Advertisement
E-Paper

করোনা-ভীতিতে দূরত্ব পড়শিদের, পাশে মকবুলেরা

মন্তেশ্বরের মামুদপুরে ওই যুবকদের সহযোগিতায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলে জানান বৃদ্ধের বাড়ির লোকজন।

সুদিন মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২০ ০০:০২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পুজোর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন দীর্ঘদিন কিডনির অসুখে ভোগা বৃদ্ধ। সপ্তমীর সন্ধ্যায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু করোনা-আক্রান্ত কি না সন্দেহে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাশে দাঁড়াননি পড়শি থেকে আত্মীয়েরা। এমনকি, করোনা-রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসার পরেও সৎকারে সাহায্যে এগিয়ে আসেননি তাঁরা, অভিযোগ মৃত সুশান্ত ঘোষালের (৬৫) পরিবারের। শেষে পাশে দাঁড়ান গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েকজন যুবক। মন্তেশ্বরের মামুদপুরে ওই যুবকদের সহযোগিতায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলে জানান বৃদ্ধের বাড়ির লোকজন।

প্রাক্তন এনভিএফ কর্মী সন্তোষবাবুর বাড়ি মামুদপুর গ্রামের মাঝেরপাড়ায়। পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে, স্বামী-স্ত্রী বাড়িতে থাকতেন। দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন সন্তোষবাবু। ২৩ অক্টোবর সকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সন্তোষবাবুর ছোট মেয়ে মনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, এলাকায় রটে যায় তাঁর বাবা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিবেশীদের সাহায্য না পেয়ে কোনও রকমে একটি টোটোয় তুলে তাঁর মা রেণুকাদেবী বাবাকে মন্তেশ্বর কাদম্বিনী ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে কিছু পরীক্ষা করে ও ওষুধ লিখে বাড়ি পাঠানো হয়। করোনা পরীক্ষার জন্য লালারসের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়।

মনিকা জানান, সে দিন সন্ধ্যায় তাঁর বাবা ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। শরীর অসাড় হয়ে যায়। তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিবেশীদের ডাকা হলেও তাঁরা সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। পরে থানা থেকে অ্যাম্বুল্যান্স এসে সন্তোষবাবুকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে, মৃত ঘোষণা করা হয়। করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের অপেক্ষায় দেহ সংরক্ষণের জন্য কালনা মহকুমা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

সন্তোষবাবুর পরিবার জানায়, ২৬ অক্টোবর তাঁর করোনা-রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসে। কিন্তু তার পরেও সৎকারের জন্য সাহায্যে আসেননি আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের কেউ, অভিযোগ তাঁদের। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এগারো জন যুবক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তাঁদেরই এক জন ফরিয়াদ মল্লিকের কথায়, ‘‘সন্তোষবাবুর পড়শিরা কেউ সাহায্য করছেন না শুনে আমাদের পাড়ার মহিবুল শেখ, মিলন মল্লিক, হাসান শেখদের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করি। মৃতের স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে পর দিন দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়।’’ তাঁরা জানান, ২৭ অক্টোবর কালনা হাসপাতাল থেকে মৃতের মেয়েদের উপস্থিতিতে দেহ কালনা শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহ করা হয়।

রেণুকাদেবী বলেন, ‘‘দুঃসময়ে প্রতিবেশীরা উপেক্ষা করলেও, ফরিয়াদ-মহিবুলেরা পাশে দাঁড়িয়েছে।’’ মেয়ে মনিকা বলেন, ‘‘অন্য অনেকের কাছে যে অসহযোগিতা পেয়েছি, তার পরে ফরিয়াদ ভাইয়েরা না থাকলে বাবার শেষকৃত্য করতে পারতাম না।’’ মন্তেশ্বরের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সত্যপ্রকাশ পাত্রেরও দাবি, দেহ হাসপাতাল থেকে মর্গে পাঠানোর সময়ে সহযোগিতার জন্য লোক পাওয়া যায়নি।

যদিও প্রতিবেশীদের দাবি, তাঁরা সব সময়েই পরিবারটির পাশে রয়েছেন। সন্তোষবাবু দীর্ঘদিন কর্মসূত্রে বাইরে থাকাকালীন রেণুকাদেবীর খোঁজখবর রেখেছেন। মৃত্যুর আগে কয়েকদিন ধরে সন্তোষবাবুর জ্বর-সহ নানা অসুস্থতার কারণে পড়শিদের একাংশের সন্দেহ হয়। প্রতিবেশী সুমন্ত রায়ের দাবি, ‘‘মৃত্যুর পরে থানা, হাসপাতালে ফোন করা থেকে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা কিন্তু প্রতিবেশীরাই করেছিলেন। সৎকারে পাড়ার দু’-এক জনের যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও যোগাযোগের সমস্যায় যেতে পারেননি।’’

স্থানীয় বাসিন্দা তথা মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী প্রতিমা সাহা বলেন, ‘‘করোনা-ভীতিতে পাশে না দাঁড়ানোর ঘটনা দুঃখজনক।’’

Coronavirus Covid-19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy