Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

ছায়া খুঁজতে লাইনের দূরত্ব ‘উধাও’

বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের আর্থিক অনুদান প্রাপকদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে।

(উপরে), বর্ধমানের ব্যাঙ্কে চিহ্নিত দাগে দাঁড়াননি কেউ। (নীচে), কালনায় লাইনে বজায় দূরত্ব। নিজস্ব চিত্র

(উপরে), বর্ধমানের ব্যাঙ্কে চিহ্নিত দাগে দাঁড়াননি কেউ। (নীচে), কালনায় লাইনে বজায় দূরত্ব। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২০ ০১:২৯
Share: Save:

মুখে বাঁধা ‘মাস্ক’ বা ওড়না। কিন্তু পারস্পরিক দূরত্ব ‘উধাও’ ব্যাঙ্কের লাইনের অনেক জায়গাতেই।

তিন দিন (রবিবার ধরলে চার দিন) বন্ধ থাকার পরে, সোমবার ব্যাঙ্ক খোলায় লাইন দিয়েছিলেন অনেক গ্রাহকই। চড়া রোদে দাঁড়াতে না পেরে ব্যাগ বা জুতো রেখে ছায়ার খোঁজেও গাছের তলায় জড়ো হন অনেকজন। তার উপর জেলা জুড়েই বেশ কিছু শাখায় ‘লিঙ্ক’-এর অভাবে গ্রাহকদের হয়রান হতে হয় বলেও অভিযোগ।

বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের আর্থিক অনুদান প্রাপকদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। জনধন প্রকল্পে জেলায় ছড়িয়ে থাকা প্রায় আট লক্ষ অ্যাকাউন্টেও পাঁচশো টাকা করে ঢুকেছে। ভিড় এড়াতে কেন্দ্র সরকার নির্দিষ্ট নিয়ম জারি করে প্রাপকদের টাকা তোলার নির্দেশ দিয়েছেন।

পূর্ব বর্ধমানের ‘লিড’ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার রঞ্জন গুহরও দাবি, “অ্যাকাউন্টের শেষ দু’টি নম্বরের ভিত্তিতে প্রাপকদের আলাদা আলাদা দিনে টাকা তোলার নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তা না হলে, ভিড় আরও বাড়ত।’’ তাঁর দাবি, শহর এলাকার হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাঙ্কের শাখায় ভিড় রয়েছে। তবে গ্রামের মানুষ ‘গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র’-এর উপরে নির্ভরশীল। সে জন্য গ্রামের দিকে ভিড় তুলনামূলক কম। পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৩২টি ব্যাঙ্কের ৪৮৮টি শাখা রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে ‘গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র’।

এ দিন বর্ধমানের আদালত চত্বরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মূল শাখার সামনে সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই লাইন পড়ে যায়। ব্যাঙ্কের সামনে কিছুটা জায়গা গোল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা থাকলেও তাতে দাঁড়াতে দেখা যায়নি প্রায় কাউকেই। লাইন পৌঁছেছিল পূর্ত দফতরের সামনে পর্যন্ত। আর একটি লাইন ছিল ব্যাঙ্কের দোতলায় যাওয়ার। সেখানেও কোনও বিধিই মানতে দেখা যায়নি। দু’টি লাইন যেখানে মিশছে সেখানে নিরাপত্তারক্ষীরা সাবান-জল দিয়ে হাত ধুতে বলছিলেন। হাত ধুতে গিয়েও লোকজন গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছিলেন, জানাচ্ছেন গ্রাহকদেরই একাংশ। ব্যাঙ্কের ওই শাখার ম্যানেজার সুদেব দত্ত অবশ্য এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। একই রকম ছবি দেখা যায় ওই ব্যাঙ্কেরই রাজবাটী শাখায়।

কাটোয়া, দাঁইহাটের ব্যাঙ্কেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বেড়েছে। ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খান সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। দু’-এক জন বয়স্ক মানুষ অসুস্থও হয়ে পড়েন বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। পানুহাট বাজার, কাছারি রোডে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে দেখা যায়, অনেক গ্রাহকেরা লাইনে জুতো, ব্যাগ রেখে পাশে ছায়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। পানুহাটের প্রবীণ বাসিন্দা দীনবন্ধু সরকার বলেন, “সকাল ৮টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। চার ঘণ্টা পরে, টাকা তুলে পেরেছি। অসুস্থ বোধ করছিলাম।’’

কালনা শাহু সরকার মোড়, স্টেডিয়াম চত্বর, নিভুজি মোড়, ধাত্রীগ্রাম-সহ বহু জায়গাতেও ভিড় সামলাতে সমস্যায় পড়েন সিভিক ভলেন্টিয়ারেরা। তবে সামাজিক দূরত্ব মোটামুটি বজায় ছিল। মনি প্রামাণিক নামে এক মহিলা বলেন, “ব্যাঙ্কে ঢুকতে দেড়-দু’ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। ছায়াও নেই। খুব কষ্ট হয়েছে।’’ ছায়ার খোঁজে লাইন ভাঙার ঘটনাও দেখা যায় কিছু জায়গায়।

পারস্পরিক দূরত্বের বিধি যে ঢিলে পড়েছে, মানছেন ‘লিড’ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। তাঁর দাবি, “সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের উপর মহলে থেকে রাজ্য স্তরে ব্যাঙ্ক কমিটি (এসএলবিসি)-কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক ব্যাঙ্কের দাবি, লাইনে ভিড় বাড়ার জন্য সিভিক ভলান্টিয়ার, নিজস্ব রক্ষী দিয়েও পারস্পরিক দুরত্বের বিধি বজায় রাখা যাচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Social Distancing Bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE