রানিগঞ্জকে মহকুমা করার পুরনো দাবিই ফের উস্কে দিল বিজেপি। বৃহস্পতিবার রানিগঞ্জে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে ওই দাবি জানান বিজেপি নেতৃত্ব। জেলার রাজনীতির সঙ্গে পরিচিতদের মতে, এই দাবি উস্কে দেওয়ার নেপথ্য কারণ, আসানসোল পুর-ভোট হতে পারে।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কুলটির বিজেপির বিধায়ক অজয় পোদ্দার, প্রাক্তন মেয়র তথা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি, রানিগঞ্জের বিজেপি নেতা মদন ত্রিবেদী প্রমুখ।
ঘটনা হল, ১৮৪৭ থেকে ১৯০৬, মহকুমা শহর ছিল রানিগঞ্জ। ১৮৭৬-এ তৈরি হয় রানিগঞ্জ পুরসভা। কিন্তু ২০১৬-য় নতুন করে আসানসোল পুরনিগম তৈরির সময়ে রানিগঞ্জের সংযুক্তি ঘটে। গোড়া থেকেই এই সংযুক্তির বিরোধিতা করেছেন তাঁরা, জানান সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী। নাগরিক, বণিক সংগঠনগুলিও এর বিরোধিতা করেছিল। এ দিন জিতেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বর এবং অণ্ডাল ব্লক নিয়ে রানিগঞ্জ মহকুমা তৈরি করা উচিত। এই চারটি ব্লক যে তিনটি বিধানসভার অন্তর্গত, সেগুলিতে তৃণমূল বিধায়কেরা রয়েছেন। তাঁদের এ বিষয়ে এক মত হওয়া উচিত। কারণ, এই চারটি ব্লক উন্নয়নের নিরিখে অনেকটাই পিছিয়ে।’’ বিষয়টি নিয়ে জেলায় বিজেপির তিন বিধায়ক সরব হবেন বলেও জানান অজয়বাবু।
ঘটনাচক্রে, যে চারটি ব্লকের কথা বিজেপি বলছে, তার মধ্যে রানিগঞ্জে ১১টি এবং জামুড়িয়ায় ১৩টি ওয়ার্ড রয়েছে। ওই ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে গত পুরভোটে তৃণমূল ১৭টিতে জেতে। বাকিগুলিতে জিতেছিল সিপিএম। এই চারটি ব্লকে পঞ্চায়েত রয়েছে ৩০টি পঞ্চায়েত রয়েছে। একটি বাদে সব ক’টিতেই ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। কিন্তু, গত বিধানসভা ভোটে ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে বেশির ভাগ পুর-এলাকায় অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। জিতেন্দ্রবাবুদের এই দাবির কথা প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা, পুর-ভোটের দিকে তাকিয়েই বিজেপি এই বিষয়টিকে উস্কে দিচ্ছে। যদিও জিতেন্দ্রবাবুদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিষয়টি তা নয়। আমাদের লক্ষ্য, রানিগঞ্জবাসীর সার্বিক উন্নয়ন।’’
বিজেপির এই মন্তব্যে যদিও আমল দিতে চায়নি তৃণমূল। পাণ্ডবেশ্বর ও জামুড়িয়ার তৃণমূল বিধায়ক যথাক্রমে, নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, হরেরাম সিংহদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিজেপি মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। রানিগঞ্জের বাসিন্দারা জানেন, রাজ্য সরকার তাঁদের উন্নয়নে কী-কী করেছে।’’
এ দিনের সাংবাদিক বৈঠক আরও নানা বিষয়েই রাজ্য ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও তাতে গুরুত্ব দেয়নি তৃণমূল।