বাংলাদেশে উন্মত্ত জনতার তাণ্ডব অব্যাহত। এ বার দরজায় তালা লাগিয়ে বিএনপি নেতার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। শুক্রবার রাতের এই ঘটনায় আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে ওই বিএনপি নেতার সাত বছরের শিশুকন্যার। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই বিএনপি নেতা এবং তাঁর দুই নাবালিকা কন্যা।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুর জেলায় বাড়ি খালেদা জিয়ার দল বিএনপি-র নেতা বেলাল হোসেনের। তিনি লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের দলের সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে ঘুমোচ্ছিলেন বেলাল এবং তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। রাত ২টো নাগাদ কয়েক জন উন্মত্ত ব্যক্তি সদর দরজায় তালা লাগিয়ে বেলালদের বাড়িতে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
বিএনপি নেতার পরিবার কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। দরজা তালাবন্ধ থাকায় পালাতেও পারেননি কেউ। ঘটনাস্থলেই আগুন ঝলসে মৃত্যু হয় বেলালের সাত বছরের কন্যা আয়েশা আক্তারের। গুরুতর ভাবে জখম হয়েছেন বেলাল এবং তাঁর অপর দুই কন্যা বীথি আক্তার এবং স্মৃতি আক্তার। ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুসারে, বীথি এবং স্মৃতিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বেলাল লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আগুনে পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে বিএনপি নেতার বাড়ি।
এই ঘটনার নিন্দা করেছে খালেদার দল। বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাছিবুর রহমান বলেন, “সন্ত্রাসীরা পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর আগে দরজাতেও তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরিকল্পিত ভাবে এই কাজটি করেছে সন্ত্রাসীরা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি জানাচ্ছি।” এই প্রসঙ্গে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশকর্তা মহম্মদ ওয়াহিদ পারভেজ জানিয়েছেন, আগুনে পুড়ে ঘুমন্ত এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। পরিকল্পিত ভাবে ওই ঘরে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কি না, সেটি পুলিশ খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছেন তিনি। দমকলের তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনাস্থলে গিয়ে সকলকে উদ্ধার করে আনা হলেও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদি। টানা ছ’দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর হার মেনেছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি উদ্যোগে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সিঙ্গাপুরে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যুসংবাদ প্রকাশ্যে আসে। এর পর বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয় তাণ্ডব। ‘সংগঠিত জনরোষে’ ছারখার হয়ে যায় বাংলাদেশের একাধিক সরকারি ভবন, শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের কার্যালয়। রেহাই পায়নি সংবাদমাধ্যমও। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আবেদন উড়িয়ে রাতভর হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। দেশের প্রথম সারির দুই সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ এবং ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর দফতরে ঢুকে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙা হয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংস্কৃতিকেন্দ্র ছায়ানট ভবন, উদীচীর কার্যালয়। এই পরিস্থিতিতে শনিবার হাদির শেষকৃত্য ঘিরে বাংলাদেশে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে অনেকে আশঙ্কা করছেন।