Advertisement
E-Paper

মৃতকে জীবিত দাবি করে ডাক্তারকে মার

চিকিৎসকেরা ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু, মৃত বধূ বেঁচে আছেন, পরিবারের এই দাবিকে ঘিরে ধুন্ধুমার বাধল কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে। ওই দাবিকে ঘিরে শনিবার রাতে গাফিলতির অভিযোগ তুলে এক চিকিৎসককে মারধর, হাসপাতালে ভাঙচুরেরও চেষ্টা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৪৯
কাটোয়া হাসপাতালে রোগীর পরিজনেদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

কাটোয়া হাসপাতালে রোগীর পরিজনেদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

চিকিৎসকেরা ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু, মৃত বধূ বেঁচে আছেন, পরিবারের এই দাবিকে ঘিরে ধুন্ধুমার বাধল কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে।

ওই দাবিকে ঘিরে শনিবার রাতে গাফিলতির অভিযোগ তুলে এক চিকিৎসককে মারধর, হাসপাতালে ভাঙচুরেরও চেষ্টা হয়। পুলিশ ডাকেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি সামলাতে ইসিজি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, রোগিণীর মৃত্যু হয়েছে। তবে হাসপাতাল বা পুলিশের কাছে গাফিলতির লিখিত কোনও অভিযোগ করেনি ওই পরিবার। আক্রান্ত চিকিৎসক অবশ্য রবিবার সিসিটিভি ফুটেজ-সহ কাটোয়া থানায় রোগীর পরিবারের বিরুদ্ধে নিগ্রহের অভিযোগ করেছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার দুপুর তিনটে নাগাদ কাটোয়া শহরের মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা, পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা নাজমুন নাহারকে (২৫) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁকে প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করিয়ে নেন চিকিৎসকেরা। সেই সময় ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের দাবি, চিকিৎসা শুরু করা হলেও সাড়ে চারটে নাগাদ ওই মহিলা মারা যান। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ডেথ সার্টিফিকেট লিখে ওই মহিলার দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ দেহ বাড়ি নিয়ে চলে যান পরিবারের লোকজন। অভিযোগ, ঘণ্টাখানেক পরে ওই প্রসূতির হাত-পা নড়েছে দাবি করে ফের তাঁকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তখন সেখানে ছিলেন এক অস্থি চিকিৎসক। তিনি রোগীকে দেখে আরও এক বার মৃত বলে জানান। কিন্তু পরিবারের লোকজন ওই স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন।

অস্থি বিশেষজ্ঞের অভিযোগ, ‘‘স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের খোঁজ না পেয়ে রোগীর পরিবারের লোকজন আমাকে চড়, ঘুঁষি মারতে শুরু করে। পকেট থেকে টাকার ব্যাগও তুলে নেওয়া হয়।’’ পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে পরিবারের চাপে মৃত রোগিণীকে ফের ভর্তি করিয়ে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হয়। হাসপাতালের আর এক চিকিৎসক এসে ফের তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, রোগীর পরিবার কিছুতেই মানতে না চাওয়ায় শেষে আর এক চিকিৎসককে ডেকে ইসিজি করে জানানো হয়, রোগিণী সত্যিই বেঁচে নেই।

মৃতার স্বামী চৌধুরী জালালউদ্দিন শেখের অভিযোগ, ‘‘আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার চার ঘণ্টা আগেই চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়ে দিলেন। তখনও ওর প্রাণ ছিল।’’ ঘটনার পরই হাসপাতালের সুপার রতন শাসমল বিষয়টি মৌখিক ভাবে এসডিপিও-কে জানান। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ আসে। পুলিশের সঙ্গে মৃতার আত্মীয়দের বচসা বাধে। চিকিৎসকদের দাবি, রোগী মারা গেলে বুকে অনেক সময় কফ জমে যায়। মৃত্যুর পরে সেই কফ নাক দিয়ে বেরিয়ে আসে বা হাওয়া বেরোয়। তাতে আত্মীয়দের ধারণা হতে পারে যে রোগী বেঁচে আছেন। আবার অনেক সময় পেশি, শিরা সঙ্কোচনের ফলেও হাত-পা নড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে হয়তো এমনটাই হয়েছে। তবে প্রথম বার ঘোষণার সময়েই ওই প্রসূতি মারা গিয়েছিলেন বলেও চিকিৎসকদের দাবি।

সুপারেরও দাবি, রোগীর পরিবার ঘটনাটি বুঝতে না চেয়ে গোলমাল শুরু করেন। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে কাটোয়া থানাও।

Hospital Patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy