Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Couple Married in Hospital

উৎকণ্ঠার অবসান, হাসপাতালেই মধুরেণ সমাপয়েৎ!

পরিবার সূত্রে খবর, বিয়ের পাঁচ দিন আগে লিভারের রোগে আক্রান্ত হন সুচরিতা। তাঁকে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৪ ০৮:২৯
Share: Save:

এমন বিয়ে স্মরণকালে দেখেনি দুর্গাপুর। কনে আক্রান্ত হয়েছিলেন লিভারের অসুখে। মালাবদলের দিন এগিয়ে এলেও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা কখনই উজ্জ্বল হয়নি। উদ্বেগের অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত বিয়ে হল হাসপাতালেই। রীতি মেনে হল মন্ত্রপাঠ, সিঁদুরদান, শুভদৃষ্টি। শনিবার এমন ব্যতিক্রমী ছবির সাক্ষী রইলেন দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মীরা।

দুর্গাপুরের শ্যামপুরে বাড়ি কনে সুচরিতা পাত্রের। তাঁর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছর আড়াই আগে কর্মসূত্রে দুর্গাপুরে আসা দিল্লির সোনিপথের বাসিন্দা যুবক অমিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সিটি সেন্টারে আলাপ হয় তাঁর। আলাপ গড়ায় বন্ধুত্বে। ভালবাসা আর বন্ধুত্বের মাঝের সুক্ষ্ম বিভাজন রেখাটি কখন মুছে গিয়েছে তা টের পাননি তাঁরা। বন্ধুত্ব প্রণয়ে গড়াতেই দুই পরিবার বিয়েতে সম্মতি দেয়। ঠিক হয়, দু’জনের চার হাত এক হবে ২ মার্চ।

তার পরেই হঠাৎ ছন্দপতন। পরিবার সূত্রে খবর, বিয়ের পাঁচ দিন আগে লিভারের রোগে আক্রান্ত হন সুচরিতা। তাঁকে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, হেপাটাইটিস-এ আক্রান্ত হয়েছেন সুচরিতা। বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছেছে জন্ডিস। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়। শারীরিক পরিস্থিতির উন্নতি হলেও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার মতো অবস্থায় আসতে পারেননি সুচরিতা। তাঁর আরও চিকিৎসার প্রয়োজন।

এ দিকে, মেয়ে বাড়ি ফিরবে, এই আশায় বিয়ের যাবতীয় প্রস্তুতি সারা হয়ে গিয়েছিল কন্যাপক্ষের। কিন্তু হাসপাতালের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, এখনই ছাড়া পাওয়ার অবস্থায় নেই সুচরিতা। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা ঘিরে ধরে দুই পরিবারকে। অবশেষে হাজির হয় বিয়ের দিন। বিয়ে বাতিল সম্ভব নয় বুঝে দুই পরিবার সিদ্ধান্ত নেয়, হাসপাতালের সম্মতি নিয়ে সেখানেই সুচরিতা-অমিতের চার হাত এক হবে।

শনিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালেই বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। পুরোহিতকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছিল পাত্রপক্ষ। বর বেশে এসেছিলেন অমিত। কনের সাজে সাজানো হয়েছিল সুচরিতাকে। তার পরে মন্ত্রোচ্চারণ, মালাবদল, সিঁদুরদান, শুভদৃষ্টি-পর্ব মেটে।

নবদম্পতি বলেন, ‘‘হঠাৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলাম। সবকিছু সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে। বেশ চাপমুক্ত লাগছে এখন।’’ অমিত জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা খবর পান, সুচরিতা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সুচরিতার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘‘সুচরিতা কাঁদছিল। বলছিল, আমাদের বিয়েটা বোধহয় হবে না। আমি ওকে আশ্বস্ত করে বলি, যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন, বিয়ে নির্দিষ্ট দিনেই হবে। সেই মতোই সব হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তা না হলে এটা সম্ভব হত না।’’

হাসপাতালের তরফে অনুপ পুরকায়স্থ বলেন, ‘‘বিশেষ পরিস্থিতিতে হাসপাতালে বিয়ে করতে হল ওদের। নবদম্পতির দীর্ঘ সুখী দাম্পত্য জীবন কামনা করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE