বর্ধমান স্টেশনের কাছে জি়টি রোডে জমে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র
মশা-নিধন নিয়ে বর্ধমান পুরসভার ভূমিকায় ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য দফতর। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনকে পাঠানো কয়েকটি চিঠিতে সে কথায় জানিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায়। তাতে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মী ও আধিকারিকদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বারবার বলা সত্ত্বেও নভেম্বরের শেষ সপ্তাহেও শহরের বিভিন্ন জায়গায় জল জমে রয়েছে। রাস্তা, পুকুরপাড়ে আবর্জনা পড়ে থাকছে। তার জেরে মশাবাহিত রোগ বাড়ছে। অভিযোগ করা হয়েছে, ডেঙ্গি-সহ নানা রোগ প্রতিরোধ নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের বৈঠকে বর্ধমান পুরসভার কোনও কর্তা হাজির থাকেন না। ‘টেকনিক্যাল’ সাহায্য করতে চাইলেও পুরসভা নিশ্চুপ থাকে। পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেন, মশাবাহিত রোগ রোধে তাঁরা পদক্ষেপ করেছেন।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুনেত্রা মজুমদারের দাবি, ‘‘মশা-নিধনে পুরসভাকে আরও অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। তা না হলে মশাবাহিত রোগে ভুগতে হবে বাসিন্দাদের। পুরসভার কর্তারা নজরদারি বাড়াতে না পারলে পরিস্থিতির বিশেষ বদল হবে না।’’ ডেঙ্গির উপসর্গ মিলছে কি না দেখার জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে তৃতীয় পর্যায়ে বাড়ি-বাড়ি ঘোরার কর্মসূচি পালন হয় বিভিন্ন পুরসভায়। স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্ধমান শহরের ১২, ১৪ নম্বর-সহ কয়েকটি ওয়ার্ডে ওই কর্মসূচিই হয়নি। ওই রিপোর্ট নিয়ে আজ, মঙ্গলবার দুপুরে বৈঠক ডেকেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর বর্ধমান শহরে ৩৮ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল। এ বছর সেখানে ৮১ জনের রক্তে ডেঙ্গির সন্ধান পেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। শুধু ডেঙ্গি নয়, পূর্ব বর্ধমানে আর এক মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়াতেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর নভেম্বরের শেষে ১৯৭ জনের রক্তে ম্যালেরিয়া ধরা পড়েছিল, এ বছর সেখানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০১।
সুনেত্রাদেবী বলেন, ‘‘জমা জল ও আবর্জনার জন্যই মশার বৃদ্ধি। সেখান থেকে রোগের উৎপত্তি। সে জন্য পুরসভার সক্রিয় ভূমিকা খুব প্রয়োজন।’’ স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, এ বছর জেলায় দু’জন পতঙ্গবিদ পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। তাঁরা শহর ঘুরে এখনও এডিস মশার লার্ভা পাচ্ছেন। স্বাস্থ্য দফতর জানায়, বাড়ি-বাড়ি ঘুরে এডিস মশার লার্ভা না মিললেও বহুতল, রাস্তার পাশে বিভিন্ন দোকানের জমা জলে লার্ভা মিলছে। সুনেত্রাদেবীর কথায়, ‘‘বাড়ি-বাড়ি ঘোরার কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শীত পড়ছে মানেই ডেঙ্গি উধাও হয়ে যাবে, এই ভাবনা ঠিক নয়। সামনে বছর ভয়াবহতার হাত থেকে রক্ষা পেতে এখন থেকেই পুরসভাকে সতর্ক থাকতে হবে।’’ পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত অবশ্য বলেন, ‘‘যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার ব্যাপারে আমরা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। তেমনই নিকাশির হাল ফেরানো হয়েছে। আশা করছি, ডেঙ্গি রোধে আমরা সফল হব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy