Advertisement
০৮ অক্টোবর ২০২৪
Bardhaman Theft

সত্যিই কি ছিনতাই  কোটি টাকা, সংশয়

তদন্তকারীদের দাবি, সুভাষ ও মৃত্যুঞ্জয়কে হেফাজতে নিয়ে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থেকে গ্রেফতার করা হয় মধুসূদন বাগকে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০২
Share: Save:

দিল্লির ব্যবসায়ীর ১ কোটি ১ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগের ঘটনায় বুধবার রাতে পুলিশ আরও এক জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃত গৌতম চট্টোপাধ্যায় সালানপুরের রূপনারায়ণপুরের মহাবীর কলোনির বাসিন্দা। এই মামলায় এখনও পর্যন্ত মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

দিল্লির লাজপতনগরের বাসিন্দা, রেলের ঠিকাদার মুকেশ চাওলা ৫ সেপ্টেম্বর রাতে দুর্গাপুর থানায় লিখিত অভিযোগে দাবি করেন, ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে সে দিন বিকেলে আসানসোল থেকে ব্যবসার কাজে ১ কোটি ১ লক্ষ টাকা নিয়ে কলকাতা যাচ্ছিলেন। দুর্গাপুরে পিয়ালা কালীবাড়ির কাছে কয়েক জন ‘ক্রাইম ব্রাঞ্চ’-এর লোক পরিচয় দিয়ে তাঁর গাড়ি আটকে টাকার বাক্স নিয়ে চম্পট দেয়। তদন্তে নেমে পুলিশ গ্রেফতার করে গাড়িতে মুকেশে সঙ্গী মনোজ সিংহ, গাড়ির চালক সুরজকুমার রাম, দুর্গাপুরের আশিস মার্কেটের বাসিন্দা সুভাষ শর্মা, দুর্গাপুর থানায় কর্মরত এএসআই অসীম চক্রবর্তী, সিআইডির বম্ব স্কোয়াডের এএসআই চন্দন চৌধুরী এবং পুলিশের চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া মৃত্যুঞ্জয় সরকারকে।

তদন্তকারীদের দাবি, সুভাষ ও মৃত্যুঞ্জয়কে হেফাজতে নিয়ে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক থেকে গ্রেফতার করা হয় মধুসূদন বাগকে। তিনি এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয় গৌতমকে। মধুসূদনের মতো তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও টাকার লেনদেন হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। বৃহস্পতিবার গৌতমকে আদালতে তোলা হলে ৫ দিন পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়। এ দিন জেল হেফাজত শেষে আদালতে তোলা হলে মনোজ ও চন্দনকে পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠায় আদালত। হেফাজতে থাকা সবাইকে জেরা করে দ্রুত তদন্তের জাল গোটানোর পরিকল্পনা করছে পুলিশ।

তদন্তকারীদের একটি সূত্রের দাবি, আদৌ মুকেশের গাড়িতে রাখা কাঠের বাক্সে টাকা ছিল কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। টাকা থাকলেও, তা হয়তো সামান্য ছিল। বাক্স অন্য কোনও সামগ্রীতে ভর্তি ছিল। পুলিশ সূত্রের দাবি, ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ফেরতের লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলার চক্র এটি। রেলের ঠিকাদার মুকেশের সঙ্গে মাসখানেক আগে যোগাযোগ হয় উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরের মনোজের। মনোজ অগস্টে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে মুকেশকে প্রথমে রাঁচীতে ও পরে কলকাতায় কয়েক জনের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন। বিশ্বাস জন্মায় মুকেশের। মুকেশকে ৩০ শতাংশের বেশি কমিশন দিয়ে ৫০ লক্ষের পরিবর্তে ৬৫ লক্ষ টাকা ফেরতের লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলার ছক কষা হয়। রেলের ঠিকাদার মুকেশ লোভে পড়ে রাজি হন। তিনি মধুসূদনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৫০ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন। এর পরেই প্রতারকরা লুটের নাটক করার পরিকল্পনা করে। কলকাতায় এক জনকে ১ কোটি ১ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে জানানো হয় মুকেশকে। সেই মতো প্রতারকেরা মুকেশের সঙ্গে দেখা করে টাকার বাক্স তৈরি করে তাঁর হাতে তুলে দেন। পিয়ালা কালীবাড়ির কাছে বাক্সটি নিয়ে পালিয়ে যায় প্রতারকেরা, এমনই অনুমান করছেন তদন্তকারীরা।

তদন্তকারীদের দাবি, এই সব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা এত নগদ টাকা সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কারণ কী, সেই টাকার উৎস কী— এমন নানা প্রশ্ন এড়াতে পুলিশের কাছে যেতে চান না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই প্রতারকেরা কাজ হাসিল করে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। মুকেশ থানায় অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে পুরো ‘অপারেশনে’ পুলিশের যে গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছিল, সেই গাড়ির নম্বরও পুলিশকে জানিয়ে দেন। তদন্ত করে পুলিশ দেখে, সেটি অসীম নিয়ে গিয়েছিলেন। এর পরেই পুলিশ পর পর গ্রেফতার করা শুরু করে অভিযুক্তদের।

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE