করোনা-মোকাবিলায় একসঙ্গে বিশাল এলাকা দ্রুত জীবাণুমুক্ত করা যাবে বিশেষ যন্ত্রে। এমনই যন্ত্র উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান দুর্গাপুরের ‘সেন্ট্রাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (সিএমইআরআই)। আসানসোল পুরসভা ইতিমধ্যেই চারটি যন্ত্রের বরাতও দিয়েছে।
করোনা-প্রতিরোধে সাধারণত দমকলের মাধ্যমে জীবাণুনাশক ‘স্প্রে’ করার কাজ চললেও তাতে অনেক সময় ও কর্মীর প্রয়োজন হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সিএমইআরআই যন্ত্রটি তৈরি করার কথা জানিয়েছে। যন্ত্রটির পোশাকি নাম, ‘ট্রাক্টর মাউন্টেড ডিসইনফেক্ট্যান্ট ইউনিট’। এই ব্যবস্থায় একটি ট্রাক্টরের উপরে দু’থেকে পাঁচ হাজার লিটার তরল জীবাণুনাশক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাঙ্ক রাখা হচ্ছে। যন্ত্রটি চালু করে দিয়ে এক জন দরকার মতো ট্রাক্টরটি নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে যাবেন। যন্ত্রের সাহায্যে এর পরে ট্যাঙ্কের দু’পাশে ছ’টি করে ও পিছন দিকে তিনটি-সহ মোট ১৫টি ছিদ্র দিয়ে তীব্র বেগে জীবাণুনাশক ‘স্প্রে’ হতে থাকবে। দু’দিকে ১৬ ফুট পর্যন্ত দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে তরল। মিনিটে ৩০ লিটার তরল ছড়ানো যাবে এই যন্ত্র থেকে। প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর হরিশ হিরানি বলেন, ‘‘যন্ত্রটি ব্যবহার করে একবারে ৮০-১০০ কিলোমিটার এলাকা জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব হবে। যন্ত্রের সাহায্যে শহরের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি, অফিস, শপিং মল, আবাসন, স্টেডিয়াম ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করা যাবে।’’
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, এক-একটি যন্ত্রের দাম প্রায় ৮০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে আসানসোল পুরসভা এমন চারটি যন্ত্রের বরাত দিয়েছে। একটি যন্ত্র পাঠানোও হয়েছে আসানসোলে। রবিবার দ্বিতীয় যন্ত্রটি পাঠানো হয়। তবে আসানসোলে নিয়ে যাওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানের তরফে দুর্গাপুর পুরসভা, শপিং মল-সহ বেশ কয়েকটি জায়গা জীবাণুমুক্ত করা হয়।
ডিরেক্টর জানান, ‘স্প্রে’ করার জন্য জীবাণুনাশক হিসাবে জলের সঙ্গে ছ’শতাংশ হারে ‘সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট’ তরল মেশানো হচ্ছে। পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠানের প্রধান গেটে এই যন্ত্রের সাহায্যে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ঢুকতে গেলে কয়েক সেকেন্ড ধরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে চতুর্দিক থেকে এই যন্ত্রের মাধ্যমে ‘স্প্রে’ করা হচ্ছে। হরিশবাবুর দাবি, এর ফলে প্রায় ১৮-২০ ঘণ্টা জীবাণুমুক্ত থাকা সম্ভব হবে।
যন্ত্রটির প্রয়োগকে স্বাগত জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট নানা পক্ষ। দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) সিটু নেতা সৌরভ দত্ত বলেন, ‘‘করোনা প্রতিরোধে ডিএসপি-র কর্মী সংগঠন ও কর্তৃপক্ষকে নিয়ে গঠিত ‘এসেন্সিয়াল সার্ভিসেস কমিটি’র কাছে এমন যন্ত্র চালু করার দাবি জানানো হবে।’’ আসানসোলের পাশাপাশি, এই যন্ত্র কেনার তোড়জোড় করছে দুর্গাপুর পুরসভাও। দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র দিলীপ অগস্তি বলেন, ‘‘আমাদের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকেরা যন্ত্রটি ও তার প্রয়োগ দেখেছেন। যন্ত্রটি কেনার বিষয়ে আমরাও চিন্তাভাবনা করছি।’’