কখন তাঁরা পালা আসবে জানা নেই। তাই আলুর বস্তার উপরেই বিশ্রামে চাষি।
সবুজ, লাল, হলুদ বস্তা হরেক রঙের। কোথাও গাছতলা, কোথাও খামার, আবার কোথাও খোলা মাঠেই পড়ে রয়েছে সে সব। গরম বাড়তে থাকায় কিছু কিছ বস্তা দিয়ে রসও গড়াতে শুরু করেছে।
বস্তাবন্দি এই সব আলুর না আছে কোনও ক্রেতা, না রয়েছে রাখার জন্য হিমঘরে জায়গা। আলু নিয়ে চাষিদের সমস্যা তাই মিটছে না। রবিবারও জেলার বেশ কয়েকটি হিমঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান চাষিরা। পরিস্থিতি এমনই যে, জেলায় বন্ধ থাকা দু’টি হিমঘর খুলে আলু রাখা যায় কি না, সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে প্রশাসন।
বাজারে দাম পড়ে গিয়েছে। আলু রাখার জন্য গত দু’সপ্তাহ ধরে লম্বা লাইন পড়ছে হিমঘরগুলির সামনে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করানো, আলু নিতে না চাওয়ার মতো নানা অভিযোগে ক্ষোভ-বিক্ষোভও চলছে। আলুর দাম না পেয়ে ইতিমধ্যে ভাতার ও কালনায় দু’জন চাষির আত্মঘাতী হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার থেকে হিমঘরগুলি দরজা বন্ধ করতে শুরু করায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এলাকার হিমঘরে জায়গা না পেয়ে গাড়িতে আলুর বস্তা বোঝাই করে অনেকেই ছুটছেন দূরের হিমঘরে। রবিবারও কালনা, মেমারি-সহ জেলার কিছু কিছু এলাকার হিমঘর কর্তৃপক্ষ চাষিদের আলু নেয়। সেই সব হিমঘরগুলিতেও ছিল লম্বা লাইন। কালনা মহকুমায় বর্তমানে রয়েছে ২২টি হিমঘর। সেগুলির মালিকদের পক্ষে সুশীল মিশ্র এ দিন বলেন, “বেশির ভাগ হিমঘরে আর কোনও জায়গা খালি নেই। আজ কিছু হিমঘর চাষিদের কিছু আলু নিলেও সোমবার থেকে তারাও আর সেই জায়গায় থাকবে না।” তাঁর দাবি, প্রথমে ৯৮ শতাংশ জায়গায় চাষিদের আলু নেওয়া হয়। পরে যে ২ শতাংশ খালি ছিল, তা-ও ভর্তি করে নেওয়া হয়।
হিমঘরের সামনে বিক্ষোভ চাষিদের।
জেলার নানা হিমঘর ঘুরে জানা গিয়েছে, ক্ষমতার বাইরে গিয়েও এ বার তারা আলু রাখতে বাধ্য হয়েছে। একটি হিমঘরের কর্মীরা জানান, নোটিস দিয়ে বন্ধ করলেও ছাড় মিলছে না। গাড়ি বোঝাই করে আলু এনে লাইন দিয়ে চাষিরা দাবি করছেন, তা রাখতে হবে। হিমঘর সূত্রের দাবি, আলু রাখার জন্য প্রশাসনেরও চাপ রয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার অতিরিক্ত আলু রাখাও বিপজ্জনক।
শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন জায়গায় মহকুমাশাসক, বিডিও-রা বিভিন্ন হিমঘর ঘুরে দেখেন, সেখানে কী ধরনের পরিস্থিতি রয়েছে। জেলার এক আধিকারিকের কথায়, “বেশির ভাগ হিমঘরের ধারণক্ষমতা যা তাতে আর আলু রাখা যাবে না। অথচ, প্রচুর আলু মাঠে পড়ে রয়েছে। এ বার পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে হিমঘরগুলিকে আরও পাঁচ শতাংশ আলু রাখার কথা বলা হয়েছে। সাধারণত ধারণ ক্ষমতার বেশি আলু রাখলে আইনি পদক্ষেপ করা হয়। এ বার চাষিদের স্বার্থে তা করা হবে না।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আলু যাতে মাঠে পড়ে নষ্ট না হয়, তার জন্য অন্য উদ্যোগও শুরু হয়েছে। কালনা এবং মেমারি এলাকায় বন্ধ থাকা দু’টি হিমঘর চালু করে কয়েক লক্ষ বস্তা আলু সেখানে রাখার চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে কালনা ২ ব্লকের হিমঘরটিতে ঋণের টাকা না মেটানোর অভিযোগে তালা ঝুলিয়েছে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে হিমঘরটি খোলার চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। মেমারির হিমঘরটিতে প্রচুর আলু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। সেটি খুলে গেলেও সমস্যা অনেকটা মিটবে বলে মনে করছেন আধিকারিকেরা।
আলুচাষিদের সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন জেলার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রশাসনিক আধিকারিকেরাও নেমেছেন সমস্যা মেটাতে। যেখানে জায়গা রয়েছে সেখানকার হিমঘরে আলু পাঠানো হচ্ছে। তবে যে সমস্ত এলাকার হিমঘরগুলিতে আর জায়গা অবশিষ্ট নেই, সেখানে আলু যাতে পড়ে নষ্ট না হয়, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।”
রবিবার কালনায় ছবি দু’টি তুলেছেন মধুমিতা মজুমদার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy