প্রতিষ্ঠিত’দের প্রার্থী করা হবে। কিন্তু ভাবনা আর বাস্তবে যে কত ফারাক, তা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকাতেই স্পষ্ট। লোকসভা ভোটের পরিস্থিতির পরে পুরভোটে প্রার্থী খুঁজতে গিয়েই হন্যে হয়ে পড়েন বিজেপি নেতৃত্ব। শেষ পর্যন্ত এলাকায় প্রায় ‘অপরিচিত’দের প্রার্থী করতে বাধ্য হয় বিজেপি। এই সব প্রার্থীদের নিয়ে এলাকাবাসীর মনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। সে কথা বিলক্ষণ জানেন দলের নেতারাও। দলের এক নেতার কথায়, “কাটোয়া শহরে যে ৬টি ওয়ার্ডে লোকসভা নির্বাচনের সময় জিতেছিলাম, সেই সব ওয়ার্ডেও আমরা মনের মতো প্রার্থী পেলাম না। বাকি ওয়ার্ডগুলি আর কত ভাল হবে!” তবে বিজেপি প্রার্থীদের দাবি, ভোটের প্রচারে গিয়ে তাঁরা বুঝতে পারছেন, দলের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। মানুষ বিজেপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন না। কিন্তু তারপরেও অন্য রাজনৈতিক দলগুলির তুলনায় ‘পথে প্রচারে’ বিজেপি বেশ পিছিয়ে রয়েছে বলেই শহরের বাসিন্দাদের মত।

কিন্তু প্রচারে পিছিয়ে থাকার কারণ কী?

দলের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী অনিলবাবু বলেন, ‘‘কর্মী থাকলেও আমরা মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছি না। কর্মীরা যে কোনও কারণে রাস্তায় নামতে চাইছেন না।’’ অথচ এই ১২ নম্বর ওয়ার্ডেই লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে বিজেপি প্রার্থী অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন কংগ্রেসের থেকে। সেখানেও পোস্টার মারা থেকে ফ্লেক্স লাগানো, সবই কার্যত একাই করতে হচ্ছে অনিলবাবুকে। দলের আর এক প্রার্থীর কথায়, “কর্মীরা সম্ভবত মনে করছেন, কাটোয়াতে বিজেপির ফল শেষ পর্যন্ত খুব একটা ভাল হবে না, সে জন্যই তাঁরা পথে নামতে সংশয়ে ভুগছেন।” মোদী হাওয়ার রেশ যে আর আগের মতো নেই, তা মেনেও নিচ্ছেন নেতারা। বিজেপি প্রার্থীদের একাংশের দাবি, পুরবোর্ড গঠন করার পর কাটোয়ার মানুষের জন্য বিজেপি কী করবে তা জানতে চাইছেন ভোটারেরা। কিন্তু এখনও কোনও ইস্তাহার বা প্রচারপত্র পাওয়া যায়নি বলে তাঁরা কী করতে চান, তা স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না প্রার্থীরা। যদিও বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছে, কাল, বুধবার বাংলা নববর্ষের দিন দলের ইস্তাহার প্রকাশ করা হবে। তবে তারপরে মাত্র আট দিন সময় পাবেন প্রার্থীরা। এত কম সময়ে সকলের কাছে পৌঁছনো যাবে কী না তা নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে।

বছর ঘুরতে না ঘুরতে বিজেপির হাওয়া কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “লোকসভা আর পুরভোট এক জিনিস নয়। পুরভোটের সময় কাটোয়ার মানুষ কংগ্রেসকেই আশীর্বাদ করেন।” তৃণমূলের কাটোয়া শহর সভাপতি অমর রামও মনে করেন, “লোকসভা ভোটে একটা হাওয়া ছিল বলে বিজেপি ভোট পেয়েছে। এখন সেই হাওয়াও নেই, বিজেপিও ভোট পাবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE