Advertisement
১১ মে ২০২৪
Asansol

Asansol: ২০০ বছর আগেও বর্ধমান জেলার অন্য অংশের মানুষের আসানসোল সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না

আসানসোল অরণ্যভূমিকে বাসভূমি হিসেবে স্থাপন করতে উদ্যোগী হন ওই দুই ব্যক্তি— নকড়ি রায় ও রামকৃষ্ণ রায়।

আসানসোল শহর।

আসানসোল শহর। —নিজস্ব চিত্র।

দূর্বাদল চট্টোপাধ্যায়
দূর্বাদল চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:৩৪
Share: Save:

সুদূর অতীতে অধুনা আসানসোল শহরের মূল স্থানটিতে আসানসোল,ইসমাইল ও বুধা নামক পাশাপাশি তিনটি জনবসতিপূর্ণ জায়গা ছিল। সেখানে বাস করতেন তথাকথিত নিম্ন বর্ণ ও সম্প্রদায়-সহ বিভিন্ন আদিবাসী মানুষ। এর প্রমাণ স্বরূপ আসানসোলের প্রাচীন গ্রামদেবী ঘাঘবুড়ির কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া আসানসোল ও বুধা গ্রামের গাজন উৎসব এবং ইসমাইল গ্রামের ধর্মরাজ পুজো অনার্য সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করে। একদা পঞ্চকোট রাজ্যের শেরগড় পরগনার অন্তর্গত উল্লিখিত ওই জায়গাগুলির মধ্যে আসানসোল সর্ব প্রথম গ্রাম হিসেবে গড়ে ওঠে। জনশ্রুতি, ১৭৪১ খ্রিস্টাব্দে নকড়ি রায় ও রামকৃষ্ণ রায় নামে দুই ব্যক্তি লাঠিয়াল সৈন্যদের সঙ্গে নিয়ে আসানসোল অরণ্যভূমিতে বর্গী আক্রমণ প্রতিহত করেন।

সেই বীরত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ১৭৪২ সালে পঞ্চকোট রাজা গরুড় নারায়ণ সিংহদেও মাত্র ৩৭৬ টাকা ৪ আনা ২ পাই জমায় নকড়ি রায় ও রামকৃষ্ণ রায়কে আসানসোল অরণ্য অঞ্চলের বিস্তীর্ণ জমি জায়গীর হিসাবে দান করেন। অতঃপর দান পাওয়া আসানসোল অরণ্যভূমিকে বাসভূমি হিসেবে স্থাপন করতে উদ্যোগী হন ওই দুই ব্যক্তি। গড়ে উঠল আসানসোল গ্রাম। উল্লেখ্য, জায়গীর হিসেবে প্রাপ্ত জমির সেই পুরনো দলিল আজও সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু বর্গী আক্রমণ প্রতিহত করার জন্যই তাঁরা আসানসোল মৌজায় জায়গীর লাভ করেছিলেন সে বিষয়ে নির্ভরযোগ্য কোন লিখিত তথ্যপ্রমাণ নেই।

অতীতে কৃষিই ছিল আসানসোলবাসীর প্রধান জীবিকা। জলের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে আসানসোল গ্রামের মৌজায় তিনটি বড় জলাশয় খনন করা হয়। রামসায়র, সীতাসায়র ও পদ্মবাঁধ— এই তিনটি বড় পুষ্করিণীর অস্তিত্ব আসানসোল শহরে এখনও বিদ্যমান। রামসায়র আসানসোল গ্রামের একেবারেই সন্নিকটে অবস্থিত। সেখান থেকে সামান্য দূরে পদ্মবাঁধ ও সীতাসায়র। এগুলি খনন করা হয়েছিল মূলত কৃষির সুবিধার্থে। পদ্মবাঁধের সংলগ্ন আসানসোল শহরের সব চাইতে ঘন জবসতিপূর্ণ এলাকা ‘হটন রোড’ যার অধুনা নাম মেঘনাথ সাহা রোড।

দু’শো বছর আগেও বর্ধমান জেলার বর্ধমান-সহ কালনা, কাটোয়ায় বসবাসকারী মানুষদের আসানসোল নামক জায়গাটি সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না। সেই সময় আসানসোল থেকে দূরবর্তী জায়গায় গন্তব্যের জন্য দামোদরের জলপথ ভিন্ন আর অন্য কোনও পথের কথা শোনা যায় না। ১৮৩১ সালে ভারতের গভর্নর জেনালের লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক কলকাতার ‘ফোর্ট উইলিয়াম’ দুর্গ থেকে দিল্লি অবধি উন্নত সড়কপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ১৮৩৬ সালে এটি বর্ধমান ছাড়িয়ে আরও পশ্চিম দিক অবধি সম্প্রসারিত হওয়ার কথা জানা যায়। সম্ভবত ওই সময়ে আসানসোলে উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে। ওই সড়কটি গ্র্যান্ড ট্যাঙ্ক রোড বা জিটি রোড নামে পরিচিত।

১৮৬৩ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে রানিগঞ্জ থেকে আসানসোল অবধি সম্প্রসারিত হয় এবং আসানসোল মৌজার উপর একটি রেল কর্মচারীদের আবাসন কলোনি গড়ে ওঠে। তৎকালে ‘ইউরোপিয়ান কলোনি’ নামে পরিচিত এই জায়গায় বসবাসকারীদের মধ্যে শতকরা ৮৫ ভাগই ছিলেন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান। আসানসোলে নগরায়নের গোড়াপত্তন ঘটে এই রেল কলোনিকে কেন্দ্র করেই। ১৮৮৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের আঞ্চলিক কর্মকাণ্ডের ঘাঁটি রানিগঞ্জ থেকে আসানসোলে স্থানান্তরিত হয়। যার ফলস্বরূপ আসানসোলের নগরায়নের আরও প্রসার ঘটে। ১৯০৬ সালে আসানসোল মহকুমা শহর হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Asansol Histroy Municipal Elections
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE