রাজ্য সরকারের তথ্য প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স দফতরের সংস্থার (ওয়েবেল) দুর্গাপুরের আইটি পার্কের ঘর ভাড়া নিয়ে চলছে ভোটার তালিকায় কারচুপি— জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর এমন অভিযোগ ঘিরে চাপান-উতোর তৈরি হয়েছে। আবার, নরেন্দ্রনাথের প্রয়াত পিতার নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে দাবি করে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা।
ওয়েবেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই আইটি পার্কে ঘর ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা কাজকর্ম করে। নরেন্দ্রনাথের অভিযোগ, আইটি পার্কে দু’টি তলা ভাড়া নিয়ে সেখানের ঘর থেকে তৃণমূল ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সমাজমাধ্যমে কুৎসা রটানো ও ভোটার তালিকায় ‘অনলাইনে’ কারচুপির কাজ চলছে। সম্প্রতি দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের ভোটার তালিকা সংক্রান্ত বিশেষ কর্মিসভায় নরেন্দ্রনাথ এমন অভিযোগ তোলেন। ওয়েবেল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা থেকে শুরু করে যাবতীয় নথি পরীক্ষা করে ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভাড়া নেওয়ার পরে কেউ গোপনে সংস্থার বাইরে অন্য কোনও কাজ করলে, তা তাঁদের জানার কথা নয়। তবে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।
বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, ‘‘ওয়েবেল রাজ্য সরকারের সংস্থা। পুলিশ ওঁদের হাতে। বিজেপির ভূত দেখে ভুল বকছেন।’’ এর মধ্যেই, বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের রাজ্য কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়েরা অভিযোগ তুলেছেন, নরেন্দ্রনাথের বাবা অরিন্দম প্রয়াত হয়েছেন বছর দুয়েক আগে। এখনও পাণ্ডবেশ্বরের চকবাঁকোলা গ্রামের ৮৭ নম্বর বুথে ১১৭ নম্বরে তাঁর নাম রয়েছে। চন্দ্রশেখরের বক্তব্য, ‘‘ভুয়ো ভোটার নিয়ে উনি (নরেন্দ্রনাথ) নানা কথা বলছেন। কিন্তু ওঁর প্রয়াত বাবার নাম দু’বছর পরেও ভোটার তালিকায় কী ভাবে আছে?’’ কৃষ্ণেন্দুর প্রশ্ন, ‘‘সর্ষের মধ্যে ভূত ভাড়াতে গিয়ে নরেন্দ্রনাথ তাঁর বাবার নাম থাকা নিয়ে কার হাত-পা ভাঙবেন?’’
এ বিষয়ে নরেন্দ্রনাথ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের দাবি, অনেক দিন আগেই নরেন্দ্রনাথ বাবার নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনের কাছে। তা সত্ত্বেও নাম রয়ে গিয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, এলাকায় কেউ প্রয়াত হলে বা এলাকা ছেড়ে চলে গেলে, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ভোটার তালিকা থেকে সেই ব্যক্তির নাম সরিয়ে দেওয়া। কমিশন কাজ ঠিক মতো করছে না বলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)